• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

একাধিক ভাষা জানা মস্তিষ্কের জন্য ভালো


স্বাস্থ্য ডেস্ক আগস্ট ১৮, ২০১৬, ০৫:৩৮ পিএম
একাধিক ভাষা জানা মস্তিষ্কের জন্য ভালো

বিশ্বের অর্ধেক মানুষ অন্তত দুটি ভাষা জানেন। তবে বিভিন্ন জরিপে একাধিক ভাষা জানা মানুষের সংখ্যা ৬০-৭০% বলে উঠে এসেছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের দাপ্তরিক জাতীয় ভাষা ১১টি।

দুনিয়াব্যাপী লোকের মাঝে এখন অন্তত দুটি ভাষা- মাতৃভাষার পাশাপাশি আরেকটি বড় আন্তর্জাতিক ভাষা শেখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যেমন, ইংরেজি, চীনা, হিন্দি, স্প্যানিশ বা আরবি। ফলে একটিমাত্র ভাষা জানার অর্থ হলো আপনি ভাষাগতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক; শুধু দেশীয় ইংরেজিভাষী লোকেরা যেমন সংখ্যালঘু।

একাধিক ভাষা জানার অনেক সামাজিক, মনোজাগতিক এবং জীবন-যাপনগত সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গবেষকরা একাধিক ভাষা জানার অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধাও আবিষ্কার করছেন। যেমন ব্রেন স্ট্রোক থেকে দ্রুত সেরে ওঠা এবং স্মৃতিভ্রংশ রোগে দেরিতে আক্রান্ত হওয়া।

কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, বিশ্ব দ্রুত ভাষাগত বৈচিত্র্য হারাচ্ছে। বিশ্ব থেকে প্রতি ১৫ দিনে অন্তত একটি ভাষা বিলুপ্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি শতকের শেষদিকে গিয়ে বিশ্বের অর্ধেক ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যদি এমন হয় যে, একটা সময়ে গিয়ে পুরো পৃথিবীর মানুষ মাত্র একটি মাত্র ভাষাই ব্যবহার করছে তাহলে কী ঘটবে?

দু্ই লাখ ৫০ হাজার বছর আগে মানুষ প্রথম কোনো ভাষার শব্দ উচ্চারণ করেছে। যেদিন থেকে মানুষরা তাদের বুককে কোনো ভারবাহী কাজে ব্যবহার করা বন্ধ করেছে এবং দুই পায়ে হাঁটা শুরু করেছে সেদিন থেকেই মানুষ ভাষার ব্যবহার শুরু করেছে। আর এখন প্রতিবছর মানবসভ্যতা বছরে ৩০ থেকে ৫০টি ভাষা হারাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে ভাষার সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। কিন্তু বিশ্বের অর্ধেক মানুষ মাত্র ১০টি ভাষা ব্যবহার করেন। ফলে এমন একসময় আসবে যখন বিশ্বের প্রায় সব মানুষই হয়ত শুধু স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, মান্দারিন, ইংরেজি বা আরবি ভাষায় কথা বলবেন।

কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষ কোনো বিশেষ একটি ভাষায় কথা বললেও ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক ও জনগোষ্ঠীগত পার্থক্যের কারণে সেই ভাষার ভিন্ন ভিন্ন রুপ সৃষ্টি হবেই। যেমন ধরা যাক ইংরেজি ভাষার কথা। ব্রিটেনের রাজধানী খোদ লন্ডনেই অঞ্চলভেদে ইংরেজি ভাষার ব্যবহারে ভিন্নতা দেখা যায়।

আবার মানুষ চাইলে নতুন নতুন ভাষাও সৃষ্টি কর সম্ভব। সুতরাং সারা পৃথিবীতে একটিমাত্র ভাষার অস্তিত্ব থাকার কল্পনা আপাতত অবাস্তবই মনে হচ্ছে।

ভাষার বিবর্তনকে মানুষের দৈহিক বৈশিষ্ট্যসমুহের বিবর্তনের সঙ্গে তুলনা করা চলে। মানুষের জিনগত বা বংশগতির বিবর্তন ঘটে পরিবেশগত চাপে আর ভাষার বিবর্তন ঘটে সামাজিক চাপে। প্রথম দিককার

মানুষদের বিভিন্ন গোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতো। এরপর বাণিজ্য, ভ্রমণ ও অন্যান্য প্রয়োজনে কোনো বিশেষ পরিবার বা গোষ্ঠীকে অন্য মানবগোষ্ঠীর ভাষা শেখার প্রয়োজন দেখা দেয়। শিকার ও কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য খেয়ে জীবনধারণকারী অর্থাৎ যারা এখনও খাদ্য উৎপাদন করতে শেখেনি এমন মানবগোষ্ঠীগুলোই মূলত এখনও একটি মাত্র ভাষার ব্যবহার করে।

