• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর

মার্কিন-আরব কূটনীতিতে সফলতা


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৫, ২০১৭, ১২:৪৯ পিএম
মার্কিন-আরব কূটনীতিতে সফলতা

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরব ইসলামিক-আমেরিকান (এআইএ) যোগদানকে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিকরা। তারা বলছেন, এআইএ সম্মেলনে যোগ দেয়ার মধ্যদিয়ে আরব বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক জোরদার, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্ম্পক উন্নয়নের মত দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই সফরের মধ্যদিয়ে করেছেন শেখ হাসিনা। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান বিশ্বনেতাদের কাছে আরো একবার দৃঢ়কণ্ঠে উত্থাপনকে কূটনৈতিকভাবে সফল বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ সম্মেলনে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দফা প্রস্তাব মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরেই তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপ এবং বাংলাদেশ সফরে আসতে তার ইতিবাচক মনোভাব বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির একটি অন্যতম অর্জন বলেও মনে করা হচ্ছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সরকারের ঘনিষ্ঠরা সেভাবেই এই সফরকে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সফরের মধ্যদিয়ে মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পুর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় শক্তিশালি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে আরব বিশ্বের নেতৃত্বে থাকা সৌদি প্রবাসী দেশের শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে সৌদিতে বাংলাদেশী শ্রমিক না নেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পুর্বের তুলনায় সৌদি সহযোগিতাও কমে এসেছে। এছাড়া বর্তমান সরকার সম্পর্কে আরব বিশ্বে একটি ভুল বার্তা দেয়া হয়েছিল।  এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্যদিয়ে এসব কিছুতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

তারা বলছেন, এআইএ সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরব বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকের কারণে সৌদি আরব ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের উপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা প্রত্যাহার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া এই দুটি দেশের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা বাড়বে বলেও আশা করছেন কুটনৈতিকরা।

অন্যদিকে, বর্তমানে সরকারের আগের মেয়াদে ড. ইউনুসকে নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যে বিরোধ তৈরি হয়েছিল এই সফরে সেটিও প্রশমিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরেই তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপ এবং বাংলাদেশ সফরে আসতে তার ইতিবাচক মনোভাব বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির একটি অন্যতম অর্জন বলেও মনে করা হচ্ছে। এতে করে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ঢাকার সর্ম্পক আরও সুসংহত হবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

গত ৯ মে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের বিশেষ আমন্ত্রণপত্র নিয়ে দেশটির তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ড. আওয়াদ বিন সালেহ ঢাকা আসেন। যদিও এর কয়েকদিন আগে এই বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ‘আরব ইসলামিক-আমেরিকান’ (এআইএ) সম্মেলনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সম্মেলনে অংশ গ্রহনের এই সফরকে বহুপক্ষীয় এই আয়োজনে সীমাবদ্ধ না রেখে এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উপাদান যুক্ত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সম্মেলনে অংশ নেবেন- তা জানার পর এতে আরো গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের ব্যবস্থাও করা হয়। আর এখানেই অন্যরকম সফলতা পেল বাংলাদেশের কূটনীতি। ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারের লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদারের আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বক্তব্যে একই ধরনের অবস্থানের কথা জানান।

সৌদি আরবের নেতৃত্বে মুসলিম দেশগুলোর জোট নিয়ে অবস্থানের ব্যাপারে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, এই জোটের একটা মিলিটারি সাইড আছে, একটা পলিটিক্যাল সাইড আছে। আমরা প্রাইমারিলি পলিটিক্যাল সাইডে শতভাগ অংশ নিচ্ছি। সামরিক দিকে কোন পরিস্থিতিতে আমরা সৈন্য পাঠাব তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই ব্যাখ্যা করেছেন। সেটা হল, দুই পবিত্র স্থান (মক্কা ও মদিনা) আক্রান্ত হলে তা রক্ষার জন্য আমরা সৈন্য পাঠাব।

সৌদি বাদশাহ ও দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে গত শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ পৌঁছান। শেখ হাসিনা গ্লোবাল সেন্টার ফর কমব্যাটিং এক্সট্রিমিষ্ট থট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। সফরকালে শেখ হাসিনা মক্কায় হারাম শরিফে পবিত্র ওমরা পালন করেন এবং মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। সফর শেষে গতকাল দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!