• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ইসির সঙ্গে সাবেক আমলাদের বৈঠক

ভোট করতে চান আমলারা


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৭, ২০১৭, ১২:৪৮ পিএম
ভোট করতে চান আমলারা

ঢাকা : ভোট করতে চান সাবেক আমলারা। এজন্য নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ বিলোপ চাইছেন তারা। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকের পর ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার যদি মনে করে তাহলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদ বিলোপ বা পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন লাগবে।

এদিকে, নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ পরিবর্তন আনা ঠিক হবে না। আমলাদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হলে প্রশাসনের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়বে।

প্রসঙ্গত, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ অনুচ্ছেদে (উপ ধারা এফ ও এইচ) বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি থেকে অবসর বা অপসারণের তিন বছর পার না হলে প্রার্থী হওয়া যাবে না। সশস্ত্রবাহিনী বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক চাকুরেদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সব কিছু বুঝে শুনে করতে হবে। সবকিছুর ভালো ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। এ ধরনের বিধান বিলোপ বা শর্ত শিথিল নিয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনো লিখিত প্রস্তাব আসেনি। স্টেকহোল্ডার যারা রয়েছেন, তাদের কাছ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে তা পর্যালোচনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরুর আগে তারা আইন-বিধিগুলো নিজেরা পড়ে নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেই আইন সংস্কারের এই আলোচনা চলছে। জাতীয় নির্বাচনে কোনো দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছর ওই দলের সদস্য পদে থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল এক সময়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আগে ওই শর্ত বিলোপ করা হয়। আর এবার প্রার্থী হতে সরকারি কর্মকর্তাদের অবসর বা পদত্যাগের পর তিন বছর পার করার বিধানটি বিলোপ করার প্রস্তাব নিয়ে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে তারা জানান।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও আইন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকজন সাবেক আমলা ইতিমধ্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা চান, বিধানটির বিলোপ হোক। আগেও এ ধরনের একটি বিধান মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়েছিল। এখন সরকার যদি মনে করে আমলাদের শর্ত শিথিল করবে, তাহলে কেবিনেট থেকেই প্রস্তাব যেতে পারে। আর আগামীতে ইসির সংলাপে এ বিষয়ে প্রস্তাব এলেও তা নিয়ে পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

কিন্তু নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার কোনো আলোচনা ছাড়াই দলীয় সদস্যপদের শর্ত শিথিল করায় নির্বাচনে দলবদল ও মনোনয়ন বাণিজ্যের পথ তৈরি হয়। একই পথ ধরে আমলাদের প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হলে প্রশাসনের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়বে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, আমলাদের প্রার্থিতার শর্ত শিথিল করা কোনোভাবেই সমীচীন হবে না। তিন বছরের ওই বাধা না থাকলে অনেকেই চাকরিতে থাকা অবস্থায় নিজের এলাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। বিধানটি তুলে দিলে প্রশাসনে দলীয় প্রভাব আরো বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্টের  শঙ্কা থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের শেষভাগে নভেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগে আইন সংস্কারসহ নানা বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে ইসি। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আসছে জুলাইয়ে আইন-বিধির সংশোধনী আনতে পরিকল্পনা গ্রহণ; অগাস্টে প্রস্তাবিত আইন ও বিধির খসড়া প্রণয়ন; আলোচনার জন্যে চূড়ান্তকরণ এবং আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরে এজেন্ডা তৈরি ও সময়সূচি নির্ধারণের কথা রয়েছে তাদের কর্মপরিকল্পনায়।

ইসির সঙ্গে সম্ভাব্য সংলাপ সামনে রেখে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ আইন সংস্কারের বিভিন্ন প্রস্তাব তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবদুল আলীম। তিনি বলেন, নতুন ইসি ভোটের আগে সবার সঙ্গে আলোচনা করবে আশা করি। আমরাও কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছি, কোথায় কোথায় সংস্কার করলে ভালো হবে। সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!