• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় রংপুরে


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর ব্যুরো মার্চ ২৪, ২০১৮, ১১:০২ এএম
এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় রংপুরে

রংপুর: বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেন ১৯৭১’র ২৬ মার্চ, আর পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ট্যাংক ডিভিশনের পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেনসহ তিন জওয়ানকে হত্যার মধ্য দিয়ে ২৪ মার্চই স্বাধীনতার যুদ্ধ আরম্ভ করে রংপুরের মানুষ।

তৎকালীন সময়ের সাতগাড়া ইউনিয়নের (বর্তমানে রংপুর সিটি কর্পোরেশন এর অন্তর্ভূক্ত এলাকা) দামোদরপুরের সাধারণ দিনমজুর ও অনাহারী জীর্ণশীর্ণ মানুষরা সেদিন যে সাহসিকতার পরিচয় দেখিয়েছিলেন তা এক গর্বের ইতিহাস। তাই ২৪ মার্চ, শুধু রংপুর নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন।

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ‘‘ভাতে মারবো, পানিতে মারবো’’। সেই কথাই যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে রংপুরের বীর জনতা। সেনানিবাসে সকল প্রকার খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সেনানিবাসে খাদ্য সংকট দেখা দেয়।

বাধ্য হয়ে ২৪ মার্চ সেনাবাহিনীর একটি জীপ সেনানিবাসের পশ্চিম দিকে দিয়ে বের হয়ে নিসবেতগঞ্জ হাটে উপস্থিত হয় খাদ্য (মুরগী ও ডিম) সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। সেনা সদস্যদের দেখে হতচকিত হয়ে যায় গ্রামবাসী। ওই জীপের ড্রাইভার ছিলেন একজন বাঙ্গালী। মুক্তির নেশায় মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ, কয়েকজন সিদ্ধান্ত নেন আক্রমণের, চলতে থাকে প্রস্তুতি।

এসব দেখে যুবক শাহেদ আলী (পেশায় কসাই) সাইকেল চেপে আগেই নিজ গ্রামে চলে যায়। দ্রুতই এই খবরটি ছড়িয়ে পরে সম্মানীপুর, দামোদরপুর, বড়বাড়ি, মনোহরপুর গ্রামের মানুষদের কাছে। শত শত গ্রামবাসী দা, বল্লম, কুড়াল, বটি, খুন্তিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাঁশের ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে জীপের জন্য।

অবশেষে জীপটি যখন দামোদরপুর বড় ময়দান এলাকায় আসে তখন যুবক শাহেদ আলী সামনে পা বাড়ায় তাদের গ্রামের আসার কারণ জানান জন্য। গাড়িতে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর ট্যাংক ডিভিশনের পাঞ্জাবী লেফটেন্যান্ট আব্বাসীসহ এলএমজি হাতে জীপে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিন জওয়ান। শাহেদের সাথে সাথে বাদশা, সালাম, রফিকুলসহ তিন চার জন যুবক গাড়ির কাছে যান।

পাক সেনারা কিছু বুঝে উঠার আগেই শাহেদ আলী জিপের বনেটে উঠে যায় এবং এক টানে ছিনিয়ে নেয় এলএমজি। ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছিল যে লেফটেন্যান্ট আব্বাসী হতভম্ব হয়ে যায়। এই সুযোগে শাহেদ আলী খাপ্পর (বল্লম টাইপের) দিয়ে আব্বাসীকে আঘাত করলে সে লুটিয়ে পরে। অপরদিকে বাদশা, সালাম, রফিকুল তাদের হাতে থাকা দা, কুড়াল, বল্লম দিয়ে আঘাত হানে তিন সেনা সদস্যের উপরে। তিনজনই তখন মৃত্যু পথযাত্রী।

গাড়ি চালক বাঙ্গালী হওয়ায় হাত বাড়িয়েছিলেন সহযোগিতার। তাই তাকে যেন সেনানিবাসের কেউ সন্দেহ না করে সে দা দিয়ে হালকা আঘাত করা হলো তার ওপর। আহত বাঙ্গালী ড্রাইভার নিসবেতগঞ্জ পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে আনে। ইতোমধ্যেই খবর পৌঁছে যায় ক্যান্টনমেন্টে।
আহতদের সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু জনতা হাসপাতালে পাক সেনাদের চিকিৎসার বিরোধিতা করলে পাকসেনারা গুলি চালায়। তাদের গুলিতে পৌর বাজার (বর্তমান সিটি বাজার) এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন। এই ঘটনায় আবারও উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের সমাধি রয়েছেন নগরীর হনুমান তলা কাজী নজরুল ইসলাম সরণীতে।

এদিকে সেনা সদস্য হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সেদিনই বিকাল বিকাল চারটার দিকে নগরীর গনেশপুর এলাকাকে ঘটনাস্থল ভেবে পুরো এলাকা জ্বালিয়ে দেয় পাক হানাদাররা। এর ঠিক চারদিন পর ২৮ মার্চ সাধারণ জনগণ তীর-ধনুক, বাঁশের লাঠি, দা, কুড়াল নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে আক্রমণ করে। সেদিন সবার মুখে ছিল গগণবিদারী স্লোগান ‘‘এসো ভাই অস্ত্র ধর, ক্যান্টনমেন্ট দখল কর’’।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!