• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোজার ‘কাযা’ কখন কিভাবে


কাদির মোহাম্মদ জুন ১২, ২০১৬, ০৬:৪১ পিএম
রোজার ‘কাযা’ কখন কিভাবে

মাহে রমজানের ৫ম দিন আজ রোববার (১২ জুন)। সে সঙ্গে বিদায় নিল রহমতের ৪র্থ দিন। রহমতের এই ৫ম দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ  রোজা রেখে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর প্রিয় হাবীব (সা.)এর সন্তুষ্টির্জন করার আরাধনা করছেন।

আমরা অনেকেই রমজান মাস আসলে গতানুগতিক রোজা রাখি, কিন্তু এর হুকুম-আহকাম তথা শরয়ী বিধানাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ। এর পবিত্রতা সম্পর্কেও সচেতন না। কখন রোজা রাখা ফরজ, রমজানে কোন অবস্থায় রোজা কাযা হবে এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। একজন রোজাদারের উচিত রমজানের সব বিষয়ে জানা।

তাই আজকে রমজানের রোজার ‘কাযা’ কখন কিভাবে আদায় করবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ইসলামী শরীয়া বিধান মতে বিভিন্ন অপারগতা কিংবা অজুহাতে (ওজর) রমজানের রোজা কাযা করা যাবে। তবে সেই কাযা রোজা পরবর্তীতে আদায় করে নিতে হবে। না হলে ফরজ আমল ত্যাগের গুনাহগার হবেন।

যেসব ওজর-অপারগতার কারণে রোজা কাযা করার বিধান রয়েছে মনে রাখতে হবে, সে সব রোজা মাফ নয়। অপারগতা দূর হয়ে যাওয়ার পর সেটার কাযা আদায় করা ফরজ। অবশ্যই এক রমজানের রোজার কাযা পরবর্তী রমজানের আগেই রেখে কাযা পুরণ করতে হবে।

তবে এই কাযা রোজা আদায়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ফরজ নয়। ধারাবাহিকতা ছাড়াই আদায় করা যাবে।  

ইসলামী বিধান অনুযায়ী যেসব ওজর অপারগতায় রোজা কাযা করা যাবে। তারমধ্যে সফরকালে, গর্ভকালীন সময়ে, সন্তানকে স্তন দুধ পান করানোর সময়কালে, রোগাক্রান্ত হলে, বার্ধক্য সময়ে, প্রাণ নাশের ভয়, জোর জরবদস্তি, পাগল হওয়া যাওয়া ও জিহাদের সময়ে।

সফরকালে ইচ্ছা হলে রোজা রাখা না রাখা (রোজা না রাখা মানে কাযা করা) সম্পর্কে রাসূলে পাকের হাদিস রয়েছে। উম্মুল মুমেনিন সৈয়্যিদাতুনা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবি হযরত হামযা ইবনে আমর আসলামী (রাদি.) বেশি করে রোজা রাখতেন। তিনি (হামযা) প্রিয় হাবিব (সা.) কে আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি কি সফরে রোজা রাখবো? তখন রাসূল (সা.) উত্তর দিলেন, ইচ্ছা হলে রাখো আর ইচ্ছা না হলে রেখো না।      

(সহিহ বুখারী, হাদিস-১৯৪৩)

জেহাদের সময়ে রোজা না রাখা (কাযা করা) সম্পর্কে হাদিস রয়েছে।

সাহাবি সৈয়্যদুনা হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ১৬ রমজান আমরা প্রিয় নবী (সা.) এর সম্পর্কে জেহাদে গেলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ রোজা রেখেছিলেন, আর কেউ কেউ রাখেননি। তখন রোজাদাররা যারা রোজা রাখেননি তাদের উপর (রোজা না রাখার জন্য) দোষারোপ করেননি। যারা রাখেননি তারাও রোজাদারদের উপর দোষারোপ করেননি। একে অপরের বিরোধিতা করেননি। (মুসলিম, হাদিস-১১১৬) উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, জেহাদে গেলে রোজা না রাখার বিধান রয়েছে। তবে এই রোজা কাযা হিসেবে গণ্য হবে এবং তা পরে অবশ্যই পালন করে দিতে হবে।

