• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল, ই-মেইলে হয়রানিও যৌন অপরাধ


বাহাউদ্দিন আল ইমরান মে ৫, ২০১৭, ১১:৩৪ এএম
মোবাইল, ই-মেইলে হয়রানিও যৌন অপরাধ

সময় বদলের হাওয়ার সঙ্গে সমাজে বিস্তরভাবে প্রভাব ফেলছে যৌন অপরাধ। তাই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে যৌন অপরাধের সংজ্ঞা ও পরিধি। তাই মোবাইল, ই-মেইল, মুঠোবার্তা (এসএমএস), পর্নোগ্রাফি, টেলিফোনে বিড়ম্বনা বা যে কোনো ধরনের চিত্র প্রদর্শণ, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাটাও যৌন হয়রানির আওতায় পড়ে। আর এসব কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যৌন অপরাধ করেছে বলেও দোষি সাব্যস্ত হবেন এবং সাজা ভোগ করতে হবে।

যৌন হয়রানির বিষয়ে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞা দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শারীরিক ও মানসিক যেকোনও ধরনের নির্যাতন যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে মোবাইল, ই-মেইল, মুঠোবার্তা (এসএমএস), পর্নোগ্রাফি, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, যে কোনও ধরনের চিত্র, অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে। আর যেহেতু শুধু কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে না, তাই রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যেকোনও ধরনের অশালীন উক্তি, কটূক্তি করা কিংবা কারো দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো ইত্যাদি যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য হবে।’  

যৌন হয়রানির ভয়াবহতা রুপ নেয় ধর্ষণের মত অপরাধের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের আইনে ধর্ষণ সম্পর্কে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একই সাথে এ অপরাধ ও সাজার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। আইনটিতে বলা হয়েছে- ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সম্মতি বা অসম্মতির বাইরে যৌনসঙ্গম করাটাও ধর্ষণ হয়েছে বলে ধরা হবে।

কখন ধর্ষণ হয়েছে বলে ধরা হবে :
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ (Penal Code 1860) আইনের ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের পাঁচটি ক্ষেত্র রয়েছে। এই পাঁচটি ক্ষেত্রে কোনো নারীর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলে সে ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে বলে ধরে নেয়া হবে। সেগুলো হলো- ১. নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে; ২. নারীর সম্মতি না নিয়ে; ৩. নারীকে মৃত্যু ভয় বা জখমের ভয় দেখিয়ে জোড় পূর্বক সম্মতি আদায় করলে; ৪. কোনো নারীর স্বামী না হয়েও তার স্বামী দাবি করে ও স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে যৌনসঙ্গম করলে; ৫. চৌদ্দ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সম্মতি বা অসম্মতির বাইরে যৌনসঙ্গম করলে। 

অপরাধ :
যৌনসঙ্গমের জন্য যৌনাঙ্গ প্রবেশ করাই ধর্ষণ হয়েছে বলে ধরা হবে।

আইনের ব্যতিক্রম :
কোনো পুরুষ নিজ স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসঙ্গমকে ধর্ষণ বলে ধরা হবে, যদি তার স্ত্রীর বয়স ১৩ বছরের কম হয়।

শাস্তি :
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৮৬০ আইনের ৩৭৬ ধারায় বলা হয়েছে- ‘যদি কোনো ব্যক্তি ধর্ষণের অপরাধ করে তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা দশ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।’

দণ্ডবিধি অনুসারে ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ যা আমলযোগ্য কিন্তু জামিনযোগ্য নয়। এমনকি এটি মীমাংসারযোগ্যও নয়। তাই এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের গুটিয়ে না রেখে সবাইকে প্রয়োজনীয় আইনী পদক্ষেপ নিতে হবে।

দণ্ডবিধি ছাড়াও ২০০০ সালের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’-এর ২০০৩ সালে সংশোধনী আইনের ১০ ধারায় বলা হয়েছে- ‘যদি কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা নারী বা শিশুর যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন, তাহলে তার অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যূন তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড হবে এবং পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।’

লেখক : আইনজীবী

Wordbridge School
Link copied!