• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিত্ব না ছাড়লে দল থেকে বহিষ্কার


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৪, ২০১৭, ১০:১৯ এএম
মন্ত্রিত্ব না ছাড়লে দল থেকে বহিষ্কার

ঢাকা : সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগের আগে তিনি সরাসরি এ ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। গতকাল বুধবার (০৩ মে) বনানী কার্যালয়ে এ কথা বলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা না বিরোধী দল, না সরকারি দল। মানুষের মধ্যে আমাদের দলের ভূমিকা নিয়ে হাজারও প্রশ্ন কাজ করে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে আমাদের উচিত মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘শুধু আমি নই, বাকিরাও মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবে।’

এদিকে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিত্ব না ছাড়লে দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন জাতীয় পার্টির এক মন্ত্রী এবং দুই প্রতিমন্ত্রী। মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সভায় এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।

সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন। এ সময় দলের সংসদ সদস্যরাও এরশাদ এবং রওশন এরশাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য মন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানান।

যদিও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এখনই পদত্যাগের সময় হয়নি বলে মন্তব্য করেন। দলের আরেক সংসদ সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পদত্যাগ করলে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

এ সময় জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘পার্টি চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমি তা মেনে নেব।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছে। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী রয়েছেন। এ নিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে দলটিকে। মঙ্গলবার রাতে সংসদ ভাবনে বিরোধীদলীয় নেতার কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ নিজেই এ আলোচনার সূত্রপাত করেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে রওশন এরশাদ উপস্থিত তিন মন্ত্রীর উদ্দেশে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘তোমরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করো। তোমাদের জন্য বাইরে মুখ দেখানো যায় না। মানুষ আমাদের নিয়ে সমালোচনা করে। মন্ত্রিপরিষদে থাকায় জাতীয় পার্টির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তোমরা দ্রুত পদত্যাগ করবা, নইলে দল থেকে বাদ দেয়া হবে।’

রওশন এরশাদের এ বক্তব্যের পর পরই দলের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আপনারা মন্ত্রিপরিষদে থেকে দলের কোনো লাভ হয়নি। আপনারা দ্রুত পদত্যাগ করেন।’

তিনি এ সময় আরও বলেন, ‘চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াতের দুই মন্ত্রী ছিলেন। তারা জামায়াতকে সারা দেশে সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছেন। কিন্তু আপনারা তিনজন মন্ত্রী থাকার পরও দলের কোনো লাভ হয়নি, বরং ক্ষতি হয়েছে। আপনাদের কারণে দলের এবং নেতাকর্মীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। আপনারা যদি দ্রুত পদত্যাগ না করেন, তাহলে আগামী নির্বাচনে আমাদের কড়া মাশুল দিতে হবে।’

এ সময় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নীরব ছিলেন। তখন দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এরশাদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি (এরশাদ) কী বলেন? এ বিষয়ে আপনার মতামতই চূড়ান্ত। জাতীয় পার্টি করলে আপনার আদেশ মানতে সবাই বাধ্য। আমরা আপনার মতামত জানতে চাই।’

জবাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আমি তো আগেই ওদের বলেছি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে। আমিও সবার সঙ্গে পদত্যাগ করব। মন্ত্রিসভায় থাকার কারণে আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমি চাই, সবাই এখনই পদত্যাগ করুক। আমরা যদি সত্যিকারের বিরোধী দল হতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচনে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

রওশন এরশাদ এ সময় এরশাদের বক্তব্য সমর্থন করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আরও বলেন, ‘আমাদের কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে হবে। এজন্যই আমি বারবার মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলছি। প্রয়োজনে আমিও সবার সঙ্গে পদত্যাগ করব।’

তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এলে জাতীয় পার্টিই লাভবান হবে। বিএনপি রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছে। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টিই পারে বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে। আর এজন্য মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!