• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলায় ভাষা আন্দোলন বরাবরই উপেক্ষিত


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮, ০১:০৪ পিএম
গ্রন্থমেলায় ভাষা আন্দোলন বরাবরই উপেক্ষিত

ঢাকা : হাজারখানেকের বেশি কবিতার বই, গল্প-উপন্যাস পাঁচশ’র বেশি। অন্যান্য বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কিন্তু যে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সেই আন্দোলনের ওপর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা হাতেগোনা। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত গ্রন্থমেলায় এ সংক্রান্ত বই এসেছে মাত্র ১৬টি।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকদের দাবি, নতুন প্রজন্মের কাছে একুশের চেতনা তুলে ধরার লক্ষ্যেই একুশের গ্রন্থমেলা। কিন্তু এ দীর্ঘ আয়োজনে ভাষা আন্দোলন বরাবরই উপেক্ষিত। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

গতকাল মেলার ২২তম দিন পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের ওপর বই এসেছে মাত্র ১৬টি। সেগুলো হচ্ছে- ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিকের প্রবন্ধ সঙ্কলন ‘ভাষা আন্দোলন : সংক্ষিপ্ত ভাষ্যে’ (কথাপ্রকাশ), শিশু-কিশোরদের জন্য গোলাম কুদ্দুছের ‘ভাষা আন্দোলন : সহজপাঠ’ (অন্যপ্রকাশ), ‘ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ’ (য়ারোয়া), ‘ভাষা আন্দোলন বায়ান্ন পূর্ব’ (নালন্দা), খোরশেদ শফিউল হাসানের ইতিহাসভিত্তিক বই ‘ভাষা সংগ্রামী নাঈমউদ্দীন আহমদ’ ও ‘একুশে ফেব্র“য়ারির ষাট বছর’ (বাংলা একাডেমি), রফিউর রাব্বির গবেষণা গ্রন্থ ‘নারায়ণগঞ্জের ভাষা আন্দোলন’ (সাহিত্যপ্রকাশ), গোলাম সারোয়ার মালেকের ‘আমাদের ভাষা শহীদ’ (বিভাস), আহমদ রফিকের ‘একুশের মুহূর্তগুলো’ (প্রথমা), এসএম শাওয়ান মনিরের ‘অনেক ঝড়ে অমর একুশ’ (সাহিত্যমালা), খান শাহিনের উপন্যাস ‘শিশির ভেজা একুশ’ (বাঁধন পাবলিকেশন্স), আবদুল্লাহ সিদ্দিকের কবিতার বই ‘একুশের স্মৃতি’ (সিসটেক পাবলিকেশন্স), মো. আসকর আলী ফকিরের কবিতার বই ‘রক্তে লেখা একুশে ফেব্র“য়ারি’ (নন্দিতা প্রকাশ), জহিরুল হক বাপ্পীর কিশোর উপন্যাস ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তি সংগ্রাম’ (নবরাগ প্রকাশনী), সাইফ আবেদীনের শিশুতোষ বই ‘ভাষা আন্দোলনের গল্প’ (রাবেয়া বুক হাউজ) ও মিজান রহমানের ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ (ভাষা প্রকাশ)।

বেশ কয়েকজন প্রকাশক জানিয়েছেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও পূর্বাপর নিয়ে যথাযথ পাণ্ডুলিপি ও পূর্ণাঙ্গ গবেষণার অভাবে বই প্রকাশ করতে পারছেন না তারা।

ভাষা আন্দোলনের বই প্রকাশে প্রকাশকদের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভাষা সংগ্রামী, গবেষক-প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক বলেন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ যথাযথভাবে না হওয়া ভাষার বই প্রকাশে প্রধান প্রতিবন্ধকতা।

তার মন্তব্য, যে চেতনায় বাংলা ভাষার দাবি সেদিন পূরণ হয়েছিল, সেই চেতনা বাঙালি পুরোপুরি ধারণ করছে না। সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্বায়নের প্রভাব, অথবা সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব- কারণ যাই হোক, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগ হচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার একুশে গ্রন্থমেলার লোকসমাগমে প্রকাশকরা খুশি। তাদের আশা, বাকি ছয়দিন পাঠক-ক্রেতার ভিড় থাকবে।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, গতকাল গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ১০৩টি। কবিতা ৩৮টি, গল্প ২১টি, উপন্যাস ৪টি, প্রবন্ধ ৫টি ও অন্যান্য বিষয়ের ৩৫টি।

এর মধ্যে হাসান হাফিজের গল্পগ্রন্থ ‘একুশের গল্প’ (অনন্যা), রকিব হাসানের কিশোর গোয়েন্দা ‘তিন কন্যা নীল নোটবুক’ (অনন্যা), ফরিদুর রেজা সাগরের কিশোর সাহিত্য ‘কিশোর সমগ্র ১৩’ (সময় প্রকাশন), শিশির ভট্টাচার্যের প্রবন্ধ ‘সমাজ সংস্কৃতি শিল্পকলা’ (আগামী প্রকাশনী), ধ্রুব এষের গল্পগ্রন্থ ‘জারুল গাছের বন্ধুরা’ (ছায়াবীথি) ও আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘কিশোর উপন্যাস সমগ্র-৩’ অন্যতম।

আজকের অনুষ্ঠান : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে রয়েছে ‘শওকত আলীর সাহিত্যসাধনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনা করবেন সিদ্দিকা ও তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এদিকে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন শেষ হচ্ছে আজ। এ উপলক্ষে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে ‘দক্ষিণ এশিয়ার কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা পর্ব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক কায়সার হক। আলোচনায় অংশ নেবেন নেপালের লেখক আভি সুবেদি, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন ও সাদাফ সায্।

এছাড়া দুপুর ১২টায় ‘দক্ষিণ এশিয়ার ভাষা এবং অনুবাদ’ শীর্ষক সমাপনী আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখবেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। আলোচনায় অংশ নেবেন রাশিদ আসকারী, ফায়েজা হাসানাত ও জিএইচ হাবীব।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!