• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাবে ছাত্রলীগ?


সৌধ ইসলাম জুন ১১, ২০১৭, ১০:৫৮ পিএম
বদলে যাবে ছাত্রলীগ?

ঢাকা: এমন কোনো ‘অপকর্ম’ নেই যেটা ছাত্রলীগকে দিয়ে করা সম্ভব নয় কিংবা এমন কোনো অমানবিক কর্মও পৃথিবীতে নেই যা, ছাত্রলীগ হাসতে হাসতে করতে পারে না- এমন কথা যত্রতত্র শুনতে পাওয়া যায়। ছাত্রলীগ ‘অঘটনঘটনপটিয়সী’ হিসেবেই রাজনীতির অঙ্গন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দা পর্যন্ত ‘খ্যাতি’ পেয়েছে।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে নিয়ে নানা অভিযোগ আর অপবাদের পাহাড় মাথায় নিয়ে অনেক সময় ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে যান শীর্ষ নেতারাও। কখনও কখনও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে দেয়ার কথাও ভাবেন অনেকেই। তবে শেষ অবধি তা আর হয়ে ওঠে না।

মূলত, আজ যে গৌরব নিয়ে ছাত্ররা রাজনীতির মাঠে দাঁপাচ্ছে, তার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই বায়ান্ন থেকে একাত্তর; এরপর নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের গায়ে ‘সু’ তকমা সেঁটে গেছে। যার জন্য জাতি আজও ঋণী তাদের ওপর। তবে সেই ‘সু’ তকমা আজকের দিনে ‘কু’তে পরিণত হয়ে গেছে।

বিশ্বের রাজনীতির ইতিহাসে কখনও অত্যাচারী আর নিপীড়করা গৌরবের আসন পায়নি। কয়েক দশকে রাজনীতির বিষবাষ্পে বেড়ে ওঠা ছাত্ররাজনীতি বিপথে ধাবিত হয়েছে। যার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থপরতা, লোভ। শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতার লোভের বলি হতে হচ্ছে ছাত্ররাজনীতি। এর বাইরে নয়, ছাত্রলীগ। তাই তাদের অনেকেই লিপ্ত হয়েছে প্রতিহিংসা, লালসা, স্বার্থপরতা আর অমানবিক কর্মকাণ্ডে।   

দলীয় প্রধানসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের ‘অপকর্মের’ লাগাম বার বার টেনে ধরার চেষ্টা করে আসছেন। তবে বার বারই ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছে তা। তবে এবার খুব শক্ত করে লাগাম টেনে ধরতে চাইছেন বাংলাদেশের রাজনীতির ‘সুবচক’ ছাত্রলীগের সাবেক প্রধান ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শাসন-আদর-স্নেহের অভূতপূর্ণ অনুভূতির দরদ দিয়ে তিনি ছাত্রলীগকে সুপথে আনার চেষ্টা করছেন!

হিংস্রতা

এবার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ‘অপকর্ম’ থেকে দূরে রাখতে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেন। নেতাকর্মীদের জীবনে টাকা, চাকরি- যা দরকার তার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাসও দিলেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বললেন, ‘তোমরা অপকর্মে লিপ্ত হবা না। টাকার দরকার হলে আমার কাছে এসো। যখন ছাত্রত্ব শেষ করবে, চাকরি দরকার, আমার কাছে আসবে। এটা নেত্রী আমাকে বলে দিয়েছেন। এমন কিছু করবে না যাতে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।’

তবে সঙ্গে সঙ্গে একথাও সাফ বলে দিলেন, ক্ষমতাসীন দল করলেই যে চাকরি হবে- সে নিশ্চয়তা নেই। বললেন, ‘রিটেনে (লিখিত পরীক্ষা) টিকবে, তারপর। নিয়মমত আমি প্রত্যেকের জন্য চেষ্টা করব।’

