• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চাকমা ও হাজং শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিচেছ ভারত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭, ১০:৪৪ পিএম
চাকমা ও হাজং শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিচেছ ভারত

ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরে ভারতে শরণার্থী হিসেবে থাকা চাকমা ও হাজং জাতিগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। এ বিষয়ে ভারত সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব দ্রুত তা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর করা হবে বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বৈঠকের পরে জানিয়েছে।

আদালতের রায়ে বারবার পেছানোর পর অবশেষে ভারতের অরুনাচল প্রদেশে বসবাসরত চাকমা ও হাজং জাতিগোষ্ঠীর কয়েক হাজার সদস্যকে নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

তবে বৈঠকে উপস্থিতি অরুনাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু স্বাভাবিকভাবেই এই নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তার রাজ্যে চাকমা ও হাজং সম্প্রদায়ের হাজার হাজার সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

খান্ডু বলেন, চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব দেয়া হলে অরুণাচলের জনসংখ্যাগত চিত্র বদলে যাবে। এতে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় জনগণ বাস্তচ্যুত এবং অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।

তবে, বৈঠকে বলা হয় যে সরকার সুপ্রিম কোর্টের নিদেশ মানতে বাধ্য। চাকমাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হলেও তাদেরকে ভূমির অধিকার দেয়া হবে না। তারা এখন যেখানে আছে সেখানেই থেকে যাবে। অন্য রাজ্যে যাওয়া ও কাজ করার জন্য তাদেরকে ইনার লাইন পারমিট দেয়া হবে।

১৯৭০’র দশকে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান থেকে চাকমা ও হাজংরা ভারতে পালিয়ে যায়। ভারত সরকার তখন তাদেরকে অরুনাচল প্রদেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেয়। তখন এই প্রদেশের নাম ছিলো নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এজেন্সি (এনইএফএ)। এদের কিছু কিছু মিজোরাম, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে বসতি স্থাপন করে। এরপর অর্ধ শতাব্দিকাল পেরিয়ে গেছে। তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি।

ফলে তারা রেশন থেকে শুরু করে সবধরনের মানবিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো। মূল বসতিস্থাপনকারীদের খুব কম সংখ্যকই এখন বেঁচে আছেন। বর্তমানে এই জনগোষ্ঠীগুলো বলতে গেলে সব সদস্যের জন্ম ভারতে। ফলে তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু সরকার বার বার তাদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দানের বিরোধিতা করেছে।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ভারত সরকার চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব দিতে রাজি হয়। কিন্তু অরুণাচল প্রদেশের সরকারের বিরোধিতায় ওই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। এ নিয়ে গত কয়েক দশকে বহু মামলা হয়েছে। এসব মামলা গৌহাটি হাইকোর্ট থেকে দিল্লি সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। প্রতিটি আদালতেই চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব প্রদানের পক্ষে রায় হয়েছে।

কিন্তু এতদিন সরকার এই রায় বাস্তবায়ন আটকে রাখে। অধিকার গ্রুপ ‘কমিটি ফর সিটিজেনশিপ রাইট অব চাকমাস (সিসিআরসি)’ এক আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ জারির দু’বছর পর ভারত সরকার এখন চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।

১৯৬৪ সাল থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে চাকমা ও হাজংরা বসবাস করছে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল থেকে চাকমারা পালিয়ে আসে। এদের কিছু বাস্তচ্যুত হয় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে। হাজংরা ভারতে আসে ময়মনসিংহ এলাকা থেকে।

এরা উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তবে, বেশিরভাগ আশ্রয় নেয় অরুনাচল প্রদেশে। চাকমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, আর হাজংরা হিন্দু। অরুনাচল রাজ্য সরকারের হিসেবে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার চাকমা ও হাজং সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলো। বর্তমানে এদের সংখ্যা শতগুণ বেড়েছে।

অরুনাচলের রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিরোধিতা করেছে। ফলে, বিষয়টি এতদিন ঝুলেছিলো। কেন্দ্রিয় সরকারের মধ্যেও বিভিন্ন মত ছিলো, ছিলো রাজ্য সরকারের মধ্যেও।

বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য দু’জায়গাতেই মোদি’র বিজেপি ক্ষমতায়। আর সে কারণেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন সহজতর হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!