• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কী থাকছে বিএনপির সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৩০, ২০১৭, ০৬:২৮ পিএম
কী থাকছে বিএনপির সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে বিএনপি। বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকে সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান সরকারপ্রধানকে বাইরে রেখে অথবা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন এই সরকার গঠনের কথা বলা হবে এতে।

পাশাপাশি সংকট নিরসনে আলোচনার টেবিলে উপস্থাপনের জন্য আরো কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাবও তৈরি করে রাখছে দলটি। যার মধ্যে নির্বাচনকালে  প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করার কথাও বলা হবে। আসন্ন লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পর আগামী আগস্টে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে এ রূপরেখা ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।

দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, আগামী জুলাইয়ের মাঝামাঝি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তার চোখের চিকিৎসা করার কথা রয়েছে। এছাড়া সেখানে তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সপরিবারে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটানো ছাড়াও তারেক রহমানের সঙ্গে নির্বাচন ও নির্বাচনী এই রূপরেখা নিয়ে বিশদ আলোচনা করবেন।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য জানান, এই সহায়ক সরকার হবে তিন মাস মেয়াদের। রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনকালীন এই সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্রেট কোটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব থাকছে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করার প্রস্তাব থাকতে পারে এই রূপরেখায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি আরো জানান, তখন জাতীয় সংসদ বহাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রীও দায়িত্বে থাকবেন। এই রূপরেখায় নির্বাচনকালীন তিন মাস প্রধানমন্ত্রীর ছুটিতে থাকার প্রস্তাব থাকছে। যাতে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী স্বপদে বহাল থেকে ছুটিতে থাকার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের এই রূপরেখায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারে না রেখে নির্বাচনকালে দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হবে। তবে প্রধানের আসনে অন্য কাকে স্থলাভিষিক্ত করা হবে সে কথা সরাসরি উল্লেখ করা হবে না। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার, বিচারক ও আমলাসহ সর্বজনগ্রহণযোগ্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে পাঁচটি পদে নিয়োগের প্রস্তাব করা হবে। এ পাঁচজনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদ থেকে পাঁচজন সদস্যের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত সরকারের ক্যাবিনেট গঠনের প্রস্তাব করা হতে পারে। যারা নির্বাচনী যাবতীয় কার্যক্রমে ‘ওয়াচ-ডগ’-এর ভূমিকা পালন করবেন এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই সদস্যদের ভূমিকাই হবে মুখ্য। তাদের পরামর্শেই কাজ করতে বাধ্য হবে নির্বাচন কমিশন। এই কাঠামোয় নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধানের বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমেও সমঝোতার ভিত্তিতে প্রস্তাব করা হতে পারে।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে রেখে এবং তার নির্বাহী ক্ষমতা হ্রাস করে সরকার গঠনের প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে দিতে পারে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধিত বা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব রাখা হতে পারে। দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের পাশাপাশি বিএনপি যেসব বিকল্প প্রস্তাবের কথা চিন্তা করছে সেগুলো একসঙ্গে একই দিনে ঘোষণা করা হবে। নাকি পরবর্তীতে সরকারি দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জন্য রেখে দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অর্থই হলো নির্দলীয় লোকদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা। এই প্রক্রিয়ায় ১০ ভাগ টেকনোক্রেট কোটায় স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের এসব মন্ত্রনালয়ে নিয়োগ দিতে পারেন।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী তিন মাসের জন্য ছুটি নিতে পারেন। সংসদ তো বহাল থাকছেই। সমস্যা নেই। তখন রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। বিএনপির যে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা হচ্ছে তাতে এসব বিষয় থাকবে।

এছাড়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের কাঠামোতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত নির্বাচনকালীন সরকারের কথাও বিবেচনায় রাখা হতে পারে। যে সরকারে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দু’দফা সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এবার নির্বাচনকালীন এই নতুন সরকারের রূপরেখা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!