• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
৪ দিনের ৭ জনের মৃত্যু

পানির নিচে মৌলভীবাজার শহর


মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া প্রতিনিধি জুন ১৮, ২০১৮, ১১:৩০ পিএম
পানির নিচে মৌলভীবাজার শহর

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে মনু ও ধলাই নদীর পানি কমতে শুরু করায় গত ৪৮ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানির নিচে রয়েছে জেলা শহরসহ বেশকিছু এলাকা।

এ ছাড়া পৌর শহরের কাছে বাড়ইকোনায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। একই পরিস্থিতি জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর অঞ্চলে। সদর উপজেলার ৪টি সরকারি খাদ্য গুদামে পানি ঢুকে ভিজে গেছে বিপুল পরিমাণ চাল।

গত কয়েক দিনের বন্যায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার পরিবারের প্রায় ২ লাখ মানুষ। বন্যার কারণে জেলা শহরের সঙ্গে সিলেটসহ মৌলভীবাজারের ৪টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুলাউড়ায় ২ জনসহ কয়েক দিনের বন্যায় ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এ জেলায়।

এদিকে, শনিবার থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়া পানিবন্দি মানুষজনকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শহরে ৫টিসহ জেলায় ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত ত্রাণ ও উদ্ধার সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করেছে দুর্গতরা। সোমবার (১৮ জুন) দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট সেতুর কাছে মনু নদীর পানি কমে গিয়ে বর্তমানে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে বন্যাকবলিত এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করেছে।

তিনি জানান, রোববার থেকে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। একইভাবে শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়ক থেকেও পানি নেমে যায়। পানি নেমে যাওয়ায় সকাল থেকে এ দুটি সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সড়কের ওপর এখনো তিন ফুট পরিমাণ পানি থাকায় এ পথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনোজ কান্তি দাশ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, শহরের কুসুসবাগ এলাকায় দুটি এবং সদর উপজেলা পরিষদের পাশে দুটি গুদামে পানি ঢুকেছে। এতে প্রায় ২ হাজার টন চাল ভিজে গেছে। কিছু চাল গত রোববার সেনাবাহিনীর সহায়তায় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে বেশিরভাগই চালই পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই চালগুলো বাঁচানো যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

শহরের বড়হাট এলাকায় পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণকালে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বন্যার কারণে যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো মেরামত করে দেবে সরকার। যেসব ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে সেগুলো জেলা প্রশাসক টিন ও নগদ অর্থ দিয়ে সঠিক ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে ঘর নির্মাণ করে দেবে। এ সময় মন্ত্রী পৌরসভার উদ্যোগে ৫০০ বস্তা ও জেলা প্রশাসনের ৩০০ বস্তা ত্রাণ বিতরণের উদ্বোধন করেন।

এদিকে, বারইকোনার ভাঙন দিয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর, কনকপুর, কাগাবলা, নাজিরাবাদ ও গিয়াসনগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে নৌকাযোগে দুর্গতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। এলাকাগুলোতে কোনো ত্রাণ বা শুকনো খাবার পৌঁছেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় বাড়িঘরে অবস্থান করছে। এদিকে শহরের বড়হাট, ধরকাপন, মোস্তফাপুর এলাকার মানুষ ও পানিবন্দি রয়েছে। হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে গবাদিপশু ও আসবাবপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান জানান, জেলা শহরের সঙ্গে সিলেটসহ মৌলভীবাজারের ৪টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।

কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আলী জানান, মনু নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সৃষ্ট ভাঙন দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া পানি এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি ও তীরবর্তী এলাকায় পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাওরাঞ্চলের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে হাকালুকি হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনিয়নের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যাকবলিত। স্থানীয় মদনগৌরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ইতোমধ্যে ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানান ওই বিদ্যালয়ের এসএমসির সভাপতি আবদুল কাদির জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!