• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনার চরে গমের বাম্পার ফলন


মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ, সিরাজগঞ্জ মার্চ ৩১, ২০১৭, ০১:১৬ পিএম
যমুনার চরে গমের বাম্পার ফলন

সিরাজগঞ্জ: জেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলগুলোতে আমন ধান, সরিষা ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের পর এবার গমের বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক। চরাঞ্চলে নারী-পুরুষ এখন গমকাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আশাতীত ফলন হওয়ায় খুশি চরাঞ্চলের কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর চরে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। নদী ভাঙা তিন সহস্রাধিক মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে গম চাষ করে। চলতি মৌসুমে যমুনা নদীর চরে বৃহদাকারে হয়েছে গমের চাষ। লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও দ্বিগুন জমিতে গমের চাষ হয়েছে এবার। সঞ্চয় হয়েছে অদম্য শক্তি ও সাহস। গম চাষ করে তাদের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। বর্ষা মৌসুমে রাক্ষুসী নদী বসত ভিটা কেড়ে নিলেও এখানকার উৎপাদিত ফসল তাদের শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। চরের যেদিকে তাকানো যায় শুধু ফসল আর ফসল। নানা ধরনের ফসল চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। একারণে তারা মুক্তি পেয়েছে ক্ষুধা ও দারিদ্র থেকে।

অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে চরাঞ্চলের জমিতে গম বীজ বপন করা হয়। ফাল্গুনের শেষে ও চৈত্র মাসের প্রথম দিকে কাটা মাড়াই শুরু হয়। গমের চারা রোপনের পর খুব একটা বেশী সেচ দিতে হয় না। জমি চাষের সময় মাটির নিচে প্রয়োজন মোতাবেক জৈব্য সার ও চারা বড় হওয়ার কিছুদিন পরেই মাটির উপরে অংশে সামান্য ইউরিয়া সার প্রয়োগে ভাল ফলন পাওয়া যায়। ফলে গম চাষে খরচ হয় কম লাভবান হন কৃষক-কৃষাণীরা।

জানা যায়, নদীপাড়ের মানুষের আর্শিবাদও যমুনা। যমুনা যেমন প্রতি বছর ঘর-বাড়ি গ্রাস করছে তেমনি পলি জমিয়ে জেগে ওঠা চরে সোনার ফসল ফলাতেও সমান ভুমিকা রাখছে। তাই তো প্রতিবছর বর্ষা মৌসুষ শেষে যমুনা আর্শিবাদ হয়ে দেখা দেয় নদী পাড়ের মানুষের জীবনে। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। যমুনা নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর ফলে চরের পরিধি দিনদিন বেড়েই চলেছে। শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টের উত্তর ও দক্ষিন পাশে বিশাল আকারে চর জেগে উঠেছে। এছাড়া যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর চরাঞ্চলে এ বছর ব্যাপক হারে গম চাষ করেছেন কৃষকরা।

উপযুক্ত প্রশিক্ষন এবং পুঁজি পেলে গম চাষের পরিধি আরও বিস্তৃতি লাভ করবে বলে কৃষকদের দাবি। চলতি বছর নদী পাড়ের কৃষকরা ব্যাপক হারে গমের আবাদ করেছেন। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা লোকসান পোষাতে মৌসুমের শুরুতেই আটঘাট বেঁধে চরের জমিতে নিরলস ভাবে শ্রম ব্যয় করেন। কৃষকের ঘামে আর শ্রমে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে গম ঘরে তুলতে শুরু করেছে কৃষকরা। কৃষকের ঘরে ঘরে পুরোদমে চলছে গম বাজারজাত করণের কাজ। গম চাষে অভাবনীয় সাফল্যের কারণে খুশির ঝিলিক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কৃষাণ-কৃষানীর চোখে মুখে।

পাশাপাশি শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্টের উত্তর পাশে বাঁধের কাজ শেষ হলে এখানে আরো বিশাল বিশাল চর জেগে উঠবে বলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে। এই বাঁধের ফলে শহর রক্ষার পাশাপাশি নদীতে বিলীন হওয়া চরগুলো আবার জেগে উঠতে শুরু করেছে। আর এসব চরে বাদাম, কালাই, গম, ধানসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জর সদর উপজেলার জিয়া মোড় এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম, খায়রুল আলম, রহিজ উদ্দিন জানান, গত ৭ থেকে ৮ বছর আগে যমুনা নদীর তার বাড়ি ঘর গ্রাস করেছে। নদী তাকে সর্বশান্ত করলেও গত ৫ বছর ধরে ঐ স্থানে চর জেগে উঠায় সেখানে তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন।

কাওয়াকোলা চরের কৃষক আবুল হোসেন ও বাবলু হোসেন জানান, বর্ষা মৌসুমে চরের জমিতে পানিতে ডুবে থাকে। তখন আমাদের অলস বলে থাকতে হয়। চর থেকে পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে এখানকার কৃষকরা গমের আবাদ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে গম ঘরে তুলতে শুরু করেছে কৃষকরা। ভালো দাম পাওয়া গেলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।

কাওয়াকোলা চরের নৌকার মাঝি আব্দুল গনি মুন্সী জানান, চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। চরাঞ্চলের জমিতে ধান, টমেটো, গম, পাট, ডাল, সবজি, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, তিলসহ নানা জাতের ফসল ফলিয়ে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে অনেক কৃষক-কৃষাণীর ঘরে শান্তি এসেছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী জানান, এ বছর যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন চর অঞ্চলে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর চরেই সবচেয়ে বেশি গম চাষ হয়ে থাকে। এখানে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয়না। পলি পড়া চরের জমিতে গম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্ষা মৌসুমে চরগুলোতে পানিতে ডুবে থাকে। পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে চাষিরা নানান ধরনের ফসলের আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ডুবে যাওয়া চরের জমিতে পলি পড়ায় ক্ষেতে সারের পরিমান কম লাগে। এজন্য যমুনার চরে গম চাষে বেশি খরচ হয়না। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!