রোববার (১১ জুন) বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অডিটোরিয়ামে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসব পরামর্শ দেন ও কিছু বিষয়ে সতর্ক করেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠন যাতে কারও ‘স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার’ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

ছাত্রলীগের পদ ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘অশুভ খেলায়’ মেতে উঠার প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘নিজের দল ভারী করার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, এমপি মন্ত্রীরা ছাত্রলীগের শেয়ার দাবি করলে সেটা দেয়া যাবে না। স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার কেন হবে ছাত্রলীগ? এই অশুভ খেলায় আজ বহু জায়গায় ছাত্রনেতারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের বাসার ড্রয়িং রুমে যাচ্ছে।’

ছাত্রলীগের সাবেক এই প্রধান সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি ছাত্রলীগই করবে। সম্মেলনের পর কমিটি নিয়ে ঢাকায় আসা যাবে না।’ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরোধিতায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বললেন, ‘গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত অপপ্রচার রোধ করতে ছাত্রলীগকে একটা করে ফেইসবুক গ্রুপ তৈরি করতে হবে।’

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘মিছিলে না এলে হলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সিট বাতিল করবে, এটা চলবে না। তাদের বোঝাবে, তোমার ভালো আচরণ দিয়ে তাদের বোঝাবে। জোর করে ক্ষমতার দাপট দেখাবে না।’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে গেল বছরের ২৩ অক্টোবর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে ওবায়দুল কাদের কঠোর ভূমিকা ও রাজনৈতিক শুদ্ধতা আনার চেষ্টা শুরু করেন। 

নির্বাচিত হওয়ার কদিন পরই ৩১ অক্টোবর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেলহত্যা দিবসের কর্মসূচিতে সভামঞ্চে ওঠার পথে সাধারণ সম্পাদকের জন্য ফুল বিছানো হয়। এসময় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আর ফুল নয়, কথা নয়। সবাই কাজে নেমে পড়ুন। জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করুন।’ 

দলের শৃঙ্খলাবিরোধীদের উদ্দেশ করে বলেছিলেন, শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেছেন, মাঝেমধ্যে করেন, কিছু কিছু অপকর্ম করেছেন— প্লিজ, সংশোধন হোন। নতুবা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’ নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘কতিপয় নেতা-কর্মীর ও জনপ্রতিনিধির জন্য নেত্রীর অর্জন ম্লান করতে দেব না। সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক—এটা হতে দেব না।’

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ও পরে রাজনৈতিক বাস্তবতা ভিত্তিক চিন্তা-চেতনা আর বক্তৃতা-বিবৃতির জন্য ছাত্রলীগের সাবেক এই প্রধান সবার নজর কাড়েন। মন্ত্রণালয়ের শীতল বাতাসে সময় কাটানোর চেয়ে মাঠে ঘাটে চষে বেড়ানোতে তিনি সবার প্রিয়ও হয়ে ওঠেন। তিনি দলীয় নেতাদের অপকর্ম আর অন্যায় কোনোভাবেই সহ্য করছেন না। 

সন্ত্রাস

সাধারণ সম্পাদক হয়ে আসার পর তার হস্তক্ষেপে দলে সুবিধাবাদী, সন্ত্রাসীদের সংখ্যা কমে গেছে। পাশাপাশি দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের স্মরণীয় দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করে গেছেন। এ কারণেই তাকে ভারতীয় সিনেমা ‘ফাটাকেস্ট’-এর প্রধান চরিত্র ‘ফাটাকেস্ট’ এর মর্যাদা দেয়া হয়।

তবে এখন দেখার বিষয় ছাত্রলীগ তার কথা কতটা আমলে নেয়। বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রলীগের ‘অপকর্মের’ কথা গণমাধ্যমে খুব একটা চোখে পড়ছে না। তাহলে কি বলা যাবে, ওবায়দুল কাদের যে লাগান টানছেন তা ছিঁড়তে পারার সাধ্য নেই ছাত্রলীগের?

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!