• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকায় ২৩টিসহ সারা দেশে অর্ধশত জিডি

নিখোঁজ ৭৭ তরুণ : বেছে নিয়েছে ধর্মীয় উগ্রপন্থা!


নিউজ ডেস্ক জুলাই ১১, ২০১৬, ০৩:২২ পিএম
নিখোঁজ ৭৭ তরুণ : বেছে নিয়েছে ধর্মীয় উগ্রপন্থা!

সাম্প্রতিক সময়ে কমপক্ষে ৭৭ তরুণ নিখোঁজ হওয়ার প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের নিখোঁজ থাকার বিষয়ে দেশের বিভিন্ন থানায় অর্ধশতাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। ঢাকায় জিডি হয়েছে কমপক্ষে ২৩টি। নিখোঁজদের তালিকায় কিছু উচ্চশিক্ষিত তরুণীও রয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে এদের প্রায় সবাই ধর্মীয় উগ্রপন্থা বেছে নিয়েছে। ঘটাচ্ছে টার্গেট কিলিং ও আত্মঘাতী হামলা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ধারণা তাদের কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থী সংগঠন আইএসে যোগ দিয়েছে বা আইএসের হয়ে কাজ করছে। আবার কেউ কেউ দেশে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) বা অপর কোনো উগ্রপন্থী সংগঠনের হয়ে কাজ করছে।

নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সব থানায় নিখোঁজ তরুণদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০ জনের ছবি, পাসপোর্ট নম্বর ও অন্যান্য তথ্য দিয়েছে পুলিশ। নাম-ঠিকানা জানা গেছে আরও অনেকের।

বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী নিখোঁজ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘নিখোঁজদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত ও তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’

পুলিশ সদর দফতরের গোপনীয় শাখা থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। এর দায়িত্বে থাকা এআইজি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সারা দেশে কত সংখ্যক তরুণ-যুবক নিখোঁজ আছে আমরা তার একটি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।’ পুলিশ সদর দফতরের অপর একজন কর্মকর্তা জানান, প্রায় ৭৭ জন নিখোঁজ থাকা এবং ৫০টিরও বেশি নিখোঁজের জিডি হওয়ার প্রাথমিক তথ্য তারা পেয়েছেন। এ সংখ্যা আরও বাড়বে।’

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন সহকারী কমিশনার জানান, তার এলাকায় যতগুলো ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে সবগুলোতে তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। থানা পুলিশ এবং বিশ্বস্ত গুপ্তচরের মাধ্যমেও কারা কারা নিখোঁজ আছেন সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

ডিএমপি সদর দফতরের অপর একজন কর্মকর্তা জানান, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ২৩ যুবক নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন থানায় জিডি হয়েছে। তাদের সম্পর্কে ডিএমপিকে বিস্তারিত জানাতে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিশেষ করে এসব নিখোঁজ তালিকার মধ্যে কোনো উচ্চশিক্ষিত তরুণ রয়েছে কিনা তা আগেভাগে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) একজন কর্মকর্তা জানান, ‘এসবির সব জনবলের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তারা প্রতিটি মহল্লা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্নভাবে নিখোঁজদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ঈদের ছুটি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় তাদের তথ্য পেতে সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান এসবির ওই কর্মকর্তা।’

দু’দিন আগে ১০ নিখোঁজ তরুণের বিষয়ে তথ্য চেয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পুলিশ। ‘তোমরা দেশের জন্য, ইসলামের জন্য, তোমাদের পরিবারের জন্য ফিরে এসো’ শীর্ষক ওই ভিডিও বার্তায় যাদের ছবি, নাম ও পাসপোর্ট নম্বর দেয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন- রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডা এলাকার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), ধানমণ্ডি এলাকার জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর-এফ ০৫৮৫৫৬৮), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টিকে ৮০৯৯৮৬০) ও জুনুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বিই ০৯৪৯১৭২)।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ আশরাফ রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসে বসবাসরত সাবেক এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার মেধাবী সন্তান। বাসা থেকে যাওয়ার আগে বাবার উদ্দেশে সে একটি চিরকুটে লিখে গেছে। তাতে লেখা আছে, ‘আমি নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাচ্ছি।’ ৬ মাসের বেশি সময় পার হলেও আশরাফ মোহাম্মদের কোনো খোঁজ মেলেনি।

ঢাকার ইব্রাহিম হাসান খান ফেসবুকে ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই কোরআনের আয়াত দিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্র জানায়, গত বছরের ১২ জুন কয়েক বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলেন গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে। তার যে ছবি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে রয়েছে সেটি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থাকা ছবি। সেটি তার কিশোর বয়সের ছবি।

ইব্রাহিম স্কুলজীবনে সৌদি আরবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ালেখা করেন। তার চালচলন এবং জীবনযাপন দেখে উগ্রপন্থী হিসেবে জড়িত হওয়ার কোনো সন্দেহ করার সুযোগ ছিল না বলে তার এক বন্ধু জানান।

