• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তানের শাস্তির ভয়ে পরিচয় দিচ্ছেন না স্টেশনে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধা


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০২:১৫ পিএম
সন্তানের শাস্তির ভয়ে পরিচয় দিচ্ছেন না স্টেশনে ফেলে যাওয়া বৃদ্ধা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া শতবর্ষী বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো বলে জানান চিকিৎসকরা।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে তিনি কথা বলতে পারছেন এবং খাবার খেতে চাচ্ছেন।

এখনো তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। তার পরিচয় জানতে চাইলে চুপ করে থাকছেন। প্রশাসনের লোকজন তার সামনে বলেছেন তার সন্তানদের ধরে এনে শাস্তি দেবেন। সন্তানদের শাস্তির ভয়েই সম্ভবত তিনি তার পরিচয় বা ঠিকানা দিচ্ছেন না। তীব্র শীতের মধ্যে শতবর্ষী মাকে রেলস্টেশনে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন তার সন্তান ও স্বজনরা। হাড় কাঁপানো শীতে প্ল্যাটফর্মে ১৫ দিন থাকার পর রোববার রাতে পুলিশ ও স্থানীয়রা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়।

যে সন্তানদের বুকের মধ্যে রেখে বড় করেছেন তারাই তাকে ফেলে চলে যাবে এটা হয়তো ওই বৃদ্ধা কখনো ভাবেননি। প্রাণের সন্তানরা তাকে বোঝা মনে করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে গোপনে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে রেখে চলে গেছে। রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, ১৪/১৫ দিন আগে আমি স্টেশনে দোকানে বসেছিলাম। দেখলাম কয়েকজন রিকশাভ্যানে নিয়ে এসে বৃদ্ধ নারীকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের একটি জায়গায় রেখে দিল। কৌতূহলী হয়ে আমি তাদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর শুরু হয় বৃষ্টি। দীর্ঘক্ষণ পরও তারা ফিরে না আসায় আমি স্টেশনের তেঁতুলগাছের নিচে পরিত্যক্ত জায়গাটিতে খড় বিছিয়ে দিই। এর পর পুরনো কম্বল দিয়ে বিছানা তৈরি করে তাকে সেখানে রাখি।

আমি গরিব মানুষ, তারপরও এ কয়দিন আমার যথাসাধ্য সেবাযত্ন করার চেষ্টা করেছি। এভাবেই গত দুই সপ্তাহ উনি এখানেই ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গোমস্তাপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. সালাউদ্দীন জানান, রোবরার রাতে যখন তাকে এখানে আনা হয়, তখন প্রচণ্ড ঠান্ডা।

বার্ধক্যজনিত কারণে তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ভাইটাল সাইন যেমন বিপি পালস্ খুব কম ছিল। চিকিৎসার পর সকালে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো তিনি শঙ্কা মুক্ত নন। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তবে যতক্ষণ তিনি এখানে আছেন, আমরা আমাদের যথাসাধ্য করব।

এমন অমানবিক ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, চিকিৎসকসহ স্থানীয় জনপ্রশাসনও এগিয়ে এসেছেন শতবর্ষী ওই বৃদ্ধার সেবায়। রহনপুর পৌর মেয়র তারেক আহমেদ জানান, রাতে আমি বিষয়টি শোনার পরই হাসপাতালে ছুটে এসেছি। তিনি আমার মায়ের মতোই, তাই তাকে ফেলে যেতে পারিনি। যতদিন এ অসহায় বৃদ্ধ মায়ের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, একজন সন্তানের মতোই তার পাশে থাকব।

রহনপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে মালতি বেগম নামে এক নারীকে ওই বৃদ্ধাকে দেখভালের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। মালতি জানান, যখনই ওই বৃদ্ধা চেতনা ফিরে পাচ্ছেন, তখনই একরাশ ঘৃণা প্রকাশ করছেন তার স্বজনদের প্রতি। হাতের ইশারায় দূরে সরে যেতে বলছেন তিনি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। শতবর্ষী ওই বৃদ্ধার প্রতি এমন নির্মম আচরণের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। নিষ্ঠুর ওই পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করে শাস্তি দাবি জানান অনেকেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!