• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সেপ্টেম্বরে সরব হচ্ছে রাজনীতির মাঠ 

মন্ত্রিসভায় রদবদল, আসছে নতুন মুখ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১, ২০২০, ০৩:৩৩ পিএম
মন্ত্রিসভায় রদবদল, আসছে নতুন মুখ

ঢাকা : বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় পাঁচ রাজনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে আগস্টে মাসের শুরু থেকে করোনার প্রকট কিছুটা কমে এসেছে। যেকারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে মাঠে নামছে। এই সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকাণ্ড সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ফলে সরকারের মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত বছর ৬ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। যাঁদের মধ্যে ২৭ জনই প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পান।

এই মন্ত্রিসভায় প্রথম পরিবর্তন হয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে চার মাসের মাথায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে। এরপর ১২ জুলাই ইমরান আহমেদকে প্রতিমন্ত্রী থেকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী এবং ফজিলাতুন নেসাকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে গণপূর্তের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। মৎস্য প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খানকে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেশি আলোচিত। এ ছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কোনো মন্ত্রণালয়েও পরিবর্তনের আভাস আছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের সময় অন্য দু-একটা মন্ত্রণালয়ে সংযোজন, বিয়োজন বা পরিবর্তন হতে পারে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে দলীয় প্রধান কিছু বলেননি। তবে এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি প্রয়োজন অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেবেন।

আ.লীগের শূন্য পদ পূরণ : প্রেসিডিয়ামের ফাঁকা পদ নিয়েই দলটির ভেতর-বাইরে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ১৯ জন।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে একটি পদ ফাঁকা রেখে সভাপতিমণ্ডলীর ১৮ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে নতুন মুখ হিসেবে আসেন শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।

সম্প্রতি মোহাম্মদ নাসিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে আরো দুটি পদ শূন্য হয়। আগামী মাসে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, সম্পাদকমণ্ডলীর তিনজন ও কেন্দ্রীয় তিন সদস্যের নাম চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক করতে পারিনি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বৈঠক হবে।’ এ বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করেন এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।

সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রস্তুত হয়ে আছে। শোকের মাস আগস্ট শেষ হলে সেপ্টেম্বর থেকে এ সংগঠনগুলোর কমিটি ঘোষণার কাজ শুরু করা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।

গত বছরের ৬ নভেম্বর সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ২৩ নভেম্বর যুবলীগ, ২৯ নভেম্বর মৎস্যজীবী লীগ এবং ৯ নভেম্বর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১১ ও ১২ নভেম্বর। এই সংগঠনগুলোর সম্মেলনের দিনই কাউন্সিল অধিবেশনের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। এখন নেত্রীর (শেখ হাসিনা) অনুমোদনের অপেক্ষা।

শুধু একটু দেখা হবে যে, কোনো অনুপ্রবেশকারী, দুষ্কৃতকারী, সুবিধাবাদী কেউ তালিকায় আছে কি না। তারা যাতে সংগঠনগুলোর কমিটিতে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়টি একটু যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সাধারণত শোকের মাস আগস্টে কমিটি দেয়া হয় না। আগস্ট শেষ হলে নেত্রী এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন।’

নৌকার ৫ আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত : নানা জল্পনা-কল্পনা ও প্রতীক্ষার পালা শেষে জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের আসন্ন উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীতার মনোয়ন চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভায় উক্ত ৫ আসনে ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে আসন্ন উপ-নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবীব হাসান, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, নওগাঁ-৬ আসনে নওগাঁর রানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল এবং পবনা-৪ আসনে ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে নৌকার প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। সংসদীয় বোর্ডের একটি সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

তবে ঢাকা-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হলেও কাকে মনোনীত করা হয়েছে, সোমবার (৩১ আগস্ট) পর্যন্ত সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত পাবনা-৪ আসনে দলীয় প্রার্থী নুরুজ্জামান বিশ্বাসের নাম চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হলেও অন্যদের ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। ধারনা করা হচ্ছে, অন্য আসনগুলোতেও তফসিল ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগের নির্ধারিত প্রার্থীদের ব্যাপারে আনুষ্ঠিক ঘোষণা আসার সম্ভাবনা বেশি।

সূত্রের তথ্য মতে, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গত রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মুহাম্মদ ফারুক খান।

দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এ প্রসঙ্গে জানান, ‘সংসদীয় বোর্ডের সভায় পাবনা-৪ আসনে মনোনয়ন ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আসনটিতে ইতিমধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য চারটি আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর ছেড়ে দিয়েছে সংসদীয় বোর্ড। এগুলোতে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে।’

মনোনয়ন বোর্ডের একটি সূত্র জানায়, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা ও অবস্থানকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

এর মাঝে সবচেয়ে আলোচিত ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ৫৬ জন। মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য সাহারা খাতুনের ঘনিষ্ঠ ও মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় নেতা হাবীব হাসান।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন নাসিম পুত্র তানভীর। এর আগে একই আসন থেকে ছয়বার নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিজয় লাভ করেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মো. নাসিম।

নওগাঁ-৬ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলমবিরোধী আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে পরিচিত- রানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল। তিনি জোট সরকারের সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

পাবনা-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাস। তিনবারের এই উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঈশ্বরদী অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।

সূত্রগুলো জানায়, ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবীবুর রহমান মোল্লার সন্তান মশিউর রহমান মোল্লা। আসনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও তাঁর নাম গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!