• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় :হাসিনা-জিনপিং


নিজস্ব প্রতিবেদক  অক্টোবর ১৪, ২০১৬, ১০:৪৪ পিএম
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় :হাসিনা-জিনপিং

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এরই ভিত্তিতে দুই নেতাই মনে করছেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখন অনন্য উচ্চতায় উপনীত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘সর্বাত্মক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা’র সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার’ জায়গায় নিয়ে যান শেখ হাসিনা ও শি জিনপিং। 

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর)  দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর দুই নেতা এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।    

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। 
বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী ও চীনের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে নিজ নিজ দেশের পক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিরা এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন। একই সঙ্গে উদ্বোধন করা হয়েছে ছয়টি প্রকল্প।

জানা গেছে, স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো দু’দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামো সড়ক-সেতু, রেল যোগাযোগ ও জলপথে যোগাযোগ, কৃষি, সমুদ্র-সম্পদ, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক। 

চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই শেষে ব্রিফিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘ছয় বছর পর বাংলাদেশের মতো একটা সুন্দর দেশ সফর করতে পেরে আমি খুবই খুশি হয়েছি। চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু এবং ভালো অংশীদার। আমি মনে করি, এই সফর সামগ্রিকভাবে দুই দেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে নানা চুক্তি সই হয়েছে। কৌশলগত যোগাযোগের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে আরো উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

শি জিনপিং বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন নতুন যুগের সূচনা করেছে। ২০১৭ সাল হবে চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের বছর। বাংলাদেশ ও চীন ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধু। বাংলাদেশের বড় প্রকল্পগুলোতে সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থার সম্পর্ক আরো মজবুত করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চীন প্রস্তুত রয়েছে। ’

তিনি বলেন, ৪১ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাসে বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্ব সব সময়ই সামনের দিকে এগিয়েছে। দুই দেশের সহযোগিতার এই সম্পর্ককে আমরা আরো উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই। কারণ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ও চীনকে উন্নয়নের একই চ্যালেঞ্জের পথে হাঁটতে হচ্ছে। চীনের মানুষ এক মহৎ রূপান্তরের জন্য কাজ করছে। আর বাংলাদেশ কাজ করছে সোনার বাংলা গড়তে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা “এক চীন নীতি”তে আমাদের জোরালো সমর্থন দিয়েছি। “ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড” চায়না নীতিতে আমরা পুনরায় সমর্থন ব্যক্ত করেছি। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আমাদের উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে আমরা একমত হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ব্যবসা ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও কৃষি খাতে একযোগে কাজ করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। আজ আমরা এখানে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সাক্ষী হলাম। এই চুক্তিগুলো হয়েছে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সমুদ্র অর্থনীতি, বিসিআইএম-ইসি, সড়ক ও সেতু, রেলপথ, পাওয়ার, সমুদ্র, আইসিটি, শিল্প উৎপাদন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতার উন্নয়নসংক্রান্ত।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা ছয়টি প্রকল্পও উদ্বোধন করেছি। এই চুক্তি ও প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের পর দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া উচ্চপর্যায়ে পৌঁছাবে। আজকে আমরা ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র থেকে কৌশলগত অংশীদারত্বের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছি।’ 

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কৌশলগত অংশীদারত্বের অধীনে আমরা দুই দেশের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সম্মত হয়েছি। আমাদের এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক মধ্য আয়ের দেশ এবং পর্যায়ক্রমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উপনীত হওয়া। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বঞ্চনামুক্ত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।’

উল্লেখ্য, সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে চীনা প্রেসিডেন্ট রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এর পর সকাল ১০টায় ভারতের গোয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে তাঁকে বিদায় জানাবেন। গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন শি জিনপিং। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম
 

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!