• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেতাকর্মীদের চাঙা করতেই হেঁটেছেন খালেদা?


হৃদয় আজিজ এপ্রিল ৮, ২০১৮, ০২:৩১ পিএম
নেতাকর্মীদের চাঙা করতেই হেঁটেছেন খালেদা?

ঢাকা : দীর্ঘ দুই মাস পর চার দেয়ালের বাইরে নিয়ে আসা হলো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। পুরনো ঢাকার নির্জন কারাগারে থেকে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় শনিবার (৭ এপ্রিল) তাকে নিয়ে আসা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। 

বেলা সাড়ে ১১টায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও হাসপাতালের ফটক এবং ভেতরে নেতাকর্মীরা ভিড় জমান। কমপক্ষে দশজনকে এ সময় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

তাকে বহনকারী কালো গাড়ি থেকে যখন তিনি নামেন ডাক্তারসহ সকলেই ভেবেছিল গাড়ির কাছে রাখা হুইল চেয়ারটি ব্যবহার করবেন বিএনপি নেত্রী। কিন্তু, তিনি হাঁটুর ব্যথা নিয়েই গাড়ি থেকে নেমে কারো সহযোগীতা ছাড়াই হেঁটে হেঁটে এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার জন্য এই হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে যান। এ সময় তার মুখে হাসি দেখা যায়।

খালেদা জিয়াকে প্রথমে কেবিন ব্লকের পাঁচ তলায় ৫১২ নং কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের ডেকে নিয়ে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারা কর্তৃপক্ষের পোশাকি সদস্যদের উপস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন একটি চেয়ারে বসে তাদের সাথে কথাবার্তা বলেন। 

এর এক ফাঁকে হাসপাতালের সি ব্লকের কাছে খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও তার দুই মেয়েকে নিয়ে আসা হয়।

দলের যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, আমি একফাঁকে কারা কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করেই তাদেরকে সেখানে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। সিঁথির সাথে ম্যাডামের কথা হয়েছে। নাতনীদের সাথে তিনি কথা বলেছেন।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে ঘড়ির কাঁটায় যখন সময় ১টা ৩০ মিনিট তখন র‌্যাবসহ পুলিশের নিরাপত্তা গাড়িগুলো খালেদা জিয়াকে নিয়ে কারাগারের উদ্দেশে যায়। খালেদা জিয়ার গাড়ি ছেড়ে দেয়ার মুহূর্তে কাছে দাঁড়িয়ে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান এবং যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন কালো গ্লাসের কাছে এসে হাত নেড়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান।

গত ২৮ মার্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় পুরনো ঢাকার বকশিবাজারের অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার স্বশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ ছিল। সেদিন কারাকর্তৃপক্ষ আদালতে জানিয়েছিল খালেদা জিয়া অসুস্থ তিনি আদালতে হাজির হতে পারবেন না।

পর দিন ২৯ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বন্দি খালেদার সাক্ষাৎ স্থগিত করে অসুস্থতার কথা বলা হয়। তখন থেকেই মূলত তার অসুস্থতার কথা সামনে আসে। 

এরপর তার সুচিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চার চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। গত ১ এপ্রিল বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে মেডিকেল টিম এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। এরই প্রেক্ষিতে মূলত তাকে ৭ এপ্রিল তাকে বিএসএমএমইউ-তে নেয়া হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রায় এক ঘণ্টা পর কারাগার থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ভালো নেই। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও মানসিকভাবে শক্ত আছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 

এদিকে, খালেদা জিয়ার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জে. আবদুল্লাহ আল হারুন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, খালেদা জিয়া আপাতদৃষ্টিতে ভালো আছেন। তবে তার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে এক্স-রে রিপোর্টগুলো পাওয়ার পর।

তবে খালেদা জিয়া সরকারি চিকিৎসার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, সরকারের চিকিৎসায় আমাদের একেবারেই বিশ্বাস নেই। তাকে একটি নির্জন, পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। সেখানে এমনিতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আমরা চাই, তাকে মুক্তি দেয়া হোক। তাহলে তিনি নিজের চিকিৎসা নিজের ডাক্তারদের দিয়ে করিয়ে সুস্থ হবেন বলে আমরা মনে করি।

বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আসার পর মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার এখন হাঁটতেও কষ্ট হয়। তার স্নায়বিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। 

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আগে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিয়মিত নানা রকম ওষুধ খেতে হয়।

হাঁটুর ব্যথা সত্ত্বেও হাপাতালে খালেদা জিয়ার মুখে হাসি নিয়ে চিকিৎসা করার প্রতি ইঙ্গিত করে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মাহসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দৃঢ়তর এক উন্নত মম শির হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। 

খালেদা জিয়া কেমন আছেন এটা জানার জন্য দেশবাসী উদ্রীব ছিল দাবি করে রিজভী বলেছেন, পুলিশী হিংসাত্মক আচরন ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের আতঙ্কজণক পরিবেশেও আপোষহীন নেত্রী কেমন আছেন সেটুকু দেখার জন্য উদগ্রীব ছিল দেশের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। অসুস্থতা সত্ত্বেও গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতি দেখল দৃঢ়তর এক উন্নত মম শির। মুহূর্তে তার অন্তর্বার্তা পৌঁছে গেছে কোটি কোটি জনগণের হৃদয়ে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!