• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার সাজা হলেই পাল্টে যাবে বিএনপি!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৭, ২০১৮, ০৩:৫৬ পিএম
খালেদার সাজা হলেই পাল্টে যাবে বিএনপি!

ফাইল ছবি

ঢাকা: দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের তারিখ পড়ে যাওয়ায় বিএনপিতে চাপা অস্বস্তি চলছে। মামলার গতিপ্রকৃতি ও সরকারের কঠোর অবস্থান দলটির নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলেছে। রায় বিএনপি নেত্রীর পক্ষে যাবে বলে নেতারা বিভিন্ন ফোরামে বললেও ভেতরে ভেতরে তারাও আছেন টেনশনে। চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হবে-এমনটা খোদ খালেদা জিয়াও ভাবেননি। রায়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যাওয়ায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তার। 

চেয়ারপারসন, মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতাদের পূর্বনির্ধারিত সব কর্মসূচি এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি মায়ের কবর জিয়ারত করতে দিনাজপুরে যাওয়ার কর্মসূচিও বাতিল করেছেন খালেদা জিয়া।

বৈরী এই পরিস্থিতিতে গতরাতেও বিএনপিপ্রধান দলে তার একান্ত আস্থাভাজন রিজভী আহম্মেদ ও হাবীব উন নবী খান সোহেলসহ কয়েকজন নেতাকে বাসায় ডেকে এবং ফোনে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। রায়ের পরের করণীয় ঠিক করতে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন খালেদা জিয়া। 

এরই মধ্যে বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা হয়েছে। তিনি এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। এবার দলীয় প্রধানের সাজা হয়ে গেলে বিএনপির হাল কে ধরবেন এ নিয়ে নেতাকর্মীরা একেবারেই অন্ধকারে। তবে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে গতকাল কেন্দ্র থেকে রাজপথে নামার সর্বাক প্রস্তুতি রাখার বার্তা দেয়া হয়েছে।

দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিএনপি। পাশাপাশি মামলা নিয়ে আইনি লড়াই তো চলছেই। পরিকল্পনা ছিল নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসবে, নির্দলীয় সরকারের দাবিদাওয়াসহ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে তত সোচ্চার হবে দল। এদেশের নির্বাচনে যারা পর্দার আড়ালে ভূমিকা রাখেন তাদেরও বিভিন্ন দাবিদাওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। 

তবে গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন ধার্য হওয়ায় সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে গেছে বিএনপির। এ পরিস্থিতিতে দলীয় কার্যক্রমের রোডম্যাপ বদলে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন কয়েকজন নেতা। খালেদা জিয়ার শাস্তি হয়ে গেলে নির্বাচনের প্রস্তুতি বন্ধ করে একদফার আন্দোলনকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হতে পারে। এর বাইরে নতুন করে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে আজ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে।

খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (২০০৭ সাল) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই মামলায় বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়রি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায়ের দিন ধার্য করেন। এ সময় খালেদা জিয়া হাজির ছিলেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয় দণ্ডবিধির ৪০৯ (অর্থ আত্মসাৎ) অথবা ১০৯ (অপরাধে সহযোগিতা) এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায়। ৪০৯ ধারায় বর্ণিত অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আর দুদক আইনের ৫(২) ধারায় বর্ণিত অপরাধে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। সাজাপ্রাপ্তদের উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে। আপিল চুড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজা কার্যকর হবে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে থাকা মামলার কোনো মেরিট নেই। আমরা মনে করি তার সাজা হবে না। মামলাটি রাজনৈতিক আর রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাজা দেয়া হলে জনগণ ঘরে বসে থাকবে না। মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হলে গণতান্ত্রিক সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে জবাব দেয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে বিএনপির হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনো কারণ নেই। 

খালেদা জিয়ার সাজা হবে না বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, মামলায় খালাস হবে। মামলার স্বপক্ষে সঠিক একজন সাক্ষীও নেই। এরপরও সরকার-নিয়ন্ত্রিত আদালতের মাধ্যমে ‘কূটকৌশল’ প্রয়োগ করা হলে দেশের মানুষ সমুচিত জবাব দেবে। বিএনপি রাজপথ ও আদালত দুটোতেই সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। 

খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলের নেতৃত্ব প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সময়ই বলে দেয় কে নেতৃত্ব দেবে এবং কারা রাজপথে থাকবে। খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন বিএনপির প্রয়োজন নেই বলেও জানান এই নীতিনির্ধারক।

সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম (চট্টগ্রাম বিভাগ) বলেন, রাজনৈতিক ইচ্ছায় রায় দিলে আমরা রাজনৈতিকভাবেই তার মোকাবেলা করব। 

রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে পারি, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। ম্যাডামকে সাজা দেয়ার পথ বেছে নিলে পরিস্থিতি কী হবে সরকার তা জানে। 

খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার আওয়ামী ষড়যন্ত্র নস্যাতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাজার রায় হলে ঢাকা অচল করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ঢাকার সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!