১. বলটা গোলে যাবেই
একদিন ওরা করবে না আর এই অবিচার :
বিতাড়ন আর দখলদারি- খবরদারি- নজরদারি...
জনতার এই দুঃখ ও দুর্দশা নেবে স্বীকার ক’রে-
একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম এই আশাতেই।
দূর হলো না অমানিশা- ঘোরান্ধকার এই জীবনের-
না-ফোটা সব ফুলশিশুদের ঝুর ঝুর ঝুর ঝরে-পড়া;
বিধ্বস্ত নগর জুড়ে চলমান এ-হত্যালীলা- ধ্বংসলীলা-
‘যুদ্ধ’-নামে যখন-তখন এই প্রহসন দূর হলো না।
কালোবাজের নোংরা নখে প্রিয় শিকার তেমনি আছে-
হায়েনা আর নেকড়েসহ ভয়াল থাবার হিংস্ত্র যত
রক্তপায়ী দানবগুলোর নৈশভোঁজে মেতে-ওঠা-
নির্বিকার ওই আকাশটারও চেয়ে-থাকা তেমনি আছে।
ফুলপাখিদের আর্তনাদে মন গলেছে কোন শিকারীর?
কবে, কখন, কেঁপেছে কোন আরশ কারো-
মানবগাছের পত্র ছাড়া? মানবতার নামেই কিছু
দন্তহীনা সাপের শুধু ফোঁসফোঁসানি আসছি শুনে।
এমন করেই প্রকাশ্যে খুন হচ্ছে যখন একে-একে
সভ্যতা-সুন্দরে মোড়া’ সব আগামীর স্বপ্নগুলো-
মুকুলেই ঝরছে শুধু ফুলগুলো আর পিশাচদের ওই
ইচ্ছেগুলোই হচ্ছে পূরণ- তখনো কি থাকব আশায়?
এমনতরো ইতিহাসের আমি কেবল দর্শক হব?
মানবতার দোহাই গেয়ে নীরবেই থাকব চেয়ে?
এত যে ফুল ছিন্ন হলো- রক্তনহর বয়ে গেল ভ‚মধ্যতে-
ভুলে যাব? করব ক্ষমা? না-না-না, কখ্খনো না।
ভুলব না কেউ ঘুনাক্ষরেও- ক্ষমা সে-তো দূরের কথা-
ভুলবে না কেউ আমার পরেও পরম্পরায় আছেন যারা।
লড়াই যখন অব্যাহত মুক্তির দিন আসবে ঠিকই :
খেলা যখন চলছে তখন বলটা গোলে যাবেই যাবে।
২২ আগস্ট ১৪
২. প্রাণের পতাকা
শহীদের প্রাণঢালা প্রিয় প্রান্তরে
ফুটেছে যে গাঢ়লাল সূর্যকুসুম
সে আমার পরম আরাধ্য
প্রথম ও শেষ প্রেম;
সীমানা পেরিয়ে যাওয়া
নতুন ভ‚গোল এক বিশ্বমানচিত্রে;
অশুভের সাথে চিরআপসহীন দ্বদ্বের ফল;
অনেক হারিয়ে পাওয়া অনেক কিছু!
শতবছরের শতসংগ্রাম শেষে
কুয়াশাকাফন ফুঁড়ে নিঃসীম নীলিমায় আজ
উড়ছে যে একখ বস্ত্র মানবিক
সে আমার নিজস্ব নিশান।
নরম সবুজ তার কোমল হৃদয়,
ক্ষত আর বিক্ষত পটভ‚মে তবু
আলোর সূর্য-বুকে প্রতিদিন
আলোকিত করে আমার আকাশ!
