• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার চেয়ে বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট খাত আর কিছু নেই


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৬, ২০২০, ০১:০৬ পিএম
শিক্ষার চেয়ে বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট খাত আর কিছু নেই

ঢাকা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে আমাদের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি উপহার দিয়েছেন।

এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চেয়ে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না। … দারিদ্র্য যেন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাবীদের জন্য বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’

এ উপলব্ধিকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য তিনি ১৯৭২ সালে শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদার নেতৃত্বে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন এবং ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইন পাস করেন। ব্যাপক সংখ্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন, গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে তিনি সামরিক খাতের থেকেও শিক্ষা খাতে ৭ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দেন।

শিক্ষকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ শ্রদ্ধাবোধ থেকেও বোঝা যায় তিনি শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দিতেন। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষককে ছাত্ররা কিছু দাবি নিয়ে ঘেরাও করে। খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের উদ্ধার করেন।

শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, যারা শিক্ষকদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে, তিনি তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক ঢাকায় তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বাসভবনের গেটে উপস্থিত হলে বঙ্গবন্ধু নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর পান এবং সব নিয়মকানুন উপেক্ষা করে নিজেই ছুটে আসেন এবং স্যারের পা ছুঁয়ে সালামের পর বুকে জড়িয়ে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু সেই শিক্ষককে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিজের চেয়ারে বসিয়ে উপস্থিত মন্ত্রী, এমপিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গর্বভরে বলেছিলেন, ‘আমার শিক্ষক’। ১৯৭৪ সালে একবার তিনি নোয়াখালী জেলা সার্কিট হাউসে অবস্থানকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জানতে পারেন, একজন বৃদ্ধ শিক্ষক তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চান। বিষয়টি কানে পৌঁছামাত্র তিনি সেই শিক্ষককে তার কাছে আসার অনুমতি দেন।

২০১৮ সালের শেষের দিকে আমি ভারতের পুনেতে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট বিষয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করি। আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-গবেষকও অংশগ্রহণ করেন।

সেখানে ভারতের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার রঘুনাথ মাশালকারকে বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল জিজ্ঞাসা করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল একই হওয়া সত্ত্বেও আপনারা বিজ্ঞানে এত এগিয়ে গেলেন কীভাবে? স্যার রঘুনাথ মাশালকার উত্তর দেন, ‘আমাদের রাজনীতিবিদরা বাইরে যাই-ই করুন না কেন, তারা শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করেন না।

এ জন্য ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বকীয় ধারা ও কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শিক্ষা ও গবেষণায় সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছে।

১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সাহিত্য সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি সর্বত্রই একটি কথা বলি, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষ আকাশ থেকে পড়বে না, মাটি থেকেও গজাবে না।

এই বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্য থেকেই তাদের সৃষ্টি করতে হবে।’ আর সেই সোনার মানুষ গড়ার কারিগর হল শিক্ষক এবং সেই কারখানা হল শিক্ষালয়। জাতির পিতার আদর্শ, চিন্তা-চেতনায় বলীয়ান হয়ে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোয় উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হলে আমরা একসময় ভারতসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।

লেখক-অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন : উপাচার্য, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সোনালীনিউজ/এএস
 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!