• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াত টানাপড়েন, ক্ষুব্ধ অন্য শরিকরাও 


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৮, ২০১৮, ০৭:৫৪ পিএম
বিএনপি-জামায়াত টানাপড়েন, ক্ষুব্ধ অন্য শরিকরাও 

ঢাকা: অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে জোটভুক্ত প্রধান দু'দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে। বিভিন্ন দলেও রয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা। বছরে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দুই-একটি বৈঠক ছাড়া আর কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই এই জোটের। ভাঙা-গড়ার খেলা অব্যাহত রয়েছে জোটভুক্ত ছোট দলগুলোর মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডেকেছেন জোট নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর জামায়াতকে কৌশলে পাশ কাটিয়ে চলছে বিএনপি। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে পারছে না। বিএনপির সমাবেশেও তাদের ডাকা হচ্ছে না। এ কারণে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা জামায়াত এবার ভিন্ন কৌশলে চাপে ফেলতে চাইছে বিএনপিকে। সবক'টি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির সমান্তরালে প্রার্থী দিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখাতে চাইছে তারা। এর অংশ হিসেবে আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী নিয়ে আলোচনায় আসতে চাইছে জামায়াত। ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থীও চূড়ান্ত করে ফেলেছে তারা। জামায়াতের দরকষাকষির এ কৌশলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। 

জোটের অপর দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতারাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের অংশগ্রহণ ও আসন বণ্টন নিয়ে। গত ৩১ ডিসেম্বর এলডিপির বর্ধিত সভায় সারাদেশে দলীয় জনপ্রিয় প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারা বিএনপির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আসন বণ্টনের সমাধানও এখনই করে ফেলতে চাইছেন। দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিমের আসনসহ আরও কয়েকটি আসন চাইছে তারা। 

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ডিএনসিসি নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হতে চাইছেন। তবে জোট ও বিএনপি চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্তে বাইরে তিনি যাবেন না বলেও জানা গেছে।

এদিকে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সব দলই চাইছে তাড়াতাড়ি বিএনপির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আসন নির্ধারণ করে ফেলতে। জোটের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলেও ক্ষোভ রয়েছে অনেক শরিক দলের। শরিক দলের একজন জানান, জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক মূলত চা চক্র ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা থাকে না। বিএনপির সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দেওয়া হয়। সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেওয়ার জন্য তারা গুলশান কার্যালয়ে যান।

এলডিপির একজন নেতা জানান, বিএনপি জোটের শরিকদের সঙ্গে নামকাওয়াস্তে বৈঠক করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে এবং বাস্তবায়ন করতে তাদের একতরফা নীতি সবাইকে হতাশ করছে। তিনি বলেন, এরপরও জোটের সঙ্গে আছি, আগামীতেও থাকব। তবে এসব কারণে জোটের মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বও তৈরি হয়েছে। 

খেলাফত মজলিশের মহাসচিব ড. আহমেদ আবদুল কাদের জানান, জোটের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাই তাদের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিতে হয়। নানা কারণে এখনও সমন্বয়হীনতা থাকায় আশানুরূপ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি এ জোট।

বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি জানান, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে একমত পোষণ করে জোটের সবাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছি। কিন্তু সব রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক বিস্তৃতি এক নয়। তাই যে যার মতো করেই আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে। আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের মতো এসব দলের অনেক নেতাকর্মীকেও মামলা-হামলা, গ্রেফতার আর কারাবরণ করতে হয়েছে। কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমানকে অনেকদিন নিখোঁজ করে রাখা হয়েছিল। এখনও তিনি কারাগারে। ছোট দল বলে প্রচারণাও কম।

জোটের হতাশা কিংবা ক্ষোভের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি এখন মামলা-হামলার কারণে নিজেরাও বসতে পারছে না। তবে এত বড় একটি জোটে রাগ-অভিমান থাকতেই পারে। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কারণ কিংবা কোনো তথ্য জানা নেই। বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য নানা প্রচারণাও রয়েছে। জোটগতভাবে দেশের গণতান্ত্রিক সংকট উত্তরণে কাজ করে যাচ্ছি। এ সংকট না কাটা পর্যন্ত জোটে কোনো ভাঙন হবে না বলেও তিনি মনে করেন।

২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চারদলীয় জোট কলেবরে বেড়ে ১৮ দলীয় জোট হয়। বিএনপি ছাড়া সে সময় জোটের শরিকরা ছিল জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, পিপলস লীগ ও ডেমোক্রেটিক লীগ। পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল এই জোটে যোগ দেয়ার পর পরিণত হয় ২০ দলীয় জোট।

সোনালীনিউজ/জেএ  

Wordbridge School
Link copied!