• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার রূপরেখা, রাজনীতির আলোর দেখা!


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২০, ২০১৬, ০৯:২৬ পিএম
খালেদার রূপরেখা, রাজনীতির আলোর দেখা!

ঢাকা: নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনসহ কমিশনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব দেশের বর্তমান রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে- এমন মত নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

আর এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে আর কিছু না হোক অন্তত আলোচনার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। পাশাপাশি সরকারি দলের কাছ থেকেও এ ধরনের প্রস্তাবনার আহ্বান করছেন।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার প্রস্তাবনা ভালো মন্দ যাই হোক না কেন, এটা আলোচনার বিষয় হতে পারে। বিএনপির প্রস্তাবনা গ্রহণ করে সরকার আলোচনার পথ এগিয়ে নিয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হবে।

এর আগে শুক্রবার বিকেলে (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালী করতে ২০ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন।

প্রস্তাবনা বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলসহ দেশের সব নাগরিক সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করে। এর অন্যতম শর্ত একটি দলনিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। এটা গঠনের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া যে প্রস্তাবটা দিয়েছেন, সেটা অবশ্যই ইতিবাচক। প্রস্তাবে কমিশন গঠন ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি রূপরেখা দিয়েছেন।’

দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে সরকারের সাড়া দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করে ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘সরকারসহ সব দলেরই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এই প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে তিনি আলোচনার একটি পথ তৈরি করে দিয়েছেন। সরকারের উচিত এটাকে ধরে আরো সামনের দিয়ে এগিয়ে নেয়া।’

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি প্রস্তাবনা দিয়ে সরকারকে সুবিধা করে দিয়েছে। এটা শক্তিশালী কমিশন গঠনের শুভ সূচনা বলে আমার মনে হয়। ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, এটা একটা আলোচনার বিষয় হতে পারে। সরকার এটাকে ধরে আলোচনা করতে পারে বা তারা নিজেরাও আলাদা প্রস্তাব দিতে পারে। তাতে করে আলোচনার ক্ষেত্র বেরিয়ে আসতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে ড. তোফায়েল আরো বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে সর্বশেষ আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে একতরফাভাবে কিছু করতে গেলে তা আগের মতো বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। এজন্য সবাই আলোচনা করে মোটামুটি ঐকমত্যে এসে যদি কিছু এটা করা যায়, তাহলে আগামী নির্বাচনটা ভালো হবে।’

বিএনপির প্রস্তাবনা সম্পর্কে এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘তারা যেটা বলেছে, তার মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠন বাদে অন্যগুলো বিদ্যমান আইনেই রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, সার্চ কমিটি কীভাবে করবেন এবং কমিশনকে কতটুকু ক্ষমতা দেবেন, এটাই হচ্ছে আলোচনার বিষয়। মনে হয়, আলোচনা করলে এ বিষয়ে একটি জায়গায় যাওয়া সম্ভব হবে।’

সরকারি দলকে উদ্দেশ করে ড. তোফায়েল আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলি আর নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা বলি, এটা নিয়ে মাঠে-ময়দানে বক্তব্য না দিয়ে কংক্রিট আলোচনা হওয়া দরকার। সেটা নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে প্রকাশ্যে হতে পারে, বা গোপনেও হতে পারে। এমনকি তৃতীয় কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তির মধ্যস্থতায়ও হতে পারে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রস্তাবে যেসব কথা বলেছেন তার অনেকগুলোই নাগরিক সমাজ ও অন্যকিছু রাজনৈতিক দল থেকে আগেই বলা হয়েছে। এখন একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে তিনি এই প্রস্তাব দিয়েছেন। এটাকে আমরা ভালো উদ্যোগ বলতে পারি। আমরা সবাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমি আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে শক্তিশালী কমিশন গঠন করবে।’

সার্চ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে ড. বদিউল আলম বলেন, ‘আমরা চাই, একটি আইনি কাঠামোর মাধ্যমে বাছাই কমিটি হতে হবে। কারণ আমরা আগের বার দেখেছি দলীয় ব্যক্তিরা সার্চ কমিটির সদস্য হয়েছেন। আর তার মাধ্যমে যে কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে বিএনপির মতো বড় দলের কাছ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব আসাটা ইতিবাচক। তবে যোগ্য ও বিতর্কিত নন এমন প্রার্থীসহ কিছু বিষয়ে প্রস্তাবে এসেছে, তা বাছাই করা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে খুব সহজ হবে বলে আমার মনে হয় না, কারণ বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে এতো বেশি বিভক্ত যে, এখানে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া সত্যিকার অর্থেই অসম্ভব।’

সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘বিএনপি যে বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা কিন্তু সংবিধানে নেই। বর্তমান রকিব উদ্দিন কমিশন গঠনের আগে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে বিএনপি হয়তো বাছাই কমিটি গঠনের কথা বলেছে। এই ধরনের কমিটি গঠন ইতিবাচক হলেও এর অভিজ্ঞতা কিন্তু আমাদের ভালো নয়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত রকিব উদ্দিন কমিশন মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।’

বিএনপির আলোচনার প্রস্তাবকে ইতিবাচক উল্লেখ করে অধ্যাপক তারেক শামসুর বলেন, ‘বেগম জিয়া তার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটা বেশ ভালো। দেশের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি এটা বিবেচনায় নিতে পারেন। আর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যেসব প্রস্তাব বা নামগুলো উঠে আসবে, সেখান থেকে একটি শক্তিশালী কমিশন চলে আসতে পারে। আমি বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে বলব, আপনারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে নাম প্রস্তাব করেন। এর থেকে হয়তো কিছু কমন নামও চলে আসবে, সেটা রাষ্ট্রপতি বিবেচনায় নিতে পারবেন।’

একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ চরম সংকটের মধ্যে যাবে বলেও তিনি এ সময় মন্তব্য করেন।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল বিএনপির প্রস্তাবনায় ‘গ্রহণযোগ্য’ কিছু থাকলে সেটা বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দিলেও আলোচনায় বসার প্রস্তাবটি প্রকারান্তরে নাকচ করে দিয়েছে। খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পরপরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রতিক্রিয়ায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘প্রস্তাবনায় গ্রহণযোগ্য ও ভালো কিছু থাকলে সেটা অবশ্যই দেখা হবে।’ 

খালেদা জিয়ার সংলাপের প্রস্তাবকে হাস্যকর উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সংলাপের আহ্বানকে খালেদা জিয়া চরম অসম্মান দেখিয়েছেন। তার পুত্রবিয়োগের পর প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে গেলে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে সংলাপের সম্ভাবনাকে চিরদিনের জন্য রুদ্ধ করে দিয়েছেন। এ ধরনের প্রেসক্রিপশন দেয়ার আগে বেগম জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!