• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রী এমপিদের অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর সরকার


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০২:৪৫ পিএম
মন্ত্রী এমপিদের অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর সরকার

ঢাকা : মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে সরকার। সরকারি পদে থেকে যেকোনো ব্যক্তির স্বজনপ্রীতি রোধ করতে নতুন আইন প্রণয়ন হচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমল হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকার নানা আইন তৈরি করলেও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে বর্তমান সরকারই প্রথমবারের মতো এমন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পরামর্শ ও উদ্যোগেই আইনটি প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়।

সূত্রমতে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন সরকারের শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে নানা পদক্ষেপ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার সদস্য ও একাদশ সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে গোয়েন্দাদের সহায়তা নেবে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীকে সভাপতি করে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নিয়ে গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।

১১  সদস্যের এ কমিটির প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টাকে। এ কমিটি দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় রক্ষার কাজও করবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বা সরকারের প্রভাবশালী কেউ হলেও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ হলে ছাড় না দেওয়ার নীতিতে অটল থাকবে সরকার।

এছাড়া মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনপ্রীতি রুখতে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকারি পদে থেকে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য ও কর্মকর্তা যেন তার স্বজনকে কোনো ধরনের সুবিধা দিতে না পারেন, সেজন্য নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে আইন কমিশন। আইন লঙ্ঘনকারীকে সর্বোচ্চ সাত বছর সশ্রম ও সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড দেওয়ার কথা খসড়ায় উল্লেখ আছে। ‘স্বার্থ সংঘাত প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১৯’ শিরোনামের এ খসড়া কমিশন ইতোমধ্যেই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে সূত্র জানায়।

আওয়ামী লীগের চতুর্থ সরকারের প্রথম কার্যদিবসেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতিকে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে এনে সুশাসন নিশ্চিত করাই তার এবারের সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সরকারের পথচলার শুরুতে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। দুদকের অনুসন্ধানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের ভেতরের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্যও উঠে আসছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেকের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির সন্ধান চালাচ্ছে দুদক। সরকার ও দলকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে কঠোর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসবের অংশ হিসেবে সংসদ সদস্যদের পিএস ও এপিএস নিয়োগে লাগামও টেনে ধরা হচ্ছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস, এপিএস) নিয়োগের বিষয়েও কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বিতর্কিত, দুর্নীতিতে কোনোভাবে অভিযুক্ত ও রাজাকার পরিবারের সদস্যদের কোনো সংসদ সদস্যকে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে না রাখতে দল থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নানা বিতর্কের জন্ম হয়েছে যাদের নিয়ে, তাদেরও এবার এ পদে না রাখতে দল থেকে নির্দেশ পাঠানো হবে।

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পিএস ও এপিএস নিয়োগে সরকার নতুন নিয়ম কার্যকর করার পর দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও সরকারকে যথাসম্ভব বিতর্কমুক্ত রাখতে দলের টিকেটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিষয়ে নীতিগত এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তথ্যমতে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস) বা সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। এতে সরকারের পাশাপাশি কখনো কখনো দলকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। মন্ত্রিসভার সদস্যদের পিএস ও এপিএসের সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার খবরও বিভিন্ন সময়ে সংবাদ শিরোনাম হয়।

বিতর্ক এড়াতে এর আগে কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে নিজের সন্তানকেও পিএস ও এপিএস হিসেবে নিয়োগ দিতে দেখা যায়। একইভাবে নবম ও দশম সংসদের কয়েক সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারীর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জের ধরে আওয়ামী লীগকে সমালোচনার শিকার হতে হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নতুন সরকারের যাত্রার প্রায় শুরুতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর পিএস ও এপিএস নিয়োগে আগের নিয়ম বাতিল করে সরকার।

একই সঙ্গে সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগেও দল থেকে সতর্ক ও কঠোর বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্য পিএস ও এপিএস নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংসদ সদস্যরা পিএস ও এপিএস নিয়োগ দেন নিজের পছন্দে ও নিজ উদ্যোগে। ফলে সংসদ সদস্যদের পিএস ও এপিএস নিয়োগে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটানো যায়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দলের যে কারো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর থাকার বার্তা দেওয়া হয়। একাধিক বৈঠকে আলোচনা হয় সংসদ সদস্যদের পিএস ও এপিএস নিয়োগের বিষয়টিও। বিতর্কিতদের বদলে সৎ, যোগ্য ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কাউকে সংসদ সদস্যরা ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে রাখবেন, দলের পক্ষে এমন নির্দেশ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের জের ধরে সংসদ সদস্যদের তা অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেয় দল। শিগগিরই সব সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিতদের দলের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, নানাভাবে পরিচালিত জরিপের ফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিতর্কিতদের দলের মনোনয়ন দেয়নি। নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর মন্ত্রিসভা গঠনেও চমক ছিল। পুরনো বেশিরভাগ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবার বাদ পড়েন। ঠাঁই হয় জনপ্রিয় ও নতুনদের। এরপর সংসদে দলের জন্য নির্ধারিত সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের বেলায়ও আওয়ামী লীগ পুরনোদের (দুজন বাদে) বাদ দিয়ে নতুনদের প্রাধান্য দেয়। এবারের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলটির মনোনয়নের তালিকায় তেমন ছিল না বিতর্কিত নেতাদের নাম। অভিযুক্ত ও বিতর্কিতদের পেছনে ফেলে দল জনপ্রিয়দের নিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!