এভাবে স্তন্যদাত্রী ও গর্ভবর্তী মহিলাদের রোজা কাযা করার বিধান রয়েছে। এ সম্পর্কে তিরমিযী শরীফের একটি হাদিস উল্লেখ্য। সাহাবি সৈয়্যদুনা হযরত আনাস বিন মালিক কাবী (রাদি.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ পাক মুসাফির থেকে অর্ধেক নামাজ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ সফরকালে দু’ রাকাত করে দিয়েছেন)। আর মুসাফির, স্তন্যদাত্রী ও গর্ভবর্তীর রোজা ক্ষমা করে দিয়েছেন। অর্থ্যাৎ তখন তাদের জন্য রোজা না রাখা (কাযা করার) অনুমতি দিয়েছেন। পরবর্তীতে সে ওই পরিমাণ রোজা কাযা আদায় করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস-৭১৫)

গর্ভবর্তী কিংবা স্তনের দুধ পান করায় এমন নারী, নিজের কিংবা শিশুর প্রাণ নাশের সম্ভাবনা থাকে, তবে রোজা রাখবে না। যদি মা গর্ভবর্তী হোক কিংবা দুধ পানকারিনী হোক। (তবে তাকে পরে রোজার কাযা আদায় করে দিতে হবে।)  (দুররে মুখতার ও রুদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড,  ৪০৩ পৃষ্ঠা।)

ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, সফরের দুরত্ব হচ্ছে সাতান্ন মাইল তিন ফরলঙ্গ মানে প্রায় ৯২ কিলোমিটার দূরত্ব। যে কেউ এতটুকু দূরত্ব সফর করার উদ্দেশ্যে নিজের বাসাবাড়ি থেকে দূরে যায় শরীয়তের দৃষ্টিতে সেই ‘মুসাফির’। মূলত তার জন্য রোজা কাযা করার অনুমতি রয়েছে।

যদি কাউকে রোজা ভাঙ্গতে বাধ্য করা হয়। প্রাণ নাশের হুমকি তথা ভয় ভীতি দেখানো হলে তাহলে সে ইচ্ছা করলে রোজা ভাঙ্গতে পারবে। কিন্তু ধৈর্য্য ধারণ করলে সাওয়া হবে। (তবে তাকে পরে রোজার কাযা আদায় করে দিতে হবে।) (রুদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড,  ৪০২ পৃষ্ঠা।)

সাপ দংশন করেছে, আর প্রাণ বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে এমনি অবস্থায় রোজা ভাঙ্গতে পারবে। (তবে তাকে পরে রোজার কাযা আদায় করে দিতে হবে।) (রুদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড ৪০২ পৃষ্ঠা।)

যেসব রোগীর রোগ বেড়ে যাওয়ার কিংবা কোনো সুস্থ্যলোকের রোগী হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে তার রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। (তবে তাকে পরে রোজার কাযা আদায় করে দিতে হবে।) (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড ৪০৩ পৃষ্ঠা।)

বয়োবৃদ্ধ লোক যার বয়স এতটাই বেশি রোজা রাখতে সক্ষম নন, বরং দিন দিন দূর্বল হতে চলেছেন এমন বয়োবৃদ্ধ লোকের জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। (অর্থাৎ এত বেশি অক্ষম বয়সের লোক যিনি এখন রোজা রাখতে অক্ষম সামনেও রোজা রাখতে পারবেন না)

তাকে রোজার কাযা হিসেবে প্রতিটি রোজার পরিবর্তে এক সদকায়ে ফিতর পরিমাণ মিসকিনকে দিয়ে দিতে হবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খন্ড ৪০৩ পৃষ্ঠা।)

তবে কোনো অক্ষম ব্যক্তি এখন রোজা রাখতে পারছেন না, কিন্তু ফিদিয়া দেওয়ার পর তিনি যদি শারিরিকভাবে সক্ষম হয়ে যান তাহলে তাকে অবশ্যই রমজানের রোজার কাযা দিতে হবে। আর ওই ফিদিয়া, সদকা নফল সদকা হিসেবে গণ্য হবে। (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খন্ড ২০৭ পৃষ্ঠা।)

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আসুন, আমরা শরীয়তে বিধান মতে রোজার ফরজ, কাযাসমুহ জেনে সঠিকভাবে রোজা রাখি, সিয়াম সাধণা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথানিয়মে সিয়াম সাধণার তওফিক দিন.. আমিন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!