• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফারুখ সিদ্ধাথের্র পাঁচটি কবিতা


ফারুখ সিদ্ধার্থ সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭, ০৩:৩৬ পিএম
ফারুখ সিদ্ধাথের্র পাঁচটি কবিতা

১.  বলটা গোলে যাবেই

একদিন ওরা করবে না আর এই অবিচার :
বিতাড়ন আর দখলদারি- খবরদারি- নজরদারি...
জনতার এই দুঃখ ও দুর্দশা নেবে স্বীকার ক’রে-
একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম এই আশাতেই।

দূর হলো না অমানিশা- ঘোরান্ধকার এই জীবনের-
না-ফোটা সব ফুলশিশুদের ঝুর ঝুর ঝুর ঝরে-পড়া;
বিধ্বস্ত নগর জুড়ে চলমান এ-হত্যালীলা- ধ্বংসলীলা-
‘যুদ্ধ’-নামে যখন-তখন এই প্রহসন দূর হলো না।

কালোবাজের নোংরা নখে প্রিয় শিকার তেমনি আছে-
হায়েনা আর নেকড়েসহ ভয়াল থাবার হিংস্ত্র যত
রক্তপায়ী দানবগুলোর নৈশভোঁজে মেতে-ওঠা-
নির্বিকার ওই আকাশটারও চেয়ে-থাকা তেমনি আছে।

ফুলপাখিদের আর্তনাদে মন গলেছে কোন শিকারীর?
কবে, কখন, কেঁপেছে কোন আরশ কারো-
মানবগাছের পত্র ছাড়া? মানবতার নামেই কিছু
দন্তহীনা সাপের শুধু ফোঁসফোঁসানি আসছি শুনে।

এমন করেই প্রকাশ্যে খুন হচ্ছে যখন একে-একে
সভ্যতা-সুন্দরে মোড়া’ সব আগামীর স্বপ্নগুলো-
মুকুলেই ঝরছে শুধু ফুলগুলো আর পিশাচদের ওই
ইচ্ছেগুলোই হচ্ছে পূরণ- তখনো কি থাকব আশায়?

এমনতরো ইতিহাসের আমি কেবল দর্শক হব?
মানবতার দোহাই গেয়ে নীরবেই থাকব চেয়ে?
এত যে ফুল ছিন্ন হলো- রক্তনহর বয়ে গেল ভ‚মধ্যতে-
ভুলে যাব? করব ক্ষমা? না-না-না, কখ্খনো না।

ভুলব না কেউ ঘুনাক্ষরেও- ক্ষমা সে-তো দূরের কথা-
ভুলবে না কেউ আমার পরেও পরম্পরায় আছেন যারা।
লড়াই যখন অব্যাহত মুক্তির দিন আসবে ঠিকই :
খেলা যখন চলছে তখন বলটা গোলে যাবেই যাবে।

২২ আগস্ট ১৪

২. প্রাণের পতাকা

শহীদের প্রাণঢালা প্রিয় প্রান্তরে
ফুটেছে যে গাঢ়লাল সূর্যকুসুম
সে আমার পরম আরাধ্য
প্রথম ও শেষ প্রেম;

সীমানা পেরিয়ে যাওয়া
নতুন ভ‚গোল এক বিশ্বমানচিত্রে;
অশুভের সাথে চিরআপসহীন দ্বদ্বের ফল;
অনেক হারিয়ে পাওয়া অনেক কিছু!

শতবছরের শতসংগ্রাম শেষে
কুয়াশাকাফন ফুঁড়ে নিঃসীম নীলিমায় আজ
উড়ছে যে একখ­ বস্ত্র মানবিক
সে আমার নিজস্ব নিশান।
 
নরম সবুজ তার কোমল হৃদয়,
ক্ষত আর বিক্ষত পটভ‚মে তবু
আলোর সূর্য-বুকে প্রতিদিন
আলোকিত করে আমার আকাশ!

