• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রাম: নদের পানিতে মরা মুরগির দুর্গন্ধ


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আগস্ট ১৫, ২০১৭, ০৮:১৯ পিএম
কুড়িগ্রাম: নদের পানিতে মরা মুরগির দুর্গন্ধ

ঢাকা: বন্যার পানির তোড়ে কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ভূবনেশ্বর এলাকায় সেতু ভেঙে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে লোকজন চলাচল করছে। মঙ্গলবার(১৫ আগস্ট) ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া এলাকায় দুধকুমার নদের পানি ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের ওপার থেকে নদের পানিতে দেশে ভেসে আসছে মরা মুরগি।

ফলে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে সারা দেশের। আর ভয়াবহ বন্যা দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ বানভাসি মানুষ। পানিতে ডুবে আরও ১০ জন মারা গেছেন। আশ্রয়কেন্দ্র ও সড়কে আশ্রয় নেয়া মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য, পানি ও ল্যাট্রিন সমস্যা। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় চেয়ারম্যানরা খাদ্যসহায়তা দিলেও তা অপ্রতুল। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ পানিবাহিত রোগ।

এদিকে ভারত থেকে বন্যার পানিতে ভেসে আসা মৃত্যু ব্রয়লার মুরগির বস্তা ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেকলী এলাকার পাটখেত, সুপারির বাগান ও বাড়ির আশপাশে জমে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল গফুর বলেন, ‘ভারত থেকে মরা মুরগির বস্তা ভেসে এসে আমাদের এলাকায় জমা হচ্ছে। দুর্গন্ধে এলাকায় পরিবেশ দূষিত করে তুলেছে। এগুলো দ্রুত সরানো প্রয়োজন।’ 

কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী-ফুলবাড়ী মহাসড়কে ধরলা নদীর স্রোতে চার স্থানে সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এই তিন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যায় ৪০৮ শতাধিক শেল্টার ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় ও খোলা স্থানে আশ্রিত পরিবারগুলো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ল্যাট্রিন সমস্যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। 

কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের ওপর থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সড়কে স্বল্প পরিসরে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। অপর দিকে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কের পাটেশ্বরী, মধ্যকুমরপুর ও নাগেশ্বরী পেট্রলপাম্পসহ চার স্থানে মহাসড়কের ওপর পানি প্রবাহিত হওয়ায় ও ভেঙে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমণ্ডল গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ২০ ফুট অংশ ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে গোটা উপজেলায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া, নাগদহ, আটিয়াবাড়ী, সুজনেরকুটি, রাবাইতারীসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের উত্তর কোদালকাটি, পাইকানটারী পাড়া, সাজাই, চর সাজাই, পাখিউড়া, কোদালকাটি, কারিগরপাড়া, শংকর মাধবপুর ও তেরোরশি পাড়ার সব বাড়িতেই পানি উঠেছে। তীব্র নদীভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে শংকর মাধবপুর গ্রাম। অধিকাংশ মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু জায়গায় ও বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর জানান।

এদিকে কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেলপথে টগরাইহাট নামক এলাকার বড়পুল ব্রিজের সেতুর গার্ডার ডুবে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সঙ্গে দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ কারণে বন্যা-পরবর্তী সময়ে রেলপথ চালু করা হুমকির মুখে পড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ৪২ হাজার ৩৯১ হেক্টর জমির বীজতলা, আমন ও শাকসবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিন দিন ধরে এসব ফসল নিমজ্জিত থাকায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কৃষকেরা আশঙ্কায় রয়েছেন।

জেলা ত্রাণ অফিস জানায়, জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের সংখ্যা ৬২টি, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের সংখ্যা ৮২০টি, পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৭৪৩টি, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪০৮টি, আশ্রয় নিয়েছে ২৫ হাজার ১৪টি পরিবার। পানিতে পড়ে ১০ জন নারী ও শিশু মারা গেছে। 

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেছেন, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ৬৫১ দশমিক ৩৮০ মেট্রিক টন চাল ও ১৭ লাখ টাকা বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। ঢাকা থেকে নতুন করে ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ঢাকায় ত্রাণ অধিদপ্তরে কথা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে চাহিদামাফিক ত্রাণসহায়তা আসবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/প্রতিনিধি/আতা

Wordbridge School
Link copied!