গবেষণায় দেখা গেছে একাধিক ভাষা জানার ফলে মানুষ দুটি ব্যক্তিত্ব এবং দুটি মনেরও অধিকারী হয় এবং ভাষা জীবন ও জগত সম্পর্কে লোকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতেও কাজ করে। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ইংরেজি ও জার্মান ভাষা দুজন ব্যক্তিকে কয়েকটি ভিডিও দেখানো হলে তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ভিডিওগুলোর বিবরণ দেন। ইংরেজি জানা লোকটি শুধু ভিডিওতে কী কর্ম সম্পাদন হচ্ছে তার বিবরণ

দানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন। অন্যদিকে জার্মান জানা লোকটি কর্মটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্যসহ বর্ণনা করছেন। যেমন ইংরেজি জানা লোকটি একটি ভিডিও দেখে বললেন, ‘একজন নারী হেঁটে যাচ্ছেন’। একই

ভিডিওর বর্ণনায় জার্মান জানা লোকটি বললেন, একজন নারী তার গাড়িটির দিকে হেঁটে যাচ্ছেন'। অর্থাৎ, জার্মান ভাষায় একটি কর্মের সার্বিক বা পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পাচ্ছে। আবার একই সঙ্গে ইংরেজি ও জার্মান ভাষা জানা একজন ব্যক্তি তিনি কোন দেশে অবস্থান করছেন সে অনুযায়ী তার ভাব প্রকাশ করেন; যে ভাষাই তিনি ব্যবহার করেন না কেন ভৌগলিক অবস্থানগত ভিন্নতার কারণে তার ভাব প্রকাশেও ভিন্নতা চলে আসছে।

তবে এক জাপানি-ইংরেজ নারীকে একটি বাক্য দুটি ভাষায় সম্পন্ন করতে বলা হলে তিনি একই সময় এবং ভৌগলিক অবস্থানে থেকেও বাক্যটি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সমাপ্ত করেন। যেমন তাকে বলা হয়, আমার ইচ্ছাগুলো যখন আমার পরিবারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়…' এই বাক্যটি তিনি জাপানি ভাষায় সম্পন্ন করেন এইভাবে, 'তখন আমার জন্য তা খুবই বেদনাদায়ক সময় হয়, কিন্তু ইংরেজিতে তিনি বাক্যটি সম্পন্ন

করেন এইভাবে, আমি যেটা চাই সেটাই করি। আরেকটি উদাহরণ, প্রকৃত বন্ধুদের উচিত…' জাপানি ভাষায় এর সমাপ্তি টানা হয় এভাবে, 'পরস্পরকে সহায়তা করা', আর ইংরেজি ভাষায় বাক্যটি সম্পন্ন করা হয়, 'প্রকৃত বন্ধুদের উচিত পরস্পরের সঙ্গে খোলামেলা হওয়া।

এ থেকে প্রমাণিত হয়, একাধিক ভাষা জানা লোকদের মধ্যে প্রতিটি ভাষার জন্য আলাদা আলাদা মনোভাব সৃষ্টি হয়। একাধিক ভাষা জানা অনেকে নিজেরাও স্বীকার করেছেন, তারা যখন ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলেন তখন নিজেদেরকে তাদের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বলেই অনুভুত হয়।

এমনকি একাধিক ভাষা জানা লোকেরা অবচেতনে বা নিজের অজান্তেই এক ভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে অন্য ভাষার শব্দ বা ব্যকরণের নিয়মও ব্যবহার করেন। এছাড়া একাধিক ভাষা জানা থাকলে কোনো বিষয়ে গভীর মনোযোগ দান, সমস্যার সমাধান এবং কোনো বিষয়ে ফোকাস ঠিক রাখা বা মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করাও সহজ হয়।

তবে একাধিক ভাষা জানা থাকার সবচেয়ে বড় উপকারিতা মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি অর্জনের মধ্যেই নিহিত। যেমন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকে বুদ্ধিবৈকল্য বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু একাধিক ভাষা জানা লোকরা একটি মাত্র ভাষায় কথা বলা লোকদের চেয়ে চার থেকে পাঁচ বছর পরে গিয়ে বুদ্ধি বৈকল্য বা স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত হন।

এর কারণ সম্ভবত একাধিক ভাষা জানা লোকদের মস্তিষ্কে স্বয়ংক্রিয় মেরামত প্রক্রিয়া এবং নির্বাহী পদ্ধতি শক্তিশালী হয়। এ ছাড়া তাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারও সমৃদ্ধ থাকে। যার ফলে একাধিক ভাষা জানা লোকরা মস্তিষ্কের কোনো ক্ষয় হলে তা সহজেই সারিয়ে তুলতে পারেন।

এমনকি মস্তিষ্কে কোনো জখমের পরে একাধিক ভাষা জানা থাকলে তা থেকেও সেরে ওঠা সহজ হয়। অর্থাৎ একাধিক ভাষা জানা থাকলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকাও সহজ হয়।(সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান)


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!