• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ বিএনপিতে ধরপাকড়, আতঙ্কে শীর্ষ নেতারা


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৬:০৫ পিএম
হঠাৎ বিএনপিতে ধরপাকড়, আতঙ্কে শীর্ষ নেতারা

ঢাকা: একরকম হঠাৎ করেই রাজপথ উত্তাল করেছে বিএনপি। তার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আর এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। ওই এই মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৫শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গেল মঙ্গলবার রাতে এসআই মতিউর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

এরই মধ্যে ওই মামলায় মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বিএনপি নেতা ইশতিয়াক আজিজ উলফাতকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেয়া, অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে এসআই মতিউর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

এ মামলার এজারভুক্ত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেল, খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক জনাব সাদেক খান, যুবদলের সভাপতি জনাব সাইফুল ইসলাম নীরব, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জনাব শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। 

এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী তালুকদার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ছাত্র বৃত্তি সহ সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহনেওয়াজ, সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল, ছাত্রদল ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম রবিন প্রমুখ। এই তথ্য জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল।

উক্ত আসামীতের মধ্যে তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন-ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর)  দুপুর ১২টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মুক্তিযোদ্ধা মেজর হাফিজের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম শামীম। 

তিনি বলেন, ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান মুঠোফোনে জানান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমের স্ত্রী দিলারা হাফিজ আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন যে, তার স্বামীকে পুলিশ আটক করেছে। হাইকোর্ট থেকে বের হওয়ার পরই তাকে আটক করা হয়। তাকে কোথায় নেয়া হয়েছে তাও জানে না পরিবার।

এর আগে সকালে সুপ্রিমকোর্টের ফটক থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে আটক করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান। 

তিনি বলেন, খায়রুল কবির খোকনকে হাইকোর্টের সামনে থেকে আটকের পর শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার হাইকোর্টের সামনে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির ৫০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি ইতিমধ্যে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। খায়রুল কবিরকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হতে পারে বলে জানান ওসি। এ বিষয়টি ডিবি পুলিশ দেখবে বলে জানান আবুল হাসান।

এ বিষয়ে খোকনের স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি উপলক্ষে আমি ও খোকন একই গাড়িতে হাইকোর্টে যাচ্ছিলাম। গেট থেকে তাকে পুলিশ নিয়ে গেছে। তাকে কেন আটক করা হয়েছে, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

আর খোকনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, খোকনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। এ কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে বুধবার রাতে গ্রেফতার হন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। তাকে একই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

প্রসঙ্গত, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতাকর্মীরা গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় এ মামলা করা হয়।

এদিকে হঠাৎ করে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারে শীর্ষ নেতারে মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর সরকারের এমন আচরণে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকে উপেক্ষা করে চক্রান্তের বদ্ধ চোরাগলিতে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, সরকার ও সরকারপ্রধানের কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। 

রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকারের প্রতিহিংসার মনোভাব থাকায় এক নিষ্ঠুর স্কিম অনুযায়ী তারা কাজ করছে। ক্ষমতার মোহে অন্ধ উন্মত্তের মতো আচরণ করছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা দিয়ে।

মঙ্গলবার রাতে হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ওই দিন রাতে শাহাবাগ থানায় বিএনপি নেতাদের নামে যে মামলা হয় তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী। তিনি বলেন, জুলুমবাজ সরকার হিংস্র আঁচড়ে এদেশের বিরোধী শক্তিকে জর্জরিত করার জন্য সব শক্তি নিয়োগ করেছে। সরকারের দুর্বিনীত হাতের হিংস্রতা এই মূহুর্তে চরম আকার ধারণ করেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখলাম গত পরশু রাতে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতকে গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান বিএনপির এই নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।

যদিও নাশকতার মামলায় হাইকোর্টে আট সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন নেতা। বাকি দুজন হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এর আগে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল তাদের পক্ষে আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!