• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
কাদেরের পরিকল্পনা

ছয় মাসের অস্ত্র প্রশিক্ষণের পর লিটন হত্যা


জেলা প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭, ০৯:১৯ পিএম
ছয় মাসের অস্ত্র প্রশিক্ষণের পর লিটন হত্যা

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মনজুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বছর খানেক আগে থেকেই। এরপর খুনিদের বাছাই করা হয়। তাদের আবার ছয় মাস ধরে দেয়া হয় অস্ত্র প্রশিক্ষণ। যেন নিখুঁতভাবে কাজটা করতে পারে তারা। শেষ অবধি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় চারজন।

গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে শাহবাজ (মাস্টারপাড়া) এলাকায় এমপির নিজ ঘরে ঢুকে সেই খুনিরা পর পর গুলি করে হত্যা করে এমপি লিটনকে।

এ ঘটনায় এমপির বোন তাহমিদা বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে পরদিন ১ জানুয়ারি সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর চাঞ্চল্যসৃষ্টিকারী এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব বিভাগ।

অবশেষে হত্যাকাণ্ডের ৫২ দিন পর এমপি হত্যায় জড়িত সন্দেহে আটক হন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক এমপি ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য দাবিদার কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বগুড়া জেলা শহরের কাদের খানের পরিচালিত গরীব শাহ ক্লিনিক থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে বগুড়া থেকে তাকে পুলিশভ্যানে করে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) লিটন হত্যা মামলায় সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেছেন আদালত। গাইবান্ধার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মইনুল হাসান ওই আদেশ দেন।

এদিকে, বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডে কাদের খান জড়িত থাকার কথা তুলে ধরেন।

ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কর্নেল কাদের খান শুধু এমপি লিটনকে হত্যা নয়, উপনির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকেও হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, মূলত এমপি লিটন ও শামীম হায়দারকে সরিয়ে দিতে পারলে তিনি সুন্দরগঞ্জে আবারও এমপি নির্বাচিত হবেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার ইচ্ছা ও লোভ থেকেই এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আরো বলেন, লিটন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ নানা দিক নিয়ে তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে আসছিল পুলিশ। এ সময় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবহার করা গুলি ও ম্যাগজিনের সূত্র ধরেই কাদের খানকে চিহ্নিত করা হয়। হত্যাকাণ্ডে যে অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয় তারও প্রমাণ মিলেছে কাদের খানের ব্যবহার করা অস্ত্র থেকেই। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরো কোনো পরিকল্পনাকারী বা হত্যার সঙ্গে জড়িত আছে কি না তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

এ সময় পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম (বিপিএম, সেবা), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহম্মেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদা জাহান স্মৃতি, বোন তাহমিদা বুলবুল কাকুলীসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এমপি লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদা জাহান স্মৃতি ও বোন তাহমিদা কাকুলী বুলবুল বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করায় প্রধানমন্ত্রীসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে মামলায় আসামিদের সর্ব্বোচ শাস্তি দাবি করেন।

অপরদিকে, আদালত পুলিশের এসআই শাহ আলম জানান, বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে পুলিশ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

 বগুড়া শহরে কর্নেল (অব.) কাদের খানের বাড়ি

পুলিশ দাবি করছে, লিটনকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতা সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান। লিটনকে হত্যার জন্য এক বছর ধরে নানাভাবে পরিকল্পনা করে আসছিলেন। গত ছয় মাস ধরে তিনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া ৪ ‍খুনিকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কর্নেল কাদের খানের গাড়িচালক আবদুল হান্নান হত্যাকাণ্ডে কিলারদের পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করেন। হত্যাকাণ্ডে তার ভাতিজা শাহীন মিয়া ও কেয়ারটেকার মেহেদীসহ চারজন অংশ নেন। এর মধ্যে রানা নামে একজন পলাতক রয়েছেন। তাকেও গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে পুলিশ।

এদের মধ্যে হান্নান, মেহেদী ও শাহীনকে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে গ্রেপ্তার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হয়। পরে তারা আদালতের বিচারক মইনুল হাসান ইউসুফের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান জানান, লিটন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত-শিবির, বিএনপির নেতাকর্মীসহ অন্যদের মধ্য থেকে অন্তত ১২৮ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটকদের মধ্যে থেকে ২৩ জনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবীব মাসুদ, জামায়াতের অর্থের জোগানদাতা হাজী ফরিদ উদ্দিন, শিবির ক্যাডার আশরাফুল ইসলাম, জহিরুল ইসলামসহ ১৪ জনকে রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

প্রসঙ্গত, এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় গ্রেপ্তার কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খান গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি। তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপরহাটি (খানপাড়া) গ্রামের মৃত নয়ন খানের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে বগুড়া জেলা শহরের গরিব শাহ ক্লিনিকের চারতলা ভবনের ওপরতলায় বসবাস করতেন।

সোনালীনিউজডটকম

Wordbridge School
Link copied!