• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় মুক্তামণি


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মে ২৩, ২০১৮, ০৩:৪৬ পিএম
দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় মুক্তামণি

সাতক্ষীরা: রক্তনালীতে টিউমার আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামণিকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না। জীবনযুদ্ধে হেরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন ১২ বছরের মায়াবি চেহারার এ শিশুটি। বুধবার (২৩ মে) সকালে সাতক্ষীরার তার নিজ গ্রামের বাড়িতে ইন্তেকাল করে সে।

এরপর জোহর নামাজের পর বেলা আড়াইটায় দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের জামে মসজিদের পাশ্ববর্তী মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুম দাদার কবরের পাশেই মুক্তামণিকে দাফন করা হয়। তার জানাজায় এলাকার শত শত মানুষ শরীক হন।

মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, বুধবার সকাল ৭টা ২৮ মিনিটের সময় তারা বুঝতে পারে মুক্তামণি না ফেরার দেশে চলে গেছে। মৃত্যুর কিছু আগে মুক্তামণি পানি খেতে চায়। পানি খাওয়ানোর কিছু পরেই সে মৃত্যুরকোলে ঢলে পড়ে।

বাবা ইব্রাহিম আরও বলেন, মুক্তামণির ডান হাতের অবস্থা খারাপ দেখে ১৫ দিন আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটের প্রধান ডা.সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় তিনি মুক্তামণির দুটি ছবি পাঠানোর কথা বলেন। ছবি দেখে তার হাতের অবস্থা খারাপ বলে জানান ডা. শারমিন সুমি। এরপর গত বুধবার সামন্ত লাল সেন ফোন করে মুক্তামণির খোঁজ খবর নিয়ে রোজার পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

মুক্তামণির মা আসমা খাতুন জানান, সকালে মুক্তামণি তাকে কাছে ডাকেন। তার ভালো লাগছে না বলে জানায়। সাতটা ২৫ মিনিটের দিকে সে পানি চায় তার কাছে। এরপর পানি পান করার কিছুক্ষণ পরেই তার সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

মুক্তামণির মৃত্যুর খবর পেয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. তওহীদুর রহমান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু তার বাড়িতে যান। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে ছুটে যান।

সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রাম। ওই গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেনের দুই যমজ মেয়ে হীরামনি ও মুক্তামনি। জন্মের দেড় বছর পর থেকে মুক্তামনির প্রথমে ডান হাতে ছোট একটি টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তা ফুলে কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। মুক্তামনি বিছানায় বন্দী হয়ে পড়ে। হাতে শুরু হয় পঁচন।

গত বছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুক্তামণির বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রচার হয়। এক পর্যায়ে মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় মুক্তামণিকে। সেখানে টানা ছয় মাসের চিকিৎসায় খানিকটা উন্নতি হওয়ায় ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মুক্তামণিকে তার গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয়। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে আসার পর থেকে তার অবস্থা ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। তার দেহে নতুন করে পঁচন ধরে। ক্ষতস্থানে বড় বড় পোকা জন্মায়। এমনকি রক্তও ঝরতে থাকে। তার হাত-পা সরু হতে শুরু করে। দিনে একবার করে তার হাতে ড্রেসিং করা হতো।

গত বছরের ১২ আগস্ট তার হাতে অস্ত্রোপচার হয়। তার ডান হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ করেন চিকিৎসকেরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দুই দফায় তার হাতে লাগানো হয়। তবে সাময়িকভাবে হাতের ফোলা কমলেও তা সম্প্রতি আগের চেয়েও বেশি ফুলে গিয়েছিল। রক্ত জমতে থাকে ফোলা জায়গায়। আর ড্রেসিং করতে কয়েক দিন দেরি হলেই হাত থেকে দুর্গন্ধ বের হতো। আগের মতো হাতটিতে পোকাও দেখা যায়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!