• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিশ্ব মা দিবস


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৩, ২০১৮, ১২:১১ এএম
আজ বিশ্ব মা দিবস

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : সম্পদশালী দুই ছেলের বাড়ি বেশ বড় হলেও মায়ের জন্য জায়গার বেশ অভাব। তাই ছেলেরা ঢাকার আগারগাঁওয়ের হিতৈষী প্রবীণ নিবাসের ‘অনেক বড়’ এক কক্ষে রেখে যান বৃদ্ধা নার্গিস জাহানকে।

নচিকেতার বিখ্যাত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ গানের প্রতিটি কথাই যেন মিলে গেছে ছয় বছর ধরে আশ্রমে বাস করা নার্গিসের জীবনের সঙ্গে। ছেলের বউ চায় না শাশুড়ি আয়েশা বেগম তাদের বাসায় থাকুক। তাই নানা নির্যাতন সয়েও তিনি থাকতে পারেননি ছেলের সঙ্গে। গর্ভে ধারণ করা ছেলেই গত মাসের প্রথম দিকে তাকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ফেলে রেখে যায়। তিন ছেলের কেউই তার খবর রাখে না। বেঁচে থাকার জন্য স্টেশনে ভিক্ষা করেন এই বৃদ্ধা।

সন্তানের ঘরে ঠাঁইহীন এমন মায়ের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশি সমাজব্যবস্থায় বেমানান এসব বিষয় মোকাবেলায়ও নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ। এমন অবস্থায়ই প্রতিবছরের মতো আজ রোববার উদযাপিত হবে বিশ্ব  মা দিবস। বিশ্বায়ন, নগরায়ণ ও দারিদ্র্যের ধাক্কায় ভাঙছে যৌথ পরিবার। একক পরিবারে নার্গিস জাহান ও আয়েশা বেগমের মতো অসহায় মায়েদের সংখ্যা বাড়ছে। অসহায় মায়েদের একটা ক্ষুদ্র অংশের শেষ ঠিকানা হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম ও বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। অনেকের ঠাঁই হচ্ছে কোনো আত্মীয়ের বাড়ির পরিত্যক্ত স্থানে, রেলস্টেশন, বস্তি ও ফুটপাথে। জীবনবেলা শেষে নিরুপায় অনেক মাকে ভিক্ষা করে নিজের আহার জোগাতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। এরই সঙ্গে বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা। দেশে এখন এক কোটি ৬০ লাখ প্রবীণ রয়েছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৩৭ জন দরিদ্র। বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমের থাকাদের ৭০ শতাংশই নারী। ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের সংখ্যা দুই কোটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রবীণদের মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন মাত্র ৩৫ লাখ। তাও মাসিক ৫০০ টাকা।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা আরো চার লাখ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন ও আইনের ফলে বৃদ্ধাশ্রমে বাড়ছে প্রবীণ মায়ের সংখ্যা। গাজীপুর গিভেন্সি গ্রুপের বৃদ্ধাশ্রম, সাভার বৃদ্ধাশ্রম ও সমাজসেবা অধিদফতরের বৃদ্ধাশ্রমে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়।

সমাজসেবা অধিদফতরের বৃদ্ধাশ্রমের কয়েক মা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৃদ্ধাশ্রমে তারা ভালো নেই। অজস্র কষ্ট, যন্ত্রণা, নিপীড়ন, নির্যাতন ও অনটনের পরও সন্তানের কাছে থাকাই মায়ের জন্য সুখের। শেষ জীবনে মায়েরা চরম অবহেলার শিকার হচ্ছেন পরিবার ও স্বজনদের কাছে।

এক জরিপ মতে, প্রবীণ মায়েদের ৮৮ দশমিক ৪ ভাগ মানসিক নির্যাতন, ৮৩ দশমিক ৩ ভাগ অবহেলা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ৫৪ দশমিক ৪ ভাগ প্রবীণ নারী অর্থনৈতিক প্রবঞ্চনার শিকার। ২০১৩ সালে সরকার মা-বাবার ভরণ-পোষণ আইন প্রণয়ন করে। অসচেতনতা ও আইনটির যথাযথ প্রয়োগের অভাবে অবস্থার তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না।

অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে সামাজিক অবস্থা ও পারিবারিক কাঠামোতে যেসব পরিবর্তন আসছে, সেগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট সেবাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। দেশে প্রবীণদের জন্য সরকারি হাসপাতাল মাত্র একটি। বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসায় পাওয়ার বেলায় তারা চরম অবহেলিত।

জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক একেএম নুর-উন-নবী বলেন, ‘প্রবীণ নারী ও পুরুষদের সমাজের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে তারা একসময় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে মানবিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!