সিলেটের জুনুন শিকদার ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার হন। পরে জামিনে বেরিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। এরপর থেকে নিখোঁজ। অপরজন সাইফুল্লাহ ওজাকি জাপান থেকে সিরিয়ায় যান। লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন এক বছর আগে তিন সহযোগীসহ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে নিখোঁজ। সিলেটের তামিম আহম্মেদ চৌধুরী ছিলেন কানাডা প্রবাসী। সেখান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে নিখোঁজ হন।

৫ জুলাই সিরিয়ায় আইএসের কথিত রাজধানী রাকা থেকে ‘হুমকি বার্তা’ সংবলিত একটি ভিডিওতে তিন বাংলাদেশী তরুণকে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে পড়ার পর তিন তরুণের দু’জনকে চেনা সম্ভব হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে তাদের মন্তব্যে লিখেছেন, এদের একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান শফি। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ক্লোজআপ ওয়ানের তারকা হিসেবে খ্যাত। তার সঙ্গে অপর একজনের নাম তৌসিফ হাসান বলেও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।

এদিকে তাহমিদের বাবার বাসা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায়। বাড়িটির নকশা বাংলো ধরনের। দেখেই বোঝা যায় অত্যন্ত ধনী ও প্রভাবশালী মানুষ তারা। বিদেশে পাড়ি জমানোর আগে ওই বাসাতেই থাকতেন সাবেক গ্রামীণফোনের এই কর্মকর্তা। বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ফটক বন্ধ। অনেক ডাকাডাকির পর দারোয়ান এসে কোনো কথাই বলতে চাননি। ভিডিও থেকে নেয়া তাহমিদের চেহারার একটি স্ক্রিনশটের প্রিন্ট আউট দেখানো হয় দারোয়ানকে। এরপর তিনি ভেতরে চলে যান। আর ফিরে আসেনি। 

বাড়িতে তাহমিদের মা এবং অপর দুই ভাই তাদের পরিবার-পরিজন থাকেন। তার বাবা মারা গেছেন বছর দুয়েক আগে। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটে। গলির একজন চা দোকানি জানান, তার দোকানে তাহমিদ দুয়েকবার চা পান করেছে। মাঝে মাঝে তাকে দেখা যেত। কিন্তু সাত-আট মাসের বেশি সময় ধরে দেখা যায় না। নাম প্রকাশ না করে বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, তিনি শুনেছেন ওই বাড়ির এক ছেলে গ্রামীণফোনে চাকরি করত, যে বছরখানেক আগে বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে তুরস্কে চলে গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে তাহমিদ তুরস্ক হয়ে সিরিয়া ও ইরাকে গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে। আর তুরস্ক সিরিয়া ও ইরাকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। তাহমিদ ধার্মিক ছিল। গ্রামীণফোনের বেশ কয়েকজন কর্মী জানান, তিন-চার মাস আগে সে ওই প্রতিষ্ঠানের কমিউনিকেশন্স বিভাগে চাকরি করত।

এক বন্ধু জানান, এনটিভির ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ নামক রিয়েলিটি শোতে সে প্রায় প্রথম হয়ে যাচ্ছিল। সে মেধাবী শিল্পী। সে গান লিখত এবং সুর করত। ক্লোজআপ ওয়ানের প্রথম মৌসুমে সেরা পনেরো জনের তালিকায় ছিলেন তাহমিদ। বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত সঙ্গীত শিল্পী নাম প্রকাশ না করে জানান, কয়েক বছর ধরে তাহমিদকে কোনো অনুষ্ঠানে গান করতে দেখেননি। কোনো অ্যালবামও করেননি। জানা গেছে, তাহমিদ ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। ইংরেজিতে দক্ষ। আইএসের ভিডিওতে তাকে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের জুন মাসে রাজধানীর পল্লবী থেকে ফাইয়াজ ইশমাম নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল। ইশমাম উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এসএসসি পাস করার পর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি অনলাইন ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করছিলেন। তিনি আইএসে যোগ দেয়ার জন্য অপর আইএস সদস্য ফিদা ও গালিবের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং অপর বন্ধুদের আইএসে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করতেন।

ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ মে আইএসের বাংলাদেশের কথিত প্রধান সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বেগ ও তার সহযোগী সাবিক বিন কামালকে গ্রেফতার করা হয়। আমিনুল বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন। পরে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি মোবাইল ফোন কোম্পানির উচ্চপদে চাকরি করার পর সর্বশেষ কোকাকোলায় আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন।

তার সহযোগী সাকিব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে লালমাটিয়ার একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। আমিনুল ইসলাম বেগ কমপক্ষে ৩ জনকে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় আইএসে পাঠিয়েছেন। আমিনুল বেগ ওই সময় জানান, পূর্ব এশিয়ায় জাপান প্রবাসী এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নওমুসলিম তাকে আইএসে যোগ দিতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তার গ্রুপে আতিক সরকার, সিফাত, আবদুল্লাহ ও জাবেদ কায়সারসহ আরও ২০ জন ছিল। ডিবি তাদের সবার নাম প্রকাশ করেনি।

