• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘শিক্ষার আলো বঞ্চিত কুমিল্লার চার শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশু’


বিল্লাল হোসেন রাজু ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭, ০২:২৬ পিএম
‘শিক্ষার  আলো বঞ্চিত কুমিল্লার চার শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশু’

কুমিল্লা : সরকার প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাবলম্বী করতে নিয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। এসব শিশুদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সুযোগ সুবিধা। তাছাড়া ইতিমধ্যে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে প্রকল্প। কিন্তু কুমিল্লার চালচিত্র ভিন্ন। ১৬টি উপজেলায় রয়েছে প্রায় তিন সহস্রাধিক প্রতিবন্ধী শিশু। তারা অধিকাংশই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক শিশু কাগজে-কলমে ভর্তি থাকলেও নানান প্রতিকূলতায় তারা স্কুলের শিক্ষা থেকে রয়েছে অনেক দূরে।

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ৩ হাজার ১শ ২৮জন। এর মধ্যে বালিকা ১ হাজার ৬শ ২৭জন ও বালক ১হাজার ৫শ ১জন। এ বছরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার আওতায় এসেছে ২ হাজার ৬শ ৫০ জন। এদের মধ্যে বালিকা ১ হাজার ৪শ ৩জন এবং বালক  ১হাজার ২শ ৪৭জন। অন্যদিকে একেবারে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ৪শ ৭৮জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা প্রতিবন্ধী শিশু। আর যারা ভর্তি আছে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুধু হাজিরা খাতায় সীমাবদ্ধ। তাই এসব প্রতিবন্ধী শিশুর অসহায় অভিভাবকদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের আগ্রহ থাকলেও সরকারি সেবা পেতে পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা।

প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, জেলায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ২শ ৮৯জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ৩শ ৯৫জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৪শ ৪৭জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৪শ ৭৭জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৫শ ২৮জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৫শ ১৪জন। জেলা প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৬শ ৫০জন। এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী জেলায় মোট প্রতিবন্ধী শিশু আছে ৩ হাজার ১শ ২৮জন। ভর্তির বাইরে আছে ৪শ ৭৮জন প্রতিবন্ধী শিশু।

প্রতিবন্ধী শিশুর সুনির্দিষ্ট সংখ্যার কোন তথ্য নেই জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর, জেলা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন ও  জেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ সহ কোন এনজিওতে। ফলে তথ্য পেতে পোহাতে হয়েছে বিড়ম্বনা। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় শিক্ষা বঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা প্রায় সহ¯্রাধিক। কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে কাজ করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।

ইচ্ছা থাকা সত্বেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের অবহেলা-গাফিলতি, সঠিক তদারকির অভাব ও নেতিবাচক মানসিকতার কারণেই এমনটি ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরো বলছেন, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে অবজ্ঞার চোখে দেখছে। ভর্তি হতেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও এ জেলার প্রতিবন্ধী শিশুরা দেশের সম্পদ না হয়ে হচ্ছে বোঝা।

একজন অভিভাবক ক্ষোভ নিয়ে বলেন, কুমিল্লায় এতো সংখ্যক প্রতিবন্ধী শিশু। কিন্তু এসব শিশুর জন্য জেলায় মাত্র তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যা কিনা এতো সংখ্যক শিশুর জন্য যথেষ্ট নয়। তাছাড়া এ তিনটি প্রতিষ্ঠানে সব ধরণের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুরা ভর্তি হতে পারে না। এতে রয়েছে নির্দিষ্ট ভর্তি আসন। তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, সব প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে কুমিল্লায় আধুনিক একটি প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জরুরী।  সেখানে  সব ধরণে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তি হতে পারবে। সাথে সাথে থাকবে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সব ধরনে স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার বঞ্চনার পাশাপাশি বাড়ছে শারীরিক নির্যাতন। এ নিয়ে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন হতাশ কণ্ঠে বলেন, প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের ঘটনা প্রায় শোনা যায়।  যা আমাদের কষ্ট দেয়। এ ধরণের ঘটনা হার মানায় মানবিকতাকেও। তাছাড়া অনেক পরিবারে প্রতিবন্ধী শিশুরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। তিনি আরো বলেন, এসব প্রতিবন্ধী শিশুদের সঠিক চর্চার মধ্যদিয়ে দেশের সম্পদ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব। সাথে সাথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে এসব শিশুরা।

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য কুমিল্লায় নেই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা। এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিডি প্যাথ হাসপাতালের ফিজিও থেরাপিষ্ট ফাতেমা আক্তার মনি বলেন, অনকে প্রতিবন্ধী রোগিকে ফিজিও থেরাপি দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে অকুপেশনাল থেরাপি ও স্পীচ এ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির  প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সে তুলনায় কুমিল্লায় এ সব সেবা পাওয়া সম্ভব না।

জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসিনা মোর্শেদ বলেন, কুমিল্লায় তিনটি প্রতিবন্ধী স্কুল ও একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে। তাছাড়া স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষায় যেন কোন প্রতিবন্ধী শিশু বাদ না পড়ে সে জন্য সমাজ সেবা কার্যালয় কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলায় মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা সনাক্ত করনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন বয়সের প্রায় দুই সহ¯্রাধিক প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে।  তিনি আরো বলেন, দাউদকান্দিতে ১শ আসনের প্রশিক্ষন কেন্দ্র থাকার পরেও সেখানে মাত্র ১৩জন ভর্তি হয়েছে। সরকারের আয়োজন থাকলেও মানুষের অসচেতনার কারণে প্রতিবন্ধী শিশুরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!