• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সু চির বিচারের দাবিতে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপক বিক্ষোভ


কক্সবাজার প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০১:১৫ পিএম
সু চির বিচারের দাবিতে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপক বিক্ষোভ

কক্সবাজার : মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলায় নেদারল্যান্ডসের আদালতে ৩ দিনব্যাপী শুনানি শুরু হচ্ছে আজ। এতে বাংলাদেশ সময় তিন দেশ তথ্য উপাত্তা দিয়ে গাম্বিয়াকে সহযোগীতা করবে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় এই শুনানি শুরু হবে। এদিকে অং সান সুচির বিচারের দাবিতে কক্সবাজারে বিক্ষোভ করছেন রোহিঙ্গারা।

এদিকে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দাবি ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির আগমনকে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠছে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহর। সু চির উপস্থিতিতে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুরু হচ্ছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি।

শুনানি শেষে আদালত মিয়ানমারের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। এদিকে হেগে শুনানির প্রাক্কালে মিয়ানমারকে সর্বতোভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছে ৩০টি সংগঠন।

জাতিসংঘ আদালতে শুনানি উপলক্ষে হেগে টানা তিন দিন বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো। মিয়ানমার সরকার সমর্থকরাও সেখানে সমাবেশ করবে। শুনানিতে ওআইসির পক্ষে মামলা দায়ের করা গাম্বিয়ার আইনজীবীরা ১৬ সদস্যবিশিষ্ট আদালতে পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগেই সাময়িক পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানায়।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন দিনব্যাপী শুনানি চলাকালে জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

জানা গেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অংশ হিসেবে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে। তবে মিয়ানমার সরকারের প্রধান হিসেবে সু চিকে দায়মুক্তি দেয়া হতে পারে।

শুনানিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত গণহত্যা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আদালতের প্রতি আহ্বান জানাবে পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়া। আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন এ মামলার বিচারের এখতিয়ার তাদের আছে কি-না। তবে প্রাথমিক শুনানিতে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের কারও বক্তব্য শোনা হবে না। ‘ওয়ার্ল্ড কোর্ট’ বা বিশ্ব আদালত হিসেবে পরিচিত আইসিজেতে গত মাসে মামলা করে গাম্বিয়া। এতে কূটনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ওআইসি। শুনানি শুরুর আগের দিন গাম্বিয়ার উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছে কানাডা এবং নেদারল্যান্ডস।

সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে দেশ দুটি বলেছে, জবাবদিহি নিশ্চিত এবং দায়মুক্তি রোধ করতে তারা গাম্বিয়াকে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব ছিল রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেয়া। অথচ নিরাপত্তা বাহিনীই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

জানা গেছে, তৎপরতার অংশ হিসেবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত বব রে ইতোমধ্যে হেগে পৌঁছেছেন।

প্রথম দিনই শুনানি শুরু করবেন গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবকর ম্যারি তাম্বাদু। তিনি আইন শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন ব্রিটেন থেকে।  রুয়ান্ডা গণহত্যা ট্রাইব্যুনালেরও প্রসিকিউটর ছিলেন তিনি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে যাওয়ার পর তিনি মামলা করেছেন।  শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।  বিপুলসংখ্যক আন্তর্জাতিক দর্শক শুনানি দেখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষ হলেও রায় অপেক্ষমাণ রাখা হতে পারে।

হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও (আইসিসি) রোহিঙ্গাদের গণহত্যা নিয়ে আরেকটি মামলা চলছে। আদালত এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আর্জেন্টিনার একটি আদালতেও রোহিঙ্গা গণহত্যায় সু চির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এদিকে সু চি যখন রোহিঙ্গা গণহত্যার পক্ষে সাফাই গাইতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে গেছেন, ঠিক তখনই মিয়ানমারকে বয়কটের ডাক দিয়েছে ১০টি দেশের ৩০টি সংগঠন। শুনানি সামনে রেখে নেপিদোর ওপর চাপ জোরালো করতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

রয়টার্স জানায়, জার্মানিভিত্তিক ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনস নামের প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইন’ শুরু করা হয়েছে। সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণহত্যা মামলার শুনানিকে সামনে রেখে ৩০টি সংগঠন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ফরাসি ডট কো, রেস্টলেস বিংস, ডেস্টিনেশন জাস্টিস, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক অব কানাডা, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ অব ইন্ডিয়া ও এশিয়া সেন্টারের মতো সংগঠনগুলো।

ফি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাই সান লুইন বয়কট কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন স্পষ্ট করেছে যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতিকে নির্মূল করে দেয়ার একটি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী হিসেবে আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অধীনে ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকা অং সান সু চির মুক্তির আন্দোলন করে এসেছি। তবে তিনি সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর খুনি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে চলছেন। তাই আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।

এদিকে গত অক্টোবরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আইসিজের নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার ফিলিপ গটিয়ার জানিয়েছিলেন, গণহত্যার মামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের যে কোনো রায়ই চূড়ান্ত, বাধ্যবাধকতাপূর্ণ ও অবশ্যপালনীয়। চূড়ান্ত রায়ের পর আপিলের কোনো সুযোগ নেই।

ইউএন নিউজের কনর লেননের মুখোমুখি হয়ে গত অক্টোবরে এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আইসিজের নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার ফিলিপ গটিয়ার। তিনি আইসিজেতে নিযুক্ত হওয়ার আগে সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কনর লেনন ও ফিলিপ গটিয়ারের মধ্যকার আলোচনায় জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা হিসেবে আইসিজের ভূমিকা, এর কার্যপ্রণালিসহ বিভিন্ন দিক উঠে আসে। আলাপের শুরুতেই ফিলিপ গটিয়ার বৈশ্বিক মঞ্চে আইসিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ সনদ মোতাবেক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সবচেয়ে জরুরি কাজগুলো সম্পাদনে আইসিজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী ১১ নভেম্বর বিষয়টি প্রকাশ করেন। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলা করে গাম্বিয়া।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তাচৌকিতে সন্ত্রাসীদের হামলাকে অজুহাত দেখিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নৃশংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।  নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন থেকে বাঁচতে পরের কয়েক মাসে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘ এই নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!