• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মিতু হত্যাকাণ্ড: আলোচনায় নতুন মোড়


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১, ২০১৭, ১০:১৩ এএম
মিতু হত্যাকাণ্ড: আলোচনায় নতুন মোড়

ঢাকা : এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও তা প্রথম দিকে নাকচ করে দিয়েছিলেন তার শ্বশুর মোশারফ হোসেন ও শাশুড়ি শাহিদা মোশারফ। কিন্তু তারাই এখন আবার ওই হত্যাকাণ্ডে বাবুলের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে অভিযোগ করছেন।

মেরাদিয়ার ভুঁইয়াপাড়ার বাসায় গত সোমবার বিকালে মোশারফ ও শাহিদা মোশারফ এই প্রতিবেদককে বলেন, এতদিন দুই নাতি-নাতনির কথা চিন্তা করেই মুখ খোলেননি তারা। বাবুল আক্তার তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ায় এখন তারা মুখ খুলতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবারের এসব বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখছি। তদন্ত কাজ প্রতিদিনই ইমপ্রুভ হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কোনও বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে মন্তব্য করা যাবে না।’

বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশারাফ হোসেন বলেন, ‘বাবুলকে সন্দেহ করার অনেক কারণ রয়েছে। ঘটনার পর থেকেই সে কোনও কথা স্পষ্ট করে বলছে না। এমনকি গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাকে নিয়ে যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, কী নিয়ে কথা হয়েছে, তারও কিছুই জানায়নি সে। চাকরি থেকে তাকে জোরপূর্বক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, নাকি পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেয়া হয়েছে, তাও কোনও দিন শেয়ার করেনি। চাকরি ফিরে পাওয়ার জন্য কোনও আবেদনও করেনি। সবসময় তার মধ্যে কিছু তথ্য আড়াল করার প্রবণতা দেখা গেছে। যদি সে জড়িত না হয়, তাহলে সে এমন আচরণ করবে কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগে এতটা বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি যে, মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সে (বাবুল আক্তার) জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে সে আমাদের বাসা থেকে সরে গেল কেন? এখন কেন নাতি-নাতনিদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করতে দেয় না? ও ভেবেছিল সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কেউ তার সম্পৃক্ততা খুঁজে পাবে না। সে এই অপেক্ষায় ছিল!’

বাবুল আক্তারের শ্বশুর বলেন, ‘মিতু হত্যার পর বাবুল আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। খবরও দেয়নি। অন্যদের কাছে শুনেছি। মামলার বাদীও সে হয়েছে। কিন্তু বাদী হিসেবে সে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে না। একবারের জন্যও সে চট্টগ্রাম যায়নি। পুলিশ যখন তাকে তলব করেছে, তখনই গেছে। এসবই তো বলে দেয়, সে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে জড়িত।’  

বাবুল আক্তারের শাশুড়ি শাহিদা মোশারফ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মিতুকে তার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সদস্যরা নির্যাতন করত। একাধিকবার ও সুইসাইড করতে চেয়েছিল। বাড়িতে চলে আসার চেষ্টা করেছিল। বাবুল তাকে আসতে দেয়নি। হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন আগে মিতু ফোন করে বলেছিল, মাহিরের বাবা (বাবুল) আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়ে গেছে। আমি তাকে বলেছি, তা হলে তো ভালোই। সংসার কর। সুখে-শান্তিতে থাকো। কিন্তু এই ভালো হওয়ার পেছনে যে অন্য কারণ ছিল, তা বুঝিনি। ভেবেছি, মিতু নেই, বাবাও যদি না থাকে বাচ্চা দুটি কাকে নিয়ে বাঁচবে? মাহির আমাদের বলত, আমার বাবাকে পুলিশে দিও না। এখন নাতি-নাতনিকে যেহেতু বাবুল নিয়ে গেছে, তখন মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছি। আমরা জানতে চাই, মিতুকে কেন হত্যা করা হলো? এর নেপথ্যের কারণ কী? আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর বিচার চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাবুলের বাসার কাজের মেয়ে ফাতেমা আমাদের বলেছে, মিতুকে সব সময় গালাগালি করত বাবুল। মানসিক নির্যাতন করত। আমার মেয়েটাকে না মেরে যদি আমাদের কাছে ফেরত দিত, তাহলে আমরা কিছু বলতাম না।’

মোশারফ হোসেন বলেন, ‘একটা বিষয় লক্ষ করে দেখুন, মিতু হত্যার ১৫ দিন আগে বাবুলের বাবা চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে এসেছেন। হত্যাকাণ্ডের ২-৩ দিন আগে বাবুলও ঢাকায় চলে এসেছে। যেন তাদের কেউ সন্দেহ করতে না পারে। এইটা ষড়যন্ত্রেরই অংশ। পুলিশ এগুলো ভ্যারিফাই করুক। তাহলেই মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’

এদিকে, শ্বশুরপক্ষ ও তদন্ত কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন বাবুল আক্তার। গত সোমবার বিকালে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার বক্তব্যের শিরোনাম ছিল, ‘সবাই বিচারক, আর আমি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই খুনি।’ওই স্ট্যাটাসে বাবুল নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। সেখানে তিনি শ্বশুর-শাশুড়ি সম্পর্কে বলেন, ‘মেয়ে হারিয়ে মা-বাবার কষ্ট প্রকাশের একটা মাধ্যম হয়তো এসব ভিত্তিহীন, অসংলগ্ন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাবার্তা, তাই আমি প্রত্যুত্তরে এতটুকু শব্দ করতেও নারাজ। কিন্তু এখন কথাগুলো পরিবারের সীমা পেরিয়ে লোকের ঘরে ঘরে বিনোদনের উৎস হিসেবে স্থান পেয়েছে।’

ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাবুল আক্তার আরও বলেন, ‘মিতু মারা যাওয়ার আট মাস পর তার মা-বাবা আর বোনের মনে পড়ল আমি মিতুকে অবহেলা করেছি, তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি দিনের পর দিন, প্রতিনিয়ত পরকীয়ার সম্পর্ক চালিয়ে গিয়েছি, মিতু আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল এবং মিতু নিতান্তই অপারগ হয়ে আমার সংসারে ছিল! আর এই আট মাসে একবারও মিতুর মায়ের মনে হয়নি যে, মিতুর মৃত্যুর আগে তার সঙ্গে আমার আচরণ বদলে গিয়েছিল। মিতু আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল, এটা ২/৩ মাস আগে জানলেও গত মাসেই চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলে এসেছেন তারা আমাকে সন্দেহ করেন না। আমার অবুঝ দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে নাকি তারা চুপ ছিলেন। তাহলে কী এখন আমার সন্তানরা সব বুঝতে শিখেছে, আট মাসেই সাবালক হয়ে গেছে? ছেলেমেয়ের প্রতি মায়া উবে গেছে?’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিন জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

 

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!