• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা-জিনপিং বৈঠকে পলাতক আসামি! তোলপাড়


আবু ইউসুফ অক্টোবর ১৬, ২০১৬, ০৯:৫৬ পিএম
খালেদা-জিনপিং বৈঠকে পলাতক আসামি! তোলপাড়

ঢাকা: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠক শেষে গাড়িতে উঠে বিদায় নিচ্ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। হোটেলের সামনে বিমানবন্দর সড়কে গাড়ি উঠামাত্রই ওই নেতার পাশে বসা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে জিনপিংয়ের আলাদা বা একান্ত কোনো বৈঠক হয়েছে কি না? জবাবে বিএনপির ওই নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘সেই পরিস্থিতি কি তোমরা রেখেছ?’ 

অর্থাৎ বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকায় সেই একান্ত বৈঠক হয়নি, এমনটাই বোঝাতে চান ওই নেতা।

ঘটনাটি গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলের। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে শিমুল বিশ্বাসের অংশগ্রহণ নিয়ে দুই দিন ধরে তোলপাড় চলছে বিএনপির গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও। 

চীনের প্রেসিডেন্টের সফর ঘিরে যেখানে পুরো ঢাকা শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। সেখানে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্য না হয়েও কি করে পুরো ৪০ মিনিট ওই বৈঠকে শিমুল বিশ্বাস বসে থাকতে পারলেন, এর হিসাব মেলাতে পারছেন না নেতারা। 

দলের এক নেতা জানান, আইনের চোখে শিমুল একজন পলাতক আসামি। তার নামে মামলা আছে ৪৭টি। এ সবের মধ্যে অন্তত ১০টিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরার উদ্যোগ নেয়নি একবারও। অথচ আদালতে হাজির হয়ে জামিন না নিলে বিএনপির অন্য নেতাদের বাসায় গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে থাকে পুলিশ। এভাবে তাদের চাপের মধ্যে রাখা হয়। বিএনপি নেতাদের মতে, রহস্যময় কারণে ওই ধরনের কোনো চাপ নেই শিমুল বিশ্বাসের ওপর।

শিমুল হয় খালেদা জিয়ার বাসায়, নয়তো অন্য কোথাও আত্মগোপনে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী এমনকি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে শুক্রবারের ওই বৈঠকে শিমুলের যোগদানের ঘটনা বিএনপি নেতারা সন্দেহের চোখে দেখছেন। কেউ কেউ বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন। 

অনেকে মনে করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সবুজ সংকেত ছাড়া এ ঘটনা কিছুতেই সম্ভব হতে পারে না। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে এ কথাও বলছেন যে খালেদা-জিনপিং বৈঠকের তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার জন্যই শিমুলকে আগে ভাগে বৈঠকস্থলে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। এ কারণে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে দেখেও না দেখার ভান করেছেন অথবা তাকে ঢুকতে সাহায্য করেছেন।

সব মিলিয়ে শনিবার (১৫ অক্টোবর) সারা দিনই বিএনপিসহ রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় ছিল ওই বৈঠকে শিমুলের যোগদানের ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে। বৈঠকের পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে খালেদাসহ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে শিমুল বিশ্বাসকেও বসে থাকতে দেখা যায়।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে দলীয় প্রতিনিধি ছাড়া কর্মকর্তা পর্যায়ের কারো উপস্থিতির এমন ঘটনা নজিরবিহীন।

কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের জন্য বিএনপির মোট সাত নেতার নাম ছিল আমাদের কাছে। কিন্তু বৈঠকের অনেক আগে থেকে শিমুল বিশ্বাস হোটেলে গিয়ে বসেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কীভাবে শিমুল বিশ্বাস ঢুকেছেন জানি না। এটি বুঝে নিতে হবে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য শ ম রেজাউল করিম বলেন, আইনের দৃষ্টিতে ফৌজদারি মামলায় পলাতক আসামিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করতে বাধ্য। পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার না করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এ ধরনের অপরাধী থাকা বা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশ্রয়ে থাকা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের জন্যও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বিষয়টি দায়িত্বে অবহেলা ও চাকরির শৃঙ্খলাবিধির আওতায়ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। দণ্ডবিধির ২২১ ও ২২২ ধারায় এই বিধান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালেদা জিয়া ও শি জিনপিংয়ের বৈঠকে উপস্থিত বিএনপি নেতারাও নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিষয়টি তাদের কাছেও খটকা লেগেছে। কারণ বৈঠকের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া তালিকায় শিমুল বিশ্বাসের নাম ছিল না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চীনাদের কাছে বিএনপি প্রতিনিধিদের নাম আমিই দিয়েছি; কিন্তু সেখানে শিমুল বিশ্বাসের নাম ছিল না। শিমুল কীভাবে সেখানে ঢুকেছেন তা আমার জানা নেই।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি বলতে পারব না শিমুল বিশ্বাস সেখানে কীভাবে ঢুকেছেন। আমি তা খেয়াল করিনি। তবে এটি ঠিক যে এ রকম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।’

খালেদা জিয়া ছাড়াও বৈঠকে যোগদানের জন্য নাম দেয়া হয়েছিল দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহউদ্দিন আহমেদ ও রিয়াজ রহমানের। যানজটে আটকা পড়ায় রিয়াজ রহমান সময়মতো বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। ফলে তার আসনটি খালি থাকে এবং ওই আসনে গিয়ে প্রথম সারিতেই বসে থাকেন শিমুল বিশ্বাস। 
প্রটোকলে না মিললেও গুলশান কার্যালয়ের ক্ষমতাবান ব্যক্তি শিমুল বিশ্বাসকে উপস্থিত বিএনপি নেতারা আসন ছাড়ার কথা বলতে পারেননি। অন্যদিকে চেয়ারপারসনও তাকে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি। 

এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি তাদের নয়, দলীয় চেয়ারপারসনের বলার কথা।

এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে দোভাষী ছাড়াও কখনো কখনো সাহায্যকারী হিসেবে অনেকের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হওয়ার পর প্রটোকল অনুযায়ী তাদের বেরিয়ে যেতে হয়। অথবা তারা বৈঠকস্থল থেকে অনেক দূরে বসে থাকেন। এ ধরনের বৈঠকে কর্মকর্তা পর্যায়ের কারো এভাবে বসে থাকার ঘটনা নজিরবিহীন বলে বিএনপি নেতারা জানান। তাদের মতে, এ ঘটনায় বিএনপির প্রতি চীনাদের আস্থা নষ্ট হবে।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!