• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ মুহূর্তেও ‘বস-ই’ থাকলেন রফিক


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৩, ২০১৮, ১১:০১ এএম
শেষ মুহূর্তেও ‘বস-ই’ থাকলেন রফিক

ফাইল ছবি

ঢাকা: রফিক জামান রিমু। একটি নাম। স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে যিনি মিস্টার বস। সেই স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সেনানী তিনি। নব্বই দশকের কথা। সাত সকালে ঢাকা কলেজ হোস্টেলের রুমে রুমে গিয়ে সবাইকে ডেকে একত্রিত করতেন। আন্দোলন সংগ্রামের কথা বলতেন। দল বড় করতেন।

প্রায় বার বছর পর ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করার আন্দোলনেও রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা।

বিটিভির খবরের সময় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (প্রতিবন্ধী)দের জন্য ইনসেটে যে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ প্রদর্শিত হয় সেই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ আধুনিক ও কার্যকর করাদের দলের প্রথম সারিতে ছিলেন রফিক জামান। কাজ করতেন বেসরকারি সংস্থায়।

সোমবার (১২ মার্চ) দুপুরে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন ৪৯ জন। উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রফিক জামান রিমু, স্ত্রী সানজিদা হক ও শিশু পুত্র অনিরুদ্ধ নিহত হন এই ঘটনায়।

রফিক জামান রিমুর মৃত্যুর খবরে সহকর্মী, সহযোদ্ধাদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। ভাইরাল হয় রিমু-সানজিদা-অনিরুদ্ধের ছবিটি। প্রিয় মানুষের ওয়াল ভারী হতে থাকে বন্ধুদের বিষাদগাঁথা পোস্টে।

ন্যাশনাল ফোরাম অফ অর্গানাইজেশন ওয়ার্কিং উইথ ডিসএবিলিটি (এনএফওডাব্লিউডি)তে কাজ করার পাশাপাশি টিএসসিকেন্দ্রীক সকল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন রিমু। ছোট বড় সবাই ভালোবেসে ডাকতেন ‘বস’।

রফিক জামান রিমুর বন্ধু ব্যাংক কর্মকর্তা সাফিয়ার রহমান ছোটন বলেন, রিমুর সঙ্গে পরিচয় ২৯ বছর আগে, ঢাকা কলেজে। কিন্তু মনে হয় যেন সেদিন। রিমু এমনই একজন মানুষ সে সারাজীবন শুধু ত্যাগ করেই গেছে। নিজের জন্য কোন দিন ভাবতে দেখি নাই।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে সে ছাত্রলীগ করত। আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগ তখন কিন্তু এত বড় সংগঠন ছিল না। সে সেই সকালে কলেজে এসে হোস্টেলের রুমে রুমে গিয়ে অন্যদের কে বোঝাতো, মোটিভেট করত ছাত্রলীগ করার জন্য। পরে দল যখন বড় হয়ে উঠল, সে অন্যদের জন্য যায়গা ছেড়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে অনেক বড় বড় আওয়ামীলীগ প্রেমীর ভিড়ে, তার জায়গা না হওয়ারই কথা।

বন্ধুর কাজ নিয়ে ছোটন বলেন, ডিজেবলদের নিয়ে তার কাজের কথা অনেকেই জানেন, তার মধ্যে অন্যতম হল, একটি সাইন ল্যাংগুয়েজ।

বন্ধু রফিক জামান রিমুর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন ছোটন। তিনি লেখেন, সে তার পরিবার সহ এমন ভাবে মারা গেল, যে শেষ মুহূর্তেও তার জন্য কাউকে কিছু করার সুযোগ দিল না। যাক অন্তত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে, কীভাবে বুঝাই এই শোক বার্তা তার স্বাভাবিক মৃত্যুতেও পাওনা ছিল।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনার কাজ করেছেন নোয়াখালী এই সন্তান। তার স্ত্রী সানজিদা হক ছিলেন চলচ্চিত্র আন্দোলন ও উন্নয়ন সংস্থার সক্রিয় যোদ্ধা। যারা এখন শুধুই ছবি!

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!