• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

নগরায়ণে তাল রেখে বাড়ছে না স্বাস্থ্যসেবা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮, ১১:৪৭ এএম
নগরায়ণে তাল রেখে বাড়ছে না স্বাস্থ্যসেবা

ঢাকা : বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ মানুষ বর্তমানে শহরে বাস করলেও গ্রামের তুলনায় শহরে জনসংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে নগর অঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। এ ধারা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ হবে নগরবাসী, যাদের বড় একটা অংশের ঠিকানা হবে বিভিন্ন বস্তি। আর বস্তি অঞ্চলে জনসংখ্যার বাড়তি চাপের কারণে আগামীতে নগর এলাকায় সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের নগর অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে করা সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে সারা দেশের বিভিন্ন শহরে যত মানুষ বাস করে তার প্রায় অর্ধেক থাকছে রাজধানী ঢাকায়। এখানে বাস করছে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০ লাখ মানুষের বাস চট্টগ্রামে। বন্দরনগরীতে আছে শহরবাসীর প্রায় ২১ শতাংশ। এর বাইরে ৩৩ শতাংশ শহরবাসীর বাস অন্যান্য এলাকায়। বহুজাতিক দাতা সংস্থাটি মনে করে, নগর অঞ্চলের বিশাল এ জনগোষ্ঠীর কারণে ২০৩২ সালের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ হবে না।

এজন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয়ের অভাবকে বড় কারণ হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি মনে করে, স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার অভাব ও অর্থের অনিশ্চয়তাও নগরস্বাস্থ্য নিশ্চিতের পথে বড় চ্যালেঞ্জ।

এছাড়া রয়েছে সরকারের নীতিমালায় বস্তিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও প্রতিশ্র“তি না থাকা। এমন পরিস্থিতিতে নগর এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন ও সুশাসন কাঠামো গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে টেকসই অর্থায়নের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। নগরস্বাস্থ্য নীতিমালায় বস্তিবাসীদের বিষয়ে আলাদা উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদও দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে কর্মরত লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই। কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রবণতাও রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ঘিরে। ফলে দুই নগরীতে জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নতুন আসা মানুষের বড় একটা অংশ আশ্রয় নিচ্ছে বস্তি এলাকায়- যেখানে নাগরিক সুবিধা খুবই অপ্রতুল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি। বস্তিবাসীদের বাদ দিয়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪ হাজার বস্তি আছে। এর তিন-চতুর্থাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে। বস্তির প্রায় শতভাগ মানুষ গ্রাম থেকে আসা। বস্তির খাবার পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও আবাসন ব্যবস্থা খুবই নিম্নমানের, মাত্র ৪১ শতাংশ মানুষ ভালো মানের স্যানিটেশন সুযোগ পাচ্ছে। বস্তির বাইরে শহরের অন্যান্য এলাকায় এর হার ৬২ শতাংশ। বস্তি এলাকায় ১০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে একই টয়লেট ব্যবহার করে এমন শিশু ৪২ শতাংশ। বস্তির বাইরে মাত্র ৮ শতাংশ যৌথ টয়লেট ব্যবহার করে।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে বস্তি এলাকায় সংক্রামক রোগের পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের প্রবণতা বাড়ছে। এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সুবিধা পায় শহরের ৭০ শতাংশ নারী। এর মধ্যে সরকারি চিকিৎসার সুযোগ পায় ১৬ শতাংশ মা। এনজিও চিকিৎসাসেবা পায় ২৩ শতাংশ প্রসূতি এবং ব্যক্তিখাতে সেবা নেয় ৩১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বস্তি এলাকার মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ সরকারের চিকিৎসাসেবা পায়। আর এনজিওর চিকিৎসা পায় ৬ শতাংশ। বস্তির ৮০ ভাগ মানুষ ব্যক্তি উদ্যোগে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। অবশ্য ৩৮ শতাংশ মানুষ ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। আর সনাতনি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে চিকিৎসা নেয় বস্তির ৩৫ শতাংশ মানুষ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের অন্তত ৬০ শতাংশই অযোগ্য। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় শহরের শিশুদের শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শহরের ৩১ শতাংশ শিশুর উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। বস্তি এলাকায় খর্বাকার শিশুর হার ৪৮ ভাগ, এর মধ্যে ২৩ শতাংশ অতিমাত্রায় খর্বাকার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!