• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনাহীন বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২০, ২০১৬, ০৬:৫১ পিএম
পরিকল্পনাহীন বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি
লক্ষ্যহীন যাত্রার মতো অনেকটা পরিকল্পনাহীন বাংলাদেশের বৃহৎ বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। অনেকটা ‘অ্যাডহক’ ভিত্তিতে চলছে দলীয় কার্যক্রম।সমস্যা বা ইস্যু সামনে এলে তাৎক্ষণিক বৈঠক ডেকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে চলমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কাটিয়ে ওঠা যায়, তা নিয়ে দলটির নীতি-নির্ধারকদের মাথাব্যথা কম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা তাকিয়ে আছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দিকেই।

বিএনপির সর্বশেষ দলীয় ফোরামের বৈঠক  হয়েছিল ৪ জানুয়ারি রাতে। ইসু ছিল ৫ জানুয়ারির জনসভা। দশম সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে ওই ইস্যু বিএনপির সামনে চলে আসে। এর আগে পৌর নির্বাচন এবং তারও আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এসে পড়ায় বিএনপি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়। জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে শিগগিরই দলের আরেকটি বৈঠক হবে। এরপর দলের কাউন্সিল করতে চাইলে হয়তো অভ্যন্তরীণ আরও কিছু বৈঠক হতে পারে। কিন্তু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের প্রশ্নে দলের পরবর্তী পদক্ষেপ, বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির অবস্থান নির্ণয়; সর্বোপরি জামায়াত প্রশ্নে দলের করণীয়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।

এ ছাড়া দলটির সর্বস্তরে আলোচনা হচ্ছে, নেতৃত্বের বর্তমান কাঠামো দিয়ে বিএনপি চলছে না। বলা হচ্ছে, বিএনপিকে ঠিক করতে গেলে গুলশান কার্যালয়ও ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গ্রুপিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।   

সব মিলিয়ে বলা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠার ৩৮ বছরের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে মোট সাড়ে ২১ হাজারের বেশি মামলা ঝুলছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী হয় কারাগারে; নয়তো আত্মগোপনে। অথচ এ পরিস্থিতি থেকে দলটি কী করে ঘুরে দাঁড়াবে সে পরিকল্পনা তো দূরে থাক, ভাবনাও নেই দলটির মধ্যে।

যদিও দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবি, সরকার মামলা দিয়ে বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে বলেই হয়তো অনেকে বলছেন বিএনপিতে বিপর্যয় চলছে। বাস্তবে বিএনপি দুর্বল হয়নি। জাতীয় কাউন্সিলের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, আপাতদৃষ্টিতে হয়তো কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, আমরা অ্যাডহক ভিত্তিতে চলছি। কিন্তু সময়ে এ পরিস্থিতি বদলাবে। তার মতে, দলে কার কোথায় অবস্থান এটি স্পষ্ট হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবে। সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা কাউন্সিলের পরে নেয়া বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলটির মাঠপর্যায়ের নেতারা তাকিয়ে কেন্দ্রের দিকে, আর কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তাকিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দিকে। কিন্তু পরবর্তী করণীয় নিয়ে এ পর্যন্ত খালেদা জিয়া কারও সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানা যায়নি। পরবর্তী কর্মকৌশল, বিশেষ করে নীতি-নির্ধারণী প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ফোরামের গুরুত্বপূর্ণ কোনও বৈঠকও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়নি।

৪ জানুয়ারি রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের এজেন্ডা ছিল, পরের দিন ৫ জানুয়ারির জনসভার অনুমতি না দেয়া হলে পরবর্তী করণীয়। কিন্তু বিকালের মধ্যেই জনসভার অনুমতি মিলে যাওয়ায় খালেদার বক্তৃতার গাইডলাইন নিয়ে আলোচনা হয়। বস্তুত দশম সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তি সামনে চলে আসায় ওই বৈঠক ডাকতে হয় খালেদাকে।

বলাবাহুল্য, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা কমে যাওয়ায়, আজকাল প্রায়ই সিনিয়র নেতাদের ব্যানারে বিএনপির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

১৯ সদস্যের কমিটিতে এ মুহূর্তে বৈঠক হলে ৯ জন সদস্য উপস্থিত থাকতে পারবেন। বয়োঃবৃদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে মারা গেছেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও ড. আর এ গনি। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর। এ ছাড়া অসুস্থ আছেন এম. শামসুল ইসলাম ও সারোয়ারি রহমান। কারাগারে রয়েছেন এমকে আনোয়ার ও মির্জা আব্বাস। মামলার কারণে এক বছর ধরে আত্মগোপনে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। ১৯ নম্বর সদস্য তারেক রহমান গত ৮ বছর ধরে লন্ডনে। প্রায় দুই বছর কারাভোগের পর মাত্র চারদিন আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বের এই দুরবস্থার মধ্যেও দল পুনর্গঠনের কার্যকর উদ্যোগ নেই। উপরন্তু মহাসচিব পদ নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোন্দল-বিভেদ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ ৪ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পদে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এর আগে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট দুই মাস ৫দিন লন্ডনে ছেলে তারেক রহমান ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। যদিও এসময় তার চোখে একটি অপারেশন হয়েছে। তা সত্ত্বেও দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার ধারণা হয়েছিল, দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করেই দেশে ফিরবেন এবং  বিএনপিকে ঢেলে সাজাবেন। পাশাপাশি দলকে চাঙ্গা বা গতিশীল করতে নেবেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু এসব নিয়ে চিন্তা ও পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে হয় বিএনপিকে। ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দলটি ওই নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এরই মধ্যে এসে যায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ফলে জাতীয় কাউন্সিল করার আগ্রহ থাকলেও তা সম্ভব কি না, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সংশয় রয়েছে। কারণ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপজেলা ও পৌর বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলর। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালে কাউন্সিল হলে তৃণমূলের ওই নেতারা ঢাকায় আসতে পারবেন না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপিপন্থী এক বুদ্ধিজীবী বলেন, আসলে আমরা বসে নেই; বিএনপির পেছনে লেগে আছি। তার মতে, সাময়িক কিছু অসুবিধায় থাকলেও সময়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। এর বিকল্প নেই। তবে জামায়াত প্রশ্নে সরকার রাজনীতি করছে বলেই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার নিষিদ্ধ করে দিলে জামায়াতের দায় বিএনপির ওপর পড়ত না। কিন্তু সরকার এ নিয়ে রাজনীতি করছে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!