• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাকে খুন করে পালিয়েছে বাবা, নাবা এখন কোথায় যাবে?


এম. মজিবুল হক কিসলু মে ১৩, ২০১৭, ০৭:১৮ পিএম
মাকে খুন করে পালিয়েছে বাবা, নাবা এখন কোথায় যাবে?

বরগুনা: নাম তার নাবা। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য অপেক্ষায় সে। এর মধ্যেই ঘটে গেছে তার জীবনের ভয়াবহতম ঘটনা। বাবার হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন তার মা। তার জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। সে কোথায় যাবে, কী করবে?

শুক্রবার (১২ মে) রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ৮ নং ইউনিয়নের দক্ষিণ হেউলিবুনিয়া গ্রামে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যার ওই নির্মম ঘটনাটি ঘটে।

নিহত সুম্মিতা জাহান ইলোরা (৪০) বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা আর তার ঘাতক স্বামী মিজানুর রহামন হিরু (৪৫) দক্ষিণ হেউলিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। 

আজ থেকে ১৮ বছর আগে ইলোরাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন হিরু। তাদের সংসারে এক মেয়ে নাবা আর এক ছেলে। বড় মেয়ে নাবা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করে স্বপ্ন দেখছিল কলেজে যাওয়ার। ছোট ছেলেটির বয়স মাত্র ৬ বছর।

কিশোরী থেকে তরুণী হয়ে ওঠা নাবার সামনেই বাবা নির্যাতন করতেন তার মায়ের ওপর। তাও আবার যৌতুকের দাবিতে। মায়ের দিকে তাকাতে পারছিল না মেয়ে। একদিন তো তারও বিয়ে হয়ে যাবে। তার স্বামীও কি এভাবে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করবে তার ওপর? তখন বাবা কি জামাইয়ের সেই দাবি পূরণ করবে? এমন নানা প্রশ্নে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করছিল নাবা। এর মধ্যেই মাকে বরণ করতে হলো নির্মম ভাগ্য।

মাকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল নাবা। এক পর্যায়ে নিজেকে শক্ত করে নেয়। সে সাংবাদিকদের জানায়, গেল কয়েক বছর ধরেই তার মার কাছে যৌতুক এনে দেয়ার দাবি করছিলেন বাবা। এজন্য মায়ের ওপর চালাতেন নির্যাতনও। শুক্রবার রাতেও (১২ মে) একই ঘটনা ঘটে। তার নানা বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেয়ার জন্য মায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বাবা। এক পর্যায়ে নির্যাতনও শুরু করে। কেউই তার বাবাকে থামাতে পারছিল না। 

নাবা আরো জানায়, রাত ১২টার দিকে তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বরগুনা জেনারেল হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, ঘটনার খবর শোনার পর হাসপাতালে ছুটে আসেন বরগুনা পুলিশ সুপার বিজয় বসাক পিপিএম। তিনি দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে নিহত গৃহবধূ ইলোবার বাবার পরিবার জামাইয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করছেন।

তাহলে নাবা এখন কী করবে? এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। মা ছিলেন তার ভরসা। বাবার নির্মম নির্যাতনে তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এদিকে মাকে হত্যার দায়ে বাবা পলাতক। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। হয়তো আমৃত্যু কারাদণ্ড কিংবা ফাঁসিও হতে পারে। এখন নাবার গন্তব্য কোথায়? কী করবে সে? বিয়ে করলে তার বরও যদি যৌতুক দাবি করে নির্যাতন চালায় তার ওপর? তখন কি তার যৌতুকলোভী খুনি বাবা জানতে পারবেন? কিছু করতে পারবেন? এমন সব প্রশ্নে দিশেহারা তরুণী নাবা!

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!