• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯, ০৭:৩৬ পিএম
যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সংসদ নির্বাচনোত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ডাকসু নির্বাচন, জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থার নিরীখে রাজনীতিতে এই নতুন মেরুকরণের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কোনো-কোনো নেতা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনাও দেখছেন ভবিষ্যতে। সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকস্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট হয়নি, এ বিষয়টি সর্বজনগ্রাহ্য। এখন প্রয়োজন সরকারকে নির্বাচনের চাপে ফেলা। এ কাজটি করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্য একসঙ্গে রাজপথে আসা অপরিহার্য।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। এখন শুধু পথ একটাই, গণঅভ্যুত্থান। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। এই সরকার কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু করবে না। এটা সব দল জানে। এখন সবার ঐক্য জরুরি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতারা একাধিক কারণে যুগপৎ আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখলেও বিরোধী দলগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে অনৈক্য বিদ্যমান। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম দল সিপিবি। বাম জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সিপিবির কারণে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানোর প্রক্রিয়াটি স্থগিত রয়েছে। বামজোটের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘এই নির্বাচনের বিষয়ে আমরা খুব দ্রুত আমাদের অবস্থান জানাবো।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপিসহ ফ্রন্টের নেতাদের একটি অংশ উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার মত দিলেও ভেতরে-ভেতরে কোনও-কোনও দল ও নেতা নির্বাচনের পক্ষে। এ কারণে আগ্রহী কেউ প্রার্থী হতে চাইলে ‘স্বতন্ত্র’ পথটি খোলা রেখেছে ঐক্যফ্রন্ট।

এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘আমরা দলীয় মার্কায় নির্বাচন করবো না। তবে কেউ আগ্রহী থাকলে হয়তো ছাড় পাবে।’

২০ দলীয় জোটের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে সাংগঠনিকভাবে উপজেলা নির্বাচন না করার কথা জানিয়ে দিয়েছে প্রার্থীদের। কেউ নির্বাচন করতে আগ্রহী হলে নিজ দায়িত্বে করার নির্দেশনা আছে। দলটির অনুসারী সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দলের নির্দেশনা পেয়েছি। দলীয়ভাবে কোনও নির্বাচন করা হবে না। আমি নির্বাচন করবো।’ তবে পিরোজপুর জেলার একটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম সাঈদী বলেন, ‘আমি নির্বাচন করবো না। জামায়াতও নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেন্দ্রিক দু’টি বিষয় স্পষ্ট হবে। একটি হচ্ছে, এই নির্বাচনে যারা অংশ নেবে না, তাদের সঙ্গে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনার করার দ্বার উন্মোচন হবে।

দ্বিতীয়ত, এই নির্বাচনে দৃশ্যত জামায়াত নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও স্বতন্ত্র ভোটে দলটির কী সংখ্যক প্রার্থী জিতে আসে, এর ওপর নির্ভর করবে দলটির প্রতি সরকারের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন এসেছে কিনা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, পরিষ্কারভাবেই যদি ইসলামী আন্দোলন, বামজোট উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আলোচনা করে রাজপথে আসার সম্ভাবনা থাকবে। সব বিরোধীরাই যদি উপজেলা নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে রাজপথে আসবে ঐক্যফ্রন্ট।

এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘জনগণের দাবিকে সামনে আনতে হবে। আমরা কাজ করছি। যারা যারা কাজ করবে, তাদের সঙ্গেও কথা হতে পারে, আলোচনা হতে পারে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শনিবার একটি অনুষ্ঠানে জোর দিয়েই বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আপনারা ভয় পাবেন না, সারাদেশের মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। সুতরাং এখন সাহস নিয়ে লড়াই করতে হবে।’

বামনেতারা বলছেন, আলোচনা করে নয়, আগে প্রত্যেক দলকেই রাজপথে নামতে হবে। নিজেদের দাবি, জনগণের দাবিকে সামনে রেখে রাজপথে নামার পরই আলোচনা হতে পারে।

বামজোটের সাবেক সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানাবো। এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এসব কমন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে আগে বাস্তবে রাজপথে নামতে হবে। এতে করে পরোক্ষ ঐক্য গড়ে ওঠে। সেটা চলতে-চলতে দৃঢ় ঐক্য হবে। আমরা মনে করি, প্রত্যেক দল তাদের মতো রাজপথে অবস্থান নেবে।’

সূত্রমতে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বামজোটের সঙ্গে এবং আসম আবদুর রবকে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা না হলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিয়মিত বিরতি দিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ডাকসু নির্বাচনের শেষ পরিস্থিতি দেখার পরই এ উদ্যোগ দৃশ্যমান হবে বলে জানা গেছে।

ইসলামী আন্দোলনের নীতিনির্ধারণী নেতা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘যে নির্বাচন হয়েছে এটাকে নির্বাচন বলে না। এখন প্রতিবাদ করতে হবে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। কর্মসূচি থাকবে। দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সব নির্ধারণ করা হবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা মনে করছেন, সংসদে বিরোধী দলের ভ‚মিকায় আছে জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান এরশাদ অসুস্থ থাকায় সংসদে প্রকৃত ভূমিকা কী হবে, এটা পরিষ্কার নয়। জিএম কাদেরকে উপনেতা করা হলেও সংসদের বিরোধী নেতা হিসেবে অন্য কাউকে দেখা গেলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

সরকারবিরোধী দলগুলোর বাইরে জাপার সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও নতুন নির্বাচন চায়। গত শনিবার দলটির নতুন নির্বাচিত আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর দেশে নির্বাচনের নামে একটি প্রহসন হয়েছে। এ নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার বৈধ বলে দাবি করতে পারে না। তাই কারচুপির এ নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!