• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাওবাদ থেকে সরে আসছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ২৪, ২০১৭, ০৭:৩২ পিএম
মাওবাদ থেকে সরে আসছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি

চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

ঢাকা: যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ক্রমেই মাওবাদ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। হাল আমলে টিকে বৈশ্বিক নেতৃত্বে যেতে হলে চীনকেও নতুন কর্মকৌশল নিতে হবে। এজন্য নতুন চিন্তার সন্নিবেশ করতে হচ্ছে পার্টির গঠনতন্ত্রে।

এমন চিন্তা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির প্রভাব বাড়াতে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর চিন্তাকে দলীয় গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছে চীন কমিউনিস্ট পার্টি। আধুনিক চীনের রূপকার হিসেবে স্বীকৃত মাও সে তুং-এর পর শি জিনপিং হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় যার চিন্তা দলীয় গঠনতন্ত্রে মতাদর্শের মর্যাদা পেল।

মতাদর্শের মর্যাদা পাওয়ায় মাও-এর মতবাদ যেমন মাওবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়, শি’র চিন্তাধারাও বিবেচিত হবে শি-বাদ হিসেবে। এর বিরুদ্ধে যে কোনও চ্যালেঞ্জ এখন থেকে কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধের অবস্থান বলে বিবেচিত হবে। এই থেকে ধারণা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে মাওবাদের জায়গায় শি-বাদ স্থান করে নিবে।

এক সপ্তাহে আগে শুরু হওয়া চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নেন। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশ ‘কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন’-এর শেষ দিনে তার চিন্তাধারাকে পার্টির গঠনতন্ত্রে স্থান দেওয়ার ব্যাপারে ভোটাভুটি হয়।

বেইজিং এর গ্রেট হলে চূড়ান্ত এ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন কমিউনিস্ট পার্টির ২ হাজার ২০০ প্রতিনিধি। সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাস হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, দলীয় গঠনতন্ত্রে স্থান পাওয়ার পর মাও-এর সমান্তরালে ক্ষমতাবান হলেন শি।

কংগ্রেসের শুরুতে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিন ঘণ্টা ভাষণ দেন শি। ওই ভাষণে প্রথমবারের মতো ‘নতুন যুগের চীনা পদ্ধতির সমাজতন্ত্র’ সংক্রান্ত শি জিনপিং-এর চিন্তাধারা’ নামে নিজের মতামত তুলে ধরেন তিনি। পরে পার্টির এক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘কংগ্রেস দ্ব্যর্থহীনভাবে শি জিনপিং-এর চিন্তাধারাকে দলীয় গঠনতন্ত্রের মূলনীতি অংশে স্থান দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে’।

এর আগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দুই নেতার চিন্তাধারা পার্টির গঠনতন্ত্রে তাদের নামসহ মতবাদ আকারে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এদের একজন মাও সে তুং। অপরজন দেং শিয়াও পিং। মাও ক্ষমতাসীন থাকাকালেই গঠনতন্ত্রে স্থান পেলেও দেং শিয়াও পিংয়ের মৃত্যুর পর তার চিন্তাধারা নামযুক্ত অবস্থায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গঠনতন্ত্রে মতাদর্শের মর্যাদা পায়।

মাও ৎসে-তুং বা মাও সেতুং বা মাও জেদং নামে পরিচিত। ১৮৯৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া এই নেতার মৃত্যু হয় ১৯৭৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। চীনা বিপ্লবী মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। ১৯৪৯ সালে সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চীন শাসন করেন।

কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া মাও সেতুং ছোটবেলা থেকেই খামারে কাজ করতেন। বড় হয়ে কাঁচামালের ব্যবসা করে মধ্যবিত্ত হন। মাও সেতুং লেখা-পড়া শেষ করলে ১১ বছরের এক মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। যদিও প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার সংসার করা হয়নি। পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

তার চার স্ত্রী ও সন্তান সংখ্যা ছিল দশ জন। বৌদ্ধ ধর্মে ভক্তি থাকলেও তিনি ছিলেন নাস্তিক্যবাদী।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক অবদান, সমর কৌশল এবং তার কমিউনিজমের নীতি এখন একত্রে মাওবাদ নামে পরিচিত। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দেশ শাসনে তার তত্ত্ব এখনো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কমিউনিস্ট পার্টির অনুসরণ করে।

তার মৃত্যুর ৪২ বছর পরে মাওবাদের জায়গায় স্থান পাচ্ছে নতুন মতবাদ। আর এই মতবাদের প্রবর্তক হলেন চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গঠনতন্ত্রে কমিউনিস্ট পার্টির নতুন এই সংযোজন দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছে বর্তমান নেতৃত্ত্ব।

আধুনিক চীনকে নতুন রূপ দিতে এই সিদ্ধান্ত সহায়ক ও কমিউনিস্ট পার্টি যে প্রগতিশীল চিন্তাধারাকে লালন করে এমন বার্তা সমর্থকদের কাছে দিতে চেয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকরা।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!