তাদের পালাবার সময় হয়ে গেছে: খালেদা জিয়া

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। নির্বাচনে আমরা যেতেও চাই। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।’

প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘হাসিনার অধীনে এতদিন যতগুলো নির্বাচন দেখেছি সেগুলো সুষ্ঠু হয়নি। তাদের দলের সেক্রেটারি জেনারেলের (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যে তা জাতির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চট্টগ্রামে দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘একটা দলের সেক্রেটারি জেনারেল যা বলে তা থেকে বুঝে নেয়া যায়; তিনি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন না। আর এমনি এমনি তো বলেছেন না। তাই তাদের পালাবার সময় হয়ে গেছে। তাই তারা সম্পদ গুটাতে ব্যস্ত।’

বিএনপি প্রধান এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘তারা পালাবার জন্য তৈরি হোক আর আমরা জনগণের জন্য, দেশ রক্ষার জন্য, অধিকার রক্ষায় তৈরি হই। সেভাবেই তৈরি হতে হবে।’

মঙ্গলবার (২ মে) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন খালেদা জিয়া।

পয়লা মে শ্রমিক দিবস ও ২ মে শ্রমিক দলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান শেষে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অনেকেই পাশ থেকে আমাদের বলে দেয়, আপনারা কেন বসে আছেন? আপনারা কিছু একটা করেন। এই অবস্থা থেকে আমাদের রক্ষা করেন।’

কিছু করার সময় হয়নি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমেই দেশের মানুষের যে অধিকার তা আমরা ফিরিয়ে আনবো। সেই অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন সংগঠন। ইতোমধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে আমাদের মূল দল হয়েছে। অন্যান্য সংগঠনগুলোও পুনর্গঠিত হয়েছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদল হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় দল সংগঠিত হচ্ছে। মহানগর পুনর্গঠিত হয়েছে।’

ক্ষমতাসীন দলকে উদ্দেশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘পুলিশের সহায়তায় তারা সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করছে। ভাবছে পুলিশ দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। সে জন্যই তারা বলতে চায়, ‍আগামী নির্বাচনে যদি আমরা (আওয়ামী লীগ) কোনোভাবে না আসতে পারি তাহলে খারাপভাবে যে পয়সা বানিয়েছি তা কিন্তু রক্ষা হবে 
না।’

উপস্থিত সাংবদিকদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে বুঝতে পারছেন দেশের মানুষের মধ্যে তাদের অবস্থান নেই?’

এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘সেই জন্যই আমরা বারবার বলেছি এদের অধীনে কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। যতগুলো নির্বাচন হয়ে গেছে, যেমন কুমিল্লা নির্বাচন হয়ে গেল, সেখানে আমরা জিততাম ৫০ হাজার ভোটে। অথচ সেখানে জিততে হয়েছে ১০ হাজার ভোটে। কত রকম চুরি করা হয়েছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, যতই  আমাদের সংগঠগুলো শক্তিশালী হবে ততই লুটেরাদের ভয় বাড়বে। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘লুটেরাদের জনগণ ভোট দেবে না। ৫ জানুয়ারি ১৫৪টি আসন চুরি করে নিয়েছিল। এবার সেটাও সম্ভব হবে না।’

আওয়ামী লীগ মানুষকে মানুষ মনে করে না- উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলে, তারা মনে করে পুলিশ বাহিনী আছে। তাদের দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারব। গুম, হত্যা, খুন ১০ বছর ধরে করছে। এগুলো প্রতিটির হিসেবে আছে। যারা আপনজন হারিয়েছে তাদের এসব মনে আছে।’

শ্রমিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘সকলকে সাথে নিয়ে, দরকারে হলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে হবে। শুধু ঢাকাতে নয় সারাদেশে শ্রমিক দলকে সুসংগঠিত করতে হবে।’

এসময় আরো বক্তব্য দেন– বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীল, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম, শ্রমিক দল নেতা সালাহ উদ্দিন সরকার, আবুল খায়ের খাজা, মো. আবুল হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কাজী আমীর খসরু, মহানগর উত্তরের সভাপতি জুলফিকার মতিন, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম বাদল, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম রাজা প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/এন