• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা হস্তান্তর


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৪, ২০১৮, ০৭:১০ পিএম
অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা হস্তান্তর

ঢাকা : আলোচনার নামে কালক্ষেপণের মাধ্যমে মূলত বাঙালিদের ওপর আক্রমণের ছক কষছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ২৪ মার্চ সামরিক শাসকরা হেলিকপ্টারযোগে সব সেনানিবাসে আক্রমণের পরিকল্পনা হস্তান্তর করে। পাশাপাশি গভীর রাতে গণহত্যার পরিকল্পনাও ছিল।

একাত্তরের এই দিনে সৈয়দপুর ও চট্টগ্রামে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা ৩শ’ বাঙালিকে হত্যা করে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর ধানমণ্ডির বাসভবনে সমাগত বিভিন্ন মিছিলকারীর উদ্দেশে প্রায় বিরামহীনভাবে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোনো সমাধান না হলে বাঙালিরা নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে।’

বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের প্রতি তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাশত করা হবে না।

এদিনও প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুই দফা বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান শেষ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তার ঘোষণা দেওয়া।

তিনি বলেন, আজ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আলোচনা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করতে প্রস্তুত নয়। এ সময় পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক তৎপরতা বাড়াতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবনে জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ ও দুর্ভাগ্যজনক। এ অঞ্চলের শোষিত জনগণের প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রয়েছে। আমি তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার একটি জাতীয় দায়িত্ব রয়েছে। আমি পাকিস্তান অখণ্ড রাখার জন্য জীবন দান করতে প্রস্তুত। তবে অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানি, রাজনীতিক, বিশেষজ্ঞ ও উপদেষ্টা এদিন পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন।

এর আগে ২৩ মার্চ রাত থেকে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলাগাড়ি, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ১০০ জন নিহত এবং ১০০০ জনের বেশি মানুষ আহত হন। শহরে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং অবাঙালিরা সম্মিলিতভাবে বাঙালিদের বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং হত্যা অভিযান চালায়। রংপুর হাসপাতালের সামনে ক্ষুব্ধ জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি সেনারা রংপুর সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় নিরস্ত্র মানুষের ওপর বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং বহু আহত হয়। তবে এদিন যশোরে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) হেডকোয়ার্টারে সিপাহিরা জয়বাংলা সে­াগান দেন এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে অভিবাদন জানান।

অন্যদিকে চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনারা নৌবন্দরের ১৭নং জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রায় ৫০ হাজার বীরবাঙালি তাদের ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে কিছু অস্ত্র নিজেরাই খালাস করে ১২টি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতা পথ রোধ করে। সেনাবাহিনী ব্যারিকেড দেওয়া জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে কমপক্ষে ২০০ শ্রমিক শহীদ হন। আর ঢাকার মিরপুরে অবাঙালিরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাঙালিদের বাড়িঘরের শীর্ষে ওড়ানো বাংলাদেশের পতাকা এবং কালো পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেয় এবং পাকিস্তানি পতাকা তোলে। রাতে বিহারিরা এখানে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

টিভি কেন্দ্রে প্রহরারত সৈন্যরা টিভিকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে সন্ধ্যা থেকে ঢাকা টিভির কর্মীরা সব ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার থেকে বিরত থাকেন। সাংবাদিকরা এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হয়রানিমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান। স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ নেতারা এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র গণবিপ্লবকে আরো জোরদার করার জন্য বাংলার জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!