• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনামূল্যে সরকারি আইন সেবা : এডিআর’র মাধ্যমে


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৮, ২০১৬, ১০:১৭ পিএম
বিনামূল্যে সরকারি আইন সেবা : এডিআর’র মাধ্যমে

সোনালীনিউজ ডেস্ক

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে আট মাসে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষে ৯০ লাখ ৫৩ হাজার ৩শ’ টাকা আদায় করা হয়েছে। আইন বিচার ও সংসদ বিচারক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থা’ বিনামূল্যে দুই পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে এ টাকা আদায় করে দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান দিবস উপলক্ষে সংস্থাটির পক্ষ থেকে করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৫ সালে আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়নের পর জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু করে ‘জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থা’। এর মধ্যে ৬৩৯টি ঘটনা ছিলো মামলা হওয়ার আগে এবং ৩১১টি ছিলো মামলা হওয়ার পর।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে এডিআর বিধিমালা প্রণীত হওয়ার পর ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭টি জেলায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে মাত্র আট মাসে ৬৩৯টি প্রি-কেইস এবং ৩১১ টি পোস্ট-কেইসসহ সর্বমোট ৯৫০টি এডিআর নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৯০ লাখ ৫৩ হাজার ৩শ’ টাকা টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষে আদায় করা হয়েছে। বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসাররা সফলভাবে এডিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করছেন।

জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থার সহকারী পরিচালক (সিনিয়র সহকারী জজ) কাজী ইয়াসিন হাবিব বলেন, মামলা করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির টাকা উদ্ধার করতে দীর্ঘদিন সময় লাগতো। এমনকি এজন্য হাজার হাজার টাকা খরচও হতো। কিন্তু উভয়পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থা কোনো খরচ ছাড়াই ক্ষতিগ্রস্তকে টাকা আদায় করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, মামলা করা ছাড়া সমঝোতার মাধ্যমে টাকা আদায় করার কারণে এ আট মাসে ৬৩৯টি মামলা কম হলো। না হলে বিশাল মামলাজটে যোগ হতো এ ৬৩৯টি মামলা। আর হয়রানির শিকার থেকে বাঁচলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা। কাজী ইয়াসিন হাবিব বলেন, সারা দেশে আমাদের লিগ্যাল এইড অফিসার আছেন। তার কাছে আবেদন করে উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিকার পাওয়া যাবে।

জাতীয় আইনগত প্রদান সহায়তা সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) মালিক আব্দুল্লাহ্ আল-আমিনের মতে, সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে ‘আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার’কে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করে। এ আইনের আওতায় সরকার ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করে। দরিদ্র অসহায় মানুষের আইনের আশ্রয় ও প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। সরকার জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসর্মর্থ্য বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করছে। বর্তমানে সরকার দ্রুততম সময়ে বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এ সংস্থার আওতায় প্রতিষ্ঠিত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ পদ্ধতি প্রয়োগ করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

গত বছর সারা দেশে সরকারি খরচে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ত্রিশ হাজার ৪শ’ ৯ জন ব্যক্তি। যা ২০১৪ সালের চেয়ে ৫ হাজার একশ’ ২৬ জন বেশি। দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় নাগরিকদের আইনি সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ করা হয়। এ আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। এ সংস্থার অধীনে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড কমিটি কাজ করছে। সরকারের এ বিনামূল্যে আইনি সহায়তার কর্মসূচি শুরু হয় ২০০৯ সালে। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ সংস্থাটি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীকে সেবা দিয়ে আসছে।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক(সিনিয়র জেলা জজ) মালিক আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেন, বিনামূল্যে আইনি সহায়তা সেবা দেওয়ার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছরের এ কয়েক মাসে আরো বেড়েছে। অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের সরকারি খরচে সেবা পাওয়া অধিকার। সরকার এ জন্য হটলাইন চালু করেছে। মানুষ হটলাইনেও আমাদের থেকে আইনি সেবা/পরামর্শ নিচ্ছেন। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা থেকে বিনামূল্যে আইনি সেবা গ্রহণ করেছেন ২০০৯ সালে ৯ হাজার একশ’ ৬০ জন, ২০১০ সালে ১১ হাজার ২শ’ ৬৬ জন, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৫শ’ ৮৬ জন, ২০১২ সালে ১৫ হাজার ৪শ’ ৫০ জন, ২০১৩ সালে ১৯ হাজার ৪শ’ ৯৩ জন, ২০১৪ সালে ২৫ হাজার ২শ’ ৮৩ জন এবং ২০১৫ সালে ৩০ হাজার ৪শ’ ৯ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১২ হাজার ৪শ’ ১৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আইনগত সহায়তা প্রদানের আইন মতে, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল যেকোনো ব্যক্তি (সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে নয় ও অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়), কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে আয় করতে অক্ষম এমন মুক্তিযোদ্ধা, যেকোনো শ্রমিক যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে নয়, বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন কোনো ব্যক্তি, ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা, পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ নারী বা শিশু, দুর্বৃত্ত দ্বারা অ্যাসিড দগ্ধ নারী বা শিশু, আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, অস্বচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুঃস্থ নারীরা বিনামূল্যে আইনি সেবা পাবেন। এছাড়া উপার্জনে অক্ষম এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী, আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি, বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অস্বচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি এবং জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অস্বচ্ছল বলে সুপারিশ করা বা বিবেচিত কোনো ব্যক্তি পাবেন এ সহায়তা। শুধু ৬৪ জেলাতেই নয়, উচ্চ আদালতেও রয়েছে আইনগত সহায়তা সংস্থার অফিস।

আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর অফিসটির উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এর আগে গঠন করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। বর্তমানে এ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। সঙ্গে রয়েছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীসহ ১১জন সদস্য। এর মধ্যে চেয়ারম্যানসহ ১০ জন নিয়ে মূল লিগ্যাল এইড কমিটি। বাকি দু’জন পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। এ কমিটির মাধ্যমে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- ফৌজদারি আপিল ও রিভিশন, দেওয়ানি আপিল ও রিভিশন, জেল আপিল, রিট পিটিশন ও লিভ টু আপিল। সুপ্রিম কোর্টে আইনি সেবা দেওয়ার জন্য লিগ্যাল এইড অফিস হাইকোর্ট বিভাগে ৬৯ এবং আপিল বিভাগে ৫ জন আইনজীবী দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/মে

Wordbridge School
Link copied!