চিরদিন ওই প্রাণের পতাকা
সবার আকাশে এভাবে উড়–ক;
বাতাস ছড়িয়ে দিক দিগি-দিক তার
তমোহর উজ্জ্বল বিভা।
-০-
৩. সে
কমলাসদৃশ এক বৃহৎ লাটিম
ঘুরতে ঘুরতে ঘুরতে
আপন অক্ষরেখা ছুঁয়ে যায়, আর
নতুন বছরে পা পড়ে তার;
একটি দেশের সমান বয়েসী, তাই
একই লগ্নে দেখা দেয়
উভয়ের জন্মের প্রথম শুভক্ষণ;
যেইক্ষণে একজন রাষ্ট্রীয় উল্লাসে মাতে,
নিজেকে নতুন ক’রে দ্যাখে অন্যজন;
প্রচল দশক যাকে ব্রাকেটবন্দি ক’রে
রেখেছে একটি বিশেষ কোঠায়।
সমান সচল তার দুই হাত-
চলছেও বহুদিন, তবু
দশক-হিশেব শুধু ঘুরেফিরে
শূন্যেই দেখতে পায় তাকে।
উছল তারুণ্য তার মনেপ্রাণে-
চোখেমুখে সবুজের দারুণ উচ্ছ্বাস;
দীর্ঘশ্বাস ভরা চুলগুলো
মনেই হয় না, একদিন আরো বেশি
ঝলমলে, রেশমি-কোমল আর
চমৎকার সুস্বাদ অন্ধকার ছিল;
পুনর্বার দেখেও মনে হয় না-
শরতের কাশবন খুব বেশি দূরে।
-০-
৪. নির্জন পথের ধারে
নির্জন পথের ধারে এইভাবে বসে আছ কমরেড!
লাল-ঝাণ্ডা-হাতে ছুটতে-ছুটতে খুব ক্লান্ত? না-কি
সমাজ বদলানোর দীর্ঘাভিযাত্রার বিশেষ মুহূর্তে
তপ্ত রাজপথ রেখে গভীর নির্জন-পথেই ভাবছ
বিপ্লবের নতুন কৌশল? দেখছ দিগন্ত মুক্তির?
পেট্রোল-বোমায়-দগ্ধ-প্রাণের গন্ধে যখন হিমশিম
বার্নইউনিট- মৃত্যুর সাথে লড়ছে দেশের ভবিষ্যৎ-
নরম সবুজ ঘাসে তখনো বাতাসে ঠেস দিয়ে তুমি
একা পোজ দিচ্ছ ওই ডিজিটাল ক্যামেরার সামনে-
কেবল ইজেলে বন্দী হওয়ার ব্যক্তিগত অভিপ্রায়ে?
নিজের তেমন কোনো কাজ নেই তাই হেঁটে-হেঁটে
প্রকৃতির পাঠ নিতে ঘুরে ফিরি পথ থেকে পথে:
হাত রেখে দুপুরের হাতে বিকেলের মুখোমুখি হই-
গোধূলির সান্নিধ্যে এসে কবির একাকীত্ব নিয়ে
মানুষের সাথে তার সম্পর্ক-সূত্র মেলাই আবার...
তুমি তো সংগ্রামী- আপসহীন- অবরুদ্ধ জীবনে
মুক্তির স্বপ্ন দেখাও প্রতিদিন, আয়েশী-ভঙ্গিতে এত
পোজ দেওয়ার অখ অবসর কোথায় তোমার?
পথে নেমে ভ্রমণ থামালে কী ক’রে আসবে কাছে দূর-
কল্পনাহীন? কবেই-বা পৌঁছবে গন্তব্যে বাস্তবের ট্রেন?
২৫.০১.২০১৫
৫. ভূত
এত করে ভূতগুলো তাড়ালাম
তবু এ-খুঁদকুড়ো- পাটশাক-
দুধভাতে উৎপাত লেগেই আছে
এত করে তাড়ালাম ভূতগুলো-
সেই কবে...
আজো তারা ছাড়ল না পিছু!
সর্ষেতেই ছিল এই ভূত!
১০ জুলাই ২০১৫
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :