• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দু’মুঠো ভাত জোটেনা বীরাঙ্গনা দুই বোনের


ফয়সল বিন ইসলাম নয়ন ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭, ০৪:২৫ পিএম
দু’মুঠো ভাত জোটেনা বীরাঙ্গনা দুই বোনের

ভোলা: তজুমদ্দিনে একই পরিবারের দুই বীরাঙ্গানার সন্ধান পাওয়া গেছে দেশ স্বাধীনের প্রায় ৪৫ বছর পার। এতোদিন তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। আর প্রশাসন বলছে এখনো এ তথ্য জানে না তারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা বলছেন প্রয়োজনীয় সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তারা।

ভোলা শহর থেকে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দূরে তজুমদ্দিন উপজেলার চাদপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল শশীগঞ্জ গ্রাম। সেই গ্রামের আব্দুল মজিদ পাটোয়ারীর বাড়িতে বসবাস করছেন বীরঙ্গানা দুই বোনের মধ্যে ছোট বোন মো. রেজাউল হকের স্ত্রী বিবি মালেকা। 

যুদ্ধের ওই সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর। অন্তঃসত্ত্বা বড় বোন বিবি ফাতেমার সেবা করতেই সেনাবাহিনীর হাবিলদার আব্দুল মান্নানের কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের বাসায় যান।
 
তখনো বুঝতে পারেনি কি আছে তার জীবনে। বিবি মালেকা বলেন, যুদ্ধ শুরুতে পরের দিন ২৫ বৈশাখ সকাল ৭টায় পাকিস্তানী অভিযান চালায় তাদের ঘরে। 

খাটের নিচ আর বাথরুমের লুকিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সেনাবাহিনীর হাবিলদার আব্দুল মান্নানকে ঘরের বাহিরে নিয়ে পাখির মত গুলি করে হত্যার পর বাথরুমেই চলে দুই বোনের ওপর একসাথে অত্যাচার সেখানেই শেষ নয়। 

ধরে নিয়ে যাওয়ার হয় কুমিল্লা ইস্পাহানী কলেজে। সেখানে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে চলে দীর্ঘ ৯ মাসের অত্যাচার আর নির্যাতন। পানি পর্যন্ত খেতে দেয়া হত না। এক পর্যায়ে বড় বোন বিবি ফাতেমা জন্ম দিলো পুত্র সন্তান জাহাঙ্গীরকে। 

দেশ স্বাধীন হলে ৯মাস পর মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে উদ্ধার করে পাক বাহিনীর সেই নির্যাতনের সেল থেকে। স্বাধীনের পর ৫শ’ টাকা নিয়ে তারা দেশের বাড়ি ভোলার তজুমদ্দিনে চলে আসেন। সেই বীরাঙ্গনা দুই বোনের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। 

ছোট বোন অন্যের সহযোগিতায় হাটতে পারলেও বড় বোন ফাতেমা বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। বেঁচে থাকার জন্য দু’মুঠো ভাত জোটে না ঠিকমত। তার ওপর শরীরে রয়েছে নানা ধরনের রোগ-বালাই। ভাতই জোটে না তার মধ্যে আবার ওষুধ কেনা। 

তাইতো চরম ক্ষোভ নিয়ে বিবি ফাতেমা বললেন, আমরা দেশের জন্য কিছুই কি করিনি। দেশের জন্য অত্যাচারিত হলাম। দেশ স্বাধীন হইলো আমাগো খোঁজ কেউ নেয়নি। সরকার কোন কেয়ার নেয় না। আমার সন্তানরা খুব কষ্টে আছে। 

আমরা রক্ত আমরা দেই নেই ঠিক। কিন্তু যৌবন শেষ করেছিলাম। কি পাইছি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি টাকা চেয়েছে, টাকা দিয়েছি। তার পরেও সাহায্য পাইনি। স্বাধীনতার প্রায় ৪৫ বছর হলেও পাইনি কোনো স্বীকৃতি।

এদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বীরাঙ্গনা বোন তজুমদ্দিনে আছে। এজন্য গর্ববোধ করি। দেশের স্বাধীনতার জন্য পাক হানাদার বাহিনী কাছে নিজেদের সম্মান বির্সজন দিয়েছেন। তাই আমরা যাতে দুই বোনকে স্বীকৃতি এনে দিতে পারি তার জন্য জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাজ করবে। 

এ ব্যাপারে ভোলা জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, এটা সত্যি যে আমি এখনো শুনিনি। কয়েক জনের কাছ থেকে শুনলেও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য আমার কাছে নেই, কারণ আমি ভোলা জেলায় নতুন এসেছি। তবে খোঁজ খবর নিয়ে আমি তাদের ব্যাপারে যা যা করা দরকার তাই আমি করবো। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!