• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে কি ভয়ঙ্কর ভুমিকম্প আসন্ন?


আন্তর্জাতিক ডেস্ক  জানুয়ারি ৩, ২০১৭, ০৮:৫০ পিএম
দেশে কি ভয়ঙ্কর ভুমিকম্প আসন্ন?

ঢাকা: বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা না হলেও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিগত কয়েক দশক ধরে এখানে ভূমিকম্প সংঘটনের হার বেড়েছে। সে কারণে আশঙ্কাও বাড়ছে। ঘরবাড়ি ও স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মাত্রাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শহর হলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বসবাসের অনুপোযোগী হিসেবে বিশ্ব তালিকায় স্থান পেয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের দূষণ ছাড়াও জনসংখ্যার আধিক্য, সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মতো ভৌগলিক সমস্যা দেখা দিয়েছে এখানে। তবে এতোকিছুর পরেও সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের কয়েকশ বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৫৪৮ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল সিলেট ও চট্টগ্রাম। এতে ভূমিতে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়। ভূগর্ভ থেকে কাদামাটি ও বিষাক্ত পানি ছিটকে বের হয়ে আসে। এরপরমিঠাপানির সঙ্গে মিশে যায় সালফারের গন্ধ। এরপর ১৬৪২ সালে সিলেট ও ১৬৬৩ সালে আসামে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকল্প ছিল ভয়াবহতম।

এ অঞ্চলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহতম ভূমিকম্প আঘাত হানে ১৭৬২ সালের ২ এপ্রিল। এদিনে চট্টগ্রামের ১৫৫ দশমিক ৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা তলিয়ে যায় সমুদ্রে। ঢাকা অঞ্চলে প্রাণহারায় অর্ধসহস্রাধিক মানুষ। নদ-নদী, খালবিলের পানির উপচে তীরবর্তী শহরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতে দেখা যায় মাছ, গবাদী পশু আর মানুষের লাশ। এ ভূমিকম্পের কারণে জ্বালাময়ী রূপ নেয় সীতাকুন্ডের পাহাড়ের দুটি আগ্নেয়গিরি।

পরবর্তী দুশ বছর ধরেই নানা সময়ে ভয়াবহ সব ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ১৭৭৫, ১৮১২, ১৮৬৫, ১৮৬৯, ১৮৮৫ এবং ১৮৮৯ সালে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পের থাবায় সিলেট অঞ্চলে ৫৫৪ জন প্রাণহারায়। সে সময় বিভিন্ন সরকারি অফিস ভবন, জমিদার বাড়ি ধসে পড়ে। এতে ৫ লাখ রুপির (তৎকালীন হিসেব) সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এরপর উনিশ থেকে বিংশ শাতব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নানা মাত্রার ভূমিকম্পের তথ্য পাওয়া গেলেও ক্ষয়-ক্ষতির হিসেব পাওয়া যায়নি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, শত বছর পর পর ভয়াবহ সব ভূমিকম্প সংঘটন হলেও বিগত একশ বছরে ব্যাপক প্রাণহানিকর ভূমিকম্প অনুভূত হয়নি। এ কারণে গবেষকদের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে- তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে প্রাণহানিকর কোনো ভূমিকম্প আসছে?

ঝুঁকিপূর্ণ জোন

সূত্রমতে, এ অঞ্চলের বেশিরভাগ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে দেখতে পাই সিলেট ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যকে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এ এলাকাটি ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেট, ইউরোএশিয়ান প্লেট এবং বার্মিজ টেকটনিক প্লেটের সংযোগ স্থল। এ প্লেটগুলো যখন নড়চড়া করে ও একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায় তখনি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাছাড়া ভূকম্পনের আরো যে কয়টি কারণ আছে তার মধ্যে আগ্নেয়গিরি, শিলাচ্যুতি, তাপবিকিরণ, ভু-গর্ভস্থ বাষ্পের মতো কারণগুলো উল্লেখযোগ্য। ভূপৃষ্ঠের গঠন আলাদা হওয়ার করণে ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশে আলাদা হয়ে যায় ভূমিকম্পের কারণও।

সূত্রমতে, বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষকরা ভূ-কম্পন-এলাকাভিত্তিক মানচিত্র তৈরি করেছেন। এতে বাংলাদেশকে তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে জোন-১। এর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুরো অংশ ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ। মধ্যম ঝুঁকির জোন-২। এতে রয়েছে রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং ঢাকা। নিম্নঝুঁকিপূর্ণ জোন-৩- এর জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বরিশাল, পটুয়াখালীসহ সব দ্বীপ ও চরগুলো।

কয়েক মাস পর নতুন বছরের (২০১৭) শুরুতে ৩ জানুয়ারি কেঁপে উঠেছে গোটা দেশ। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে ভূমিকম্পের সূচনা হয়। ভারতে দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে ৭৩ কিলোমিটার পূর্বে আসাম্বল এলাকায় উৎপত্তি হয় ওই ভূমিকম্পের। ভূগর্ভের ৩৫ কিলোমিটার গভীর উৎপত্তিস্থল থেকে মাঝারিমাত্রার (৫.৫) এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্ব এলাকা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে কর্মস্থল থেকে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েন। প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও আতঙ্কিত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!