• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরের বনপাড়া পৌরসভা নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর, সরব প্রার্থীরা


অমর ডি কস্তা, নাটোর প্রতিনিধি নভেম্বর ১৪, ২০১৭, ০৬:৩৩ পিএম
নাটোরের বনপাড়া পৌরসভা নির্বাচন ২৮ ডিসেম্বর, সরব প্রার্থীরা

নাটোর: জেলার বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৮ ডিসেম্বর। রবিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ২৭ নভেম্বর। প্রার্থীতা বাছাই ২৮-২৯ নভেম্বর ও মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৭ ডিসেম্বর। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন জানান, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর বনপাড়াসহ দেশের ৪টি পৌরসভা ও ৩৪টি ইউপিতে সাধারণ, ৩টি পৌরসভা ও ৯১টি ইউপিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ২০১৩ সালে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে উন্নিত এই পৌরসভার এটি তৃতীয়তম নির্বাচন। সর্বশেষ গত ২০১১ সালের ১২ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালের জুন মাসে ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্ত থেকেই এই নির্বাচনকে ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। পরবর্তীতে পৌর এলাকার সীমানার সঙ্গে মাঝগাঁও ও জোয়াড়ি ইউনিয়নের সীমানা জটিলতার কারণে যথাসময়ে পৌরসভাসহ ওই দুইটি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি সে জট খুলে যায় এবং পৌরবাসীর বহুল আকাঙ্খিত নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করা হয়।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ওয়ার্ড ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এবারে আরো তিনটি ওয়ার্ড  ১০, ১১, ১২নং করা হয়েছে। মূলতঃ ওই দুইটি ইউনিয়ন থেকে ৪ হাজার ৪৪৯ ভোটার ও সংশ্লিষ্ট সীমানা পৌরসভার মধ্যে ঢুকেছে। যার ফলে নতুন এলাকাসহ ভোটার তালিকা গেজেটভুক্ত না হওয়ায় এই নির্বাচন যথাসময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইছাহাক আলী জানান, এবারের নির্বাচনে হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ২৯১ জন।

গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ২৮ ডিসেম্বর স্থগিত হওয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে বনপাড়া পৌর এলাকাসহ বন্ধ থাকা জোয়াড়ি ও মাঝগাঁও ইউনিয়নে আগ্রহী প্রার্থীরা সরাসরি মাঠে নেমে পড়েছে ভোটারদের দোয়া নিতে। আগ্রহী প্রার্থীরা অনেকেই ফেসবুকে নিজেদের প্রচারণা চালানো অব্যাহত রেখেছে। অনেকে হাটবাজার ও পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে সাটিয়েছেন পোস্টার।

বনপাড়া পৌরসভা এলাকায় রয়েছে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়সহ সরকারি সকল দপ্তর, বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বনামধন্য কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল। আর এই কারণে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত বনপাড়া পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে গোটা উপজেলায় রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। নির্বাচনে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তাদের সম্পর্কে ভালো-মন্দ বিচার বিশ্লেষণমূলক তর্ক-বিতর্কও চলছে সুধী সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।
 
এবারের পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান পৌর মেয়র ও বনপাড়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম জাকির হোসেন এবারেও আওয়ামী লীগ থেকে মনোননয়ন পাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ। ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বিভিন্ন জনসভায় কে এম জাকির হোসেনের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন।

তাছাড়া স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ থেকে মনোননয়ন পাবার মতো আর কোন উল্লেখযোগ্য নেতা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে দাঁড়াবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা জয়বাংলা সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর ঘনিষ্ট সহযোগী জাকির হোসেন সরকার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বিএনপি থেকে সাবেক পৌর মেয়র সানাউল্লাহ নূর বাবুর সহধর্মিনী ও জেলা বিএনপির সদস্য মহুয়া নূর কচি।

এ বিষয়ে তিনি জানান, তার স্বামী বিএনপি নেতা সানাউল্লাহ নূর বাবু ২০০৬ সালে পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে জয়লাভ করেন। পরে ২০১০ সালে ৮ অক্টোবর রাজনৈতিক সহিংসতায় তিনি খুন হন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪০ ভোটোর ব্যবধানে পরাজিত হন। তবে তিনি এই পরাজয় মেনে নেননি। তার অভিযোগ একটি কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি হওয়ায় এমনটি হয়েছে। মহুয়া নূর কচি এবারেও বিএনপি থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন।

অপরদিকে বনপাড়া পৌর শহরে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শক্ত অবস্থানে ধরে রেখেছেন দাবি করে পৌর মেয়র পদে মনোননয়ন চাইবেন বনপাড়া ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক ও পৌর বিএনপির সভাপতি লুৎফর রহমান। বিএনপি তাদের দলীয় জোট জামায়াতকে সঙ্গে রাখবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, জেলা বিএনপি যেভাবে নির্দেশ দিবেন তারা সেভাবেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন।

এদিকে বনপাড়া পৌরসভায় নতুন করে আরও তিনটি ওয়ার্ড যোগ হওয়ায় ১০, ১১, ১২ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে সবমিলিয়ে এক ডজনেরও বেশি প্রার্থী। তাছাড়া অন্যান্য প্রতিটি ওয়ার্ডে গড়ে ৬ জন প্রার্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন বলে জানা গেছে। সংরক্ষিত মহিলা আসনেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী।

স্থানীয়রা মনে করেন, নির্বাচন তারিখ ঘোষণার আগে থেকেই যে ভাবে নির্বাচনী বাতাস বইতে শুরু হয়েছে তাতে অনুমান করা যায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার ও সাধারণ জনগণ এখন অপেক্ষা করছেন ৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখের পর চূড়ান্ত প্রার্থী কে হচ্ছেন তা দেখার জন্য।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!