• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বাস্তবায়ন হয় না শতভাগ এডিপি

রাজস্ব আহরণে ঘাটতি, চাপ বাড়াবে উন্নয়নে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৫, ২০১৮, ০২:৩২ পিএম
রাজস্ব আহরণে ঘাটতি, চাপ বাড়াবে উন্নয়নে

ঢাকা : দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছর শেষে প্রকৃত আহরণ দাঁড়ায় ২ লাখ ১ হাজার ২৩১ কোটি টাকায়। মূল বাজেটের হিসাবে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। লক্ষ্যের ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ রাজস্ব কম আসায় ওই অর্থবছরে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সরকারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছিল মূল বরাদ্দের ৮৭ শতাংশের কম অর্থ। অর্থের সংস্থান না থাকায় ওই লক্ষ্যের চেয়ে উন্নয়ন খাতে ১৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা কম ব্যয় হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি ধরে রাখার কথা বলে প্রতিবছর বড় আকারের বাজেট দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে থাকছে রাজস্ব আহরণে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য। বছরের মাঝ পর্যায়ে এসে কাক্সিক্ষত হারে আয় ও ব্যয় না হওয়ায় বাজেটের আকার ছোট করা হয়ে থাকে। আর অর্থবছরের শেষে চূড়ান্ত হিসাবে বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় সংশোধিত বাজেটেরও নিচে। এভাবে বাজেটে কাটছাঁট ও বাস্তবায়নে অদক্ষতার প্রভাবে উন্নয়ন খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, আগামী অর্থবছরের জন্য অনুমোদন পাওয়া ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। রাজস্বের লক্ষ্য পূরণ হলেও ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকার ঘাটতি পূরণ হবে আরো বড় চ্যালেঞ্জ।

বাজেটে এডিপি বাস্তবায়নে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। এ হিসাবে এডিপি বরাদ্দের ৭০ শতাংশই মেটাতে হবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে। পর্যাপ্ত বিদেশি ঋণের নিশ্চয়তার পাশাপাশি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ না হলে এবারো এডিপি বাস্তবায়ন সংশয়ে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা রাজস্ব হিসেবে আয় করার কথা ছিল। সংশোধিত বাজেটে এর লক্ষ্য নামিয়ে আনা হয় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ১১০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য কমানোর সঙ্গে কমেছে এডিপি বাস্তবায়নে বরাদ্দ কমেছে ৬ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর বিশাল ব্যয়ের বাজেট প্রণয়ন করতে গিয়ে সামর্থ্যরে চেয়ে বেশি আয়ের লক্ষ্য নেওয়া হয়। বছর শেষে আয়ের লক্ষ্য পূরণ না হলে বড় প্রভাব পড়ে উন্নয়ন খাতে। তিনি বলেন, বাজেটের রাজস্ব খাতে বরাদ্দ কমানোর সুযোগ কমই থাকে। অর্থের জোগান কম হলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন, ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় কমানো যায় না। ফলে উন্নয়নে ব্যয় কমানোর পাশাপাশি লক্ষ্যের বেশি ঋণ করে আয় ব্যয়ের সমন্বয় করতে হয়।

আগামী অর্থবছরেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ না হলে উন্নয়ন বরাদ্দে কাটছাঁট হয়। আবার অনেক সময় বাস্তবায়ন না হওয়ায় উন্নয়ন খাতের অর্থ ফেরতও যায়। সার্বিক বিবেচনায় রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণ হলে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে আসবে।

তা ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো অগ্রাধিকার খাতে বরাদ্দও বাড়ানো সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য পূরণে জোরদার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। বাস্তবায়নে দুর্বল গতি ও রাজস্ব আহরণে লক্ষ্য পূরণে সংশয়ের কারণে এর আকার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অবশ্য মে মাস পর্যন্ত অর্থবছরের ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে সংশোধিত এডিপির ৬২ দশমিক ৮১ ভাগ অর্থ ব্যয় হয়েছে।

শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এক মাসে ৫৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ের চাপ রয়েছে। আইএমইডি সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৯৭ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। সংশোধিত এডিপির আকার নামিয়ে আনা হয়েছিল ৯৩ হাজার ৯০৫ কোটি টাকায়। বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় দাঁড়ায় ৮৭ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল বরাদ্দের ১৩ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা কম ব্যয় হয় ওই অর্থবছর।

বছর শেষে বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৮৬ শতাংশে। মূল বরাদ্দের মাত্র ৮২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছর। সেবার ৮৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নামিয়ে আনা হয় ৭৭ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকায়। বছর শেষে এ খাতে ব্যয় হয় ৭১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এডিপিতে বরাদ্দ দিয়েও ব্যয় হয়নি ১৪ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে শুরু করে গত অর্থবছর পর্যন্ত শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে হাতে গোনা মাত্র চারবার। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ১০৪ শতাংশ, ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে ১০০ শতাংশ, ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ১০১ শতাংশ এবং ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ১১২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!