• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাটগ্রামে নিয়োগ জালিয়াতি, এমপিও স্থগিত


মো. ইউনুস আলী, লালমনিরহাট প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৮, ০২:৫২ পিএম
পাটগ্রামে নিয়োগ জালিয়াতি, এমপিও স্থগিত

লালমনিরহাট : সরকারি বিধিবিধান তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ৩ জন শিক্ষককে বাদ দিয়ে ১ জন শিক্ষকের এমপিও পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আর একই শিক্ষকের নাম এমপিও-ননএমপিও তালিকায় দেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের বেতন স্থগিত করে দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিতে সকল শিক্ষকের মাঝে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে।

জালিয়াতি করে এক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হওয়ার ঘটনাটি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ফাঁস হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের মাসিক বেতন বিল উত্তোলন সীটে প্রতিস্বাক্ষর করতে গিয়ে একই শিক্ষকের নাম এমপিও-ননএমপিও তালিকায় দেখে ফাইল আটকে দেন। এ কারণে বর্তমানে সকল শিক্ষকের বেতন বন্ধ রয়েছে।

আর এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন।

জানা গেছে, ২২ অক্টোবর ২০১৭ সরকারিভাবে একটি প্রজ্ঞাপন জারী হওয়ায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের এমপিও এবং নন-এমপিও শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন পত্র মোতাবেক অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা শিক্ষক ৪ জনের নামের তালিকা জমা দেন। তারা হলেন- এমদাদুল হক, গোলাম মোস্তফা, শিবচরণ ও মোস্তফা হাসান।

তালিকাটি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হলেও অদৃশ্য কারণে জেলা থেকে মোস্তফা হাসান ব্যতীত অন্য ৩ জনের নাম বাদ পড়ে যায়। এ কারণে পরে এমপিও জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

সরকারি বিধি মোতাবেক গত ১৩/১১/২০১১ তারিখের পরে বেসরকারি স্কুল-কলেজে নিয়োগকৃত বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠান তহবিল থেকে বেতন নিবেন বলে শর্ত দেয়া হয়। শর্ত অনুযায়ী মোস্তফা হাসান ৩১/১২/২০১৩ তারিখে নিয়োগ পেয়ে ০১/০১/২০১৪ তারিখে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের এক কর্মকর্তার সহযোগীতায় ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে এমপিওভুক্ত হন, যার ইনডেক্স নং-১১১৮৮১৩।

এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার বলার পরেও তাদেরকে এমপিওভুক্ত করার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। এ কারণে দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদানে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। একই প্রতিষ্ঠানে একই সময়ে নিয়োগকৃত ৪ জন শিক্ষকের ১ জন এমপিভুক্ত হয়ে প্রতিমাসে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে বেতন উত্তোলন করছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বলেন, তার বিদ্যালয়ে নিয়োগকৃত অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা শিক্ষক ৪ জনের মধ্যে মোস্তফা হাসানের এমপিও টাকার বিনিময়ে হয়েছিল। এ রকম ঘটনা অনেক প্রতিষ্ঠানেই আছে।

শিক্ষা অফিসে দাখিলকৃত এমপিও এবং নন-এমপিও তালিকায় মোস্তফা হাসানের নাম দেয়া ভুল হয়েছে। এ কারণে জালিয়াতির ঘটনাটি ধরা পড়ে। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শিক্ষক ৩ জনের নামসহ পাটগ্রাম উপজেলার আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, রসুলপুর আবদাল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন, শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষক পাঠানো তালিকা থেকে বাদ পড়ে যান। পরবর্তীতে তাদের নাম আবার পাঠানো হয়েছে বলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া তার অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মোস্তফা হাসান নামে ১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমপিও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ওই বিদ্যালয়ের এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকরা অভিযোগ দাখিল করেছে। এ কারণে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের বেতন বিল উত্তোলন সীটে প্রতিস্বাক্ষর না করায় বর্তমানে সকল শিক্ষকের বেতন বন্ধ রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!