• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাঠে নামতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২১, ২০১৭, ১০:২৩ এএম
মাঠে নামতে পারাই বড় চ্যালেঞ্জ

ঢাকা :  নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেন সদ্য ঘোষিত বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা। তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দলকে সুসংগঠিত করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা। দলে ছোটখাটো বিভেদ থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি মৃত গণতন্ত্রকে জীবিত করা।

ঢাকা মহানগরে বিএনপির যত নেতা-কর্মী রয়েছে, অন্য কোনো দলের তা নেই। আমাদের দল এখনো ঢাকা মহানগরে শক্তিশালী। হয়তো প্রশাসনের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। আমি কখনই মনে করি না, ঢাকা মহানগরে বিএনপি দুর্বল। তবে আমাদের দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আরও উজ্জীবিত করে তুলতে হবে। সংগঠনে গতি আনতে হবে। শক্তিশালী ঢাকা মহানগরের মাধ্যমেই শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে উঠবে।

বিএনপি বিগত সময়ে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে এটাও ঠিক নয়। বিএনপি আন্দোলনে সফল হয়েছে বলেই সরকারকে জোরজবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে।  দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের ইমেজ সংকট আগামী দীর্ঘদিনের জন্য তাদের বহন করতে হবে। বিএনপি জনগণের দল। জনগণের শক্তির ওপরই সব সময় বিশ্বাস করে বিএনপি। আমরা জনগণের সেন্টিমেন্ট ও ভোটাধিকারকে প্রাধান্য দিয়েই আন্দোলনের পথে রয়েছি। ক্ষমতা আমাদের কাছে মুখ্য নয়। যখন একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন হবে, জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, তখনই বিএনপি ক্ষমতায় আসবে ইনশা আল্লাহ। বিএনপি অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তাও করে না।

সংগঠন গোছানো এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামতে পারা হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন নেতৃত্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, সংগঠন গোছানো এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামতে পারা হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন নেতৃত্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এর আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস এ ক্ষেত্রে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট, অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব এবং নবগঠিত কমিটি নিয়ে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীর হতাশার কারণে শেষ পর্যন্ত এই কমিটি কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা করছেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি সামনের দিনে আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এই কমিটি করা হয়েছে। এদের আন্দোলন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা আছে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, সামনের দিনে আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে হলে ঢাকায় তা জোরদার করতে হবে। এ চিন্তা থেকে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর বিএনপি ক্রমান্বয়ে কর্মসূচিতে যাবে।

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি (আংশিক) ঘোষণা করে বিএনপি। উত্তরের সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ূমকে। বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলার আসামি কাইয়ূম দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। দলটির নেতারা মনে করেন, শিগগির তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও আসা যাওয়ার মধ্যে বা আত্মগোপনে থাকেন। এ অবস্থায় উত্তরে নতুন কমিটি করা বা আন্দোলন চাঙা করা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ূম বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা দিক নির্দেশনা দেয়া কঠিন কিছু নয়। তার সঙ্গে নেতাকর্মীদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মূল চ্যালেঞ্জ মানুষের ভোটের অধিকারের আন্দোলন সফল করা।

প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাস। ১৯৯৬ সালে খোকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে ১৪ মে তাকে আহ্বায়ক করে কমিটি হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে এই কমিটির ভূমিকা নিয়ে দলে প্রশ্ন ওঠে। কারণ ঢাকায় নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। খোদ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ঢাকা কমিটিকে ব্যর্থ বলেছিলেন।

এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মহানগরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। ওই বছরের ১৮ জুলাই খোকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খানকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি করা হয়। ওই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানায় কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচিতেও ওই কমিটিকে দেখা যায়নি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিটিতেও খোকা এবং আব্বাসের সমর্থকদের প্রাধান্য আছে। তবে খোকার অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা তুলনামূলক বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যানের অনুসারীরা কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। খোকা-আব্বাসের অনুসারীদের অবস্থান কেমন হয়, তা-ও নতুন দুই কমিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রায় দুই দশক ধরে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল আছে। দীর্ঘদিন থেকে ওয়ার্ড বা থানায় নতুন কমিটি না হওয়ায় জট লেগে আছে।

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেন সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর বিএনপির দক্ষিণ শাখার সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তিনি বলেন, ‘আমার সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দলকে সুসংগঠিত করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করা। দলে ছোটখাটো বিভেদ থাকলে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি মৃত গণতন্ত্রকে জীবিত করব। ’

হাবিব উন নবী খান সোহেল এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, তাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন শক্তিশালী করা। গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন-এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে রাজপথে আন্দোলন তৈরি করা এবং ভোটারবিহীন কোনো নির্বাচন হলে তা প্রতিরোধ করা। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তারা সফল হবেন বলে আশা করেন।

ঢাকা মহানগর বিএনপিতে ক্ষোভ ও হতাশা: নতুন কমিটিতে জায়গা না পেয়ে বা প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কমিশনার কমিটিতে পদ পাননি। এটি নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ আছে। তবে এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি, তাই তাঁরা এখনো আশাবাদী। আবার কেউ কেউ পদ পেয়েও খুশি নন। নবীউল্লাহ নবী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন। কমিটিতে তাকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি তার অনুসারী অনেকেও হতাশ হয়েছেন। নবী বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার চিন্তা করছেন।

জানতে চাইলে নবীউল্লাহ নবী এ প্রতিবেদককে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য নতুন কমিটি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। তবে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণে দু-এক দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।

নেতাকর্মীদের ক্ষোভ-হতাশার বিষয়ে হাবিব উন নবী বলেন, নতুন কমিটি হলে কিছু সমস্যা থাকে। সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করা হবে। আর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ূম বলেন, তিনি সেভাবে কোন ক্ষোভ হতাশা দেখছেন না। নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!