চিরদিন ওই প্রাণের পতাকা
সবার আকাশে এভাবে উড়–ক;
বাতাস ছড়িয়ে দিক দিগি-দিক তার
তমোহর উজ্জ্বল বিভা।
-০-

৩.  সে

কমলাসদৃশ এক বৃহৎ লাটিম
ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে
আপন অক্ষরেখা ছুঁয়ে যায়, আর
নতুন বছরে পা পড়ে তার;

একটি দেশের সমান বয়েসী, তাই
একই লগ্নে দেখা দেয়
উভয়ের জন্মের প্রথম শুভক্ষণ;
যেইক্ষণে একজন রাষ্ট্রীয় উল্লাসে মাতে,
নিজেকে নতুন ক’রে দ্যাখে অন্যজন;
প্রচল দশক যাকে ব্রাকেটবন্দি ক’রে
রেখেছে একটি বিশেষ কোঠায়।

সমান সচল তার দুই হাত-
চলছেও বহুদিন, তবু
দশক-হিশেব শুধু ঘুরেফিরে
শূন্যেই দেখতে পায় তাকে।

উছল তারুণ্য তার মনেপ্রাণে-
চোখেমুখে সবুজের দারুণ উচ্ছ্বাস;
দীর্ঘশ্বাস ভরা চুলগুলো
মনেই হয় না, একদিন আরো বেশি
ঝলমলে, রেশমি-কোমল আর
চমৎকার সুস্বাদ অন্ধকার ছিল;
পুনর্বার দেখেও মনে হয় না-
শরতের কাশবন খুব বেশি দূরে।
-০-

৪. নির্জন পথের ধারে

নির্জন পথের ধারে এইভাবে বসে আছ কমরেড!
লাল-ঝাণ্ডা-হাতে ছুটতে-ছুটতে খুব ক্লান্ত? না-কি
সমাজ বদলানোর দীর্ঘাভিযাত্রার বিশেষ মুহূর্তে
তপ্ত রাজপথ রেখে গভীর নির্জন-পথেই ভাবছ
বিপ্লবের নতুন কৌশল? দেখছ দিগন্ত মুক্তির?

পেট্রোল-বোমায়-দগ্ধ-প্রাণের গন্ধে যখন হিমশিম
বার্নইউনিট- মৃত্যুর সাথে লড়ছে দেশের ভবিষ্যৎ-   
নরম সবুজ ঘাসে তখনো বাতাসে ঠেস দিয়ে তুমি
একা পোজ দিচ্ছ ওই ডিজিটাল ক্যামেরার সামনে-
কেবল ইজেলে বন্দী হওয়ার ব্যক্তিগত অভিপ্রায়ে?

নিজের তেমন কোনো কাজ নেই তাই হেঁটে-হেঁটে
প্রকৃতির পাঠ নিতে ঘুরে ফিরি পথ থেকে পথে:
হাত রেখে দুপুরের হাতে বিকেলের মুখোমুখি হই-
গোধূলির সান্নিধ্যে এসে কবির একাকীত্ব নিয়ে
মানুষের সাথে তার সম্পর্ক-সূত্র মেলাই আবার...

তুমি তো সংগ্রামী- আপসহীন- অবরুদ্ধ জীবনে  
মুক্তির স্বপ্ন দেখাও প্রতিদিন, আয়েশী-ভঙ্গিতে এত
পোজ দেওয়ার অখ­ অবসর কোথায় তোমার?
পথে নেমে ভ্রমণ থামালে কী ক’রে আসবে কাছে দূর-
কল্পনাহীন? কবেই-বা পৌঁছবে গন্তব্যে বাস্তবের ট্রেন?

২৫.০১.২০১৫

৫. ভূত

এত করে ভূতগুলো তাড়ালাম
তবু এ-খুঁদকুড়ো- পাটশাক-
দুধভাতে উৎপাত লেগেই আছে

এত করে তাড়ালাম ভূতগুলো-
সেই কবে...
আজো তারা ছাড়ল না পিছু!

সর্ষেতেই ছিল এই ভূত!

১০ জুলাই ২০১৫

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!