১৪ মার্চ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। ওই এসএমএস থেকে জানা যায়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। উধাও হওয়ার আগে সে মাকে টেলিফোন করে বলেছে, ‘মা আমি ইসলামের পথে চলে যাচ্ছি। আমাকে মাফ করো তুমি। তোমার সঙ্গে জান্নাতে দেখা হবে।’ বিষয়টি র‌্যাবকে জানানো হয়। র‌্যাব অনুসন্ধান করে জানতে পারে, ওই শিক্ষার্থী ধনাঢ্য এক পরিবারের সন্তান। তার বাবা একটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কিন্তু তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

৮ ডিসেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে আইএসের কথিত পৃষ্ঠপোষক আবুল হাসানাতসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাদের মধ্যে আরও ছিলেন নাহিদউদ্দোজা, নাহিদুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আবুল হাসানাতের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাকুড়চিয়া মুন্সিবাড়ী গ্রামে।

অপর যুবক নাহিদউদ্দোজার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেব গ্রামে এবং নাহিদুল ইসলামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সেয়দবাড়ি গ্রামে এবং তাজুল ইসলামের বাড়ি খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার হাজি ইসমাইল রোড এলাকায়। জিজ্ঞাসাবাদে আবুল হাসানাত জানান, তার ছেলে সাইফুল হক (সুজন) আইএসে যোগ দিয়েছে। সে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন। তার আরেক ছেলে আতাউল হক (সবুজ) বিদেশে আছেন। তিনি জঙ্গি অর্থায়নের জন্য দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। উদ্ধার হওয়া ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আতাউল হকের পাঠানো। সবুজও আইএসের হয়ে কাজ করছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সামিয়ূন নামে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আইএসের জন্য কর্মী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছিল। তার উৎসাহে ওই বছরে ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আশেকুর রহমানসহ কয়েকজন সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেন। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আশেকুরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও সফলতা পাওয়া যায়নি। ওই বছরই আগস্টে ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, পাঁচজন ‘বাংলাদেশী’ যুবক আইএসের প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির কাছে জিহাদের শপথ নিয়েছে।

সিটির ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শুধু তরুণরাই নয়, তরুণীরাও আইএসের দিকে ঝুঁকছে। গত বছর বাংলাদেশী তরুণী মাইরুনা ফারহিন আইএসে যোগ দেয়ার উদ্দেশে ঢাকা থেকে তুরস্কে যান। তিনি তুরস্কে পৌঁছার পর বাংলাদেশ দূতাবাস জরুরিভিত্তিতে কূটনৈতিক নোট ভারবালের মাধ্যমে বিষয়টি তুরস্ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। তুরস্কের ন্যাশনাল পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট মাইরুনা ফারহিনকে শনাক্ত করে এবং তুরস্কে প্রবেশের অনুমতি দেয়া থেকে বিরত থাকে। পরে গত বছরের ৫ মে তাকে তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকেই বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আরও কয়েকজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণী আইএসে যোগ দিয়েছে।

সিটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ থেকে যারা আইএসে যোগ দিয়েছে তাদের অনেকের বাড়ি সিলেট অঞ্চলে। তাদের মধ্যে একটি বিশেষ ক্যাডেট কলেজের ছাত্রের সংখ্যাই বেশি। বাংলাদেশে একজন শিল্পপতির দুই ছেলে আইএসে যোগ দিয়েছে। পরিবারটি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং তারা আগে বেশ মর্ডান পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিল। তাদের এক বোনও আইএসের হয়ে কাজ করছে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে একজন আইএসের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। গোপনীয়তার কারণে তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। মূলত তুরস্ক হয়ে বেশির ভাগ তরুণ আইএসে যোগ দিচ্ছে। এছাড়া ঢাকা থেকে প্রথমে মালয়েশিয়া ও জাপান গিয়েও কিছু তরুণ আইএসে যোগ দিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

সম্প্রতি গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে হামলার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে নিহত তরুণরাও বাড়ি থেকে নিখোঁজ ছিল। তাদের প্রায় সবাই ৫-৬ মাস আগেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। গুলশানে নিহত নিবরাস ইসলাম ৩ ফেব্রুয়ারি একটি চিরকুট লিখে বাসা থেকে উধাও হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি নিকেতনের বাসা থেকে গুলশান-২-এ কোচিং করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মীর সামিহ মোবাশ্বির। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে রোহান ইমতিয়াজ নিখোঁজ হন কয়েক মাস আগে। বাসা থেকে পালিয়ে তিনি মালয়েশিয়া চলে যান।

নিখোঁজদের বিষয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো পরিবারের সন্তান নিখোঁজ হয়ে থাকলে তা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে। যারা নিখোঁজ আছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছি। ব্লগ-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা কোনো এলাকায় জঙ্গি তৎপরতার কথা জানা থাকলে সেটাও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। সূত্র : যুগান্তর

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!