• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত সীমান্তে যুদ্ধ প্রস্তুতি চীনের


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুলাই ৭, ২০১৭, ১১:৫৬ পিএম
ভারত সীমান্তে যুদ্ধ প্রস্তুতি চীনের

ঢাকা: ভারতের সিকিম রাজ্যের সীমান্তের ওপারে চীনা ভূখণ্ডে ভারতীয় সৈন্যদের অনুপ্রবেশকে ঘিরে অচলাবস্থা নতুন মোড় নিয়েছে। সম্ভাব্য যুদ্ধের আশংকায় তিব্বত সীমান্তে প্রস্তুতি মহড়া শুরু করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। প্রায় ৫ হাজার ১শ’ মিটার উচ্চতার দুর্গম এলাকায় পিএলএ’র একটি সাঁজোয়া ব্রিগেড এই মহড়া শুরু করেছে।

চীনের সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, এই মহড়ার মধ্য দিয়ে পিএলএ’র সর্বাধুনিক ব্যাটল ট্যাংক টাইপ ৯৬বি’র পূর্ণ যুদ্ধ প্রস্তুতি’র পরীক্ষা করা হচ্ছে। মহড়ায় অংশ নেয়া ট্যাংকের ছবি প্রকাশ করে চীনে সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া শুক্রবার (৭ জুলাই) জানায়, যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, যুদ্ধকালীন অপারেশন কমান্ড, যুদ্ধ সমন্বয় ও অন্যান্য বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার এই মহড়া চালানো হচ্ছে। মহড়ায় লাইভ-ফায়ার শুটিং প্রশিক্ষণ চলছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৬ জুন সিকিম রাজ্যের সীমান্ত লাগোয় দোকলাম এলাকায় ভারতীয় সৈন্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে গিয়ে চীনের একটি সড়ক নির্মাণ কাজে বাধা দিলে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এই ভূখণ্ড কে নিজের দাবি করে চীন ভারতকে সৈন্য সরিয়ে নিতে বলে।

চীন বলছে, ভারতীয় সৈন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দিয়ে সমস্যা তৈরি করছে। ভারতীয় সেনাদের অনুপ্রবেশ দুই দেশের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চুক্তি এবং দুই দেশের নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক ঐক্যমত্যের লঙ্ঘন। অচলাবস্থা নিরসনে দেশটি গত বুধবার (৫ জুলাই) আবারো অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা সৈন্যদের সরিয়ে নিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানায়। তবে, চীনের এ আহ্বানের প্রতি এখন পর্যন্ত ভারত কোন কর্ণপাত করেনি। এখন ভারতীয় সৈন্যরা নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে একটি কৌশলগত এলাকায় পরিখা খনন শুরু করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানটি পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের সংযোগ সড়কের অদূরে এবং একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে মাত্র ৩০ কি.মি. দূরে। ভুটান সীমান্তের কাছে ঝালং এলাকায় জলঢাকা নদীর ওপরে এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পের ওপর দিয়ে একটি সেতু ভূবেষ্টিত হিমালয়ান রাষ্ট্রটিকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে বলা হয়, ভুটানের অদূরে দোকলাম মালভূমিতে চীনারা যে সড়ক নির্মাণ করছে তাতে ওই এলাকার ওপর চাপ তৈরি হবে। পাশাপাশি, চীনের স্থাপনা সেই দেশের সেনাবাহিনীকে ‘ঘোড়ার পিঠে বসে ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো’ সুবিধা দেবে। এতে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর ঝুঁকির মুখে পড়বে। সরু এক চিলতে ভূখণ্ডের এই করিডোর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এদিকে, চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে নিজের সেনাবাহিনীর শক্তিমত্তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত আস্থা রাখা ভারতের উচিত হবে না। এসব করলে চীন ভয় পেয়ে সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে আপোস করবে বলে যদি তারা ভেবে থাকে তাও হবে ভুল।

পিএলএ’র অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ঝু হেপিং টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ভারতীয় সৈন্যরা দোকলামে চীনের সড়ক নির্মাণ বন্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, সৈন্য অনুপ্রবেশ করিয়ে ভারত তার মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছে। আসলে এটা এমন এক সরু জায়গা যেখানে খুব বেশি সংখ্যায় সৈন্য রাখা সম্ভব নয়। সাবেক চীনা জেনারেল প্রশ্ন রেখে বলেন, গুটি কতক সামরিক যান ও সৈন্য পাঠিয়ে চীনের উন্নয়ন কার্যক্রম ও নির্মাণ বন্ধ করা যাবে বলে আপনি মনে করেন? চীনের সেনাবাহিনী ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। তারা ভারতীয়দের ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ভারতের উষ্কানিতে গতানুগতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না বা এতে কোন প্রভাব পড়বে না।

তিব্বতের মহড়া সম্পর্কে সিনহুয়ার রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, এতে সেনা অফিসারদের কমান্ড স্কিল ট্রেইনিং, কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, কমব্যাট ইউনিটগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও যুদ্ধ প্রস্তুতির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। তবে, কখন থেকে চীনা সেনা বাহিনী এই যুদ্ধপ্রস্তুতি মহড়া শুরু করেছে এবং তিব্বতের কোথায় তা হচ্ছে সে বিষয়ে রিপোর্টে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!