• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কার কাজে লুটপাট, স্বীকার করলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক অক্টোবর ১৯, ২০১৭, ০৮:৪৪ পিএম
সংস্কার কাজে লুটপাট, স্বীকার করলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী

ঢাকা: বন্যা পরবর্তী সংস্কার কাজে লুটপাট হয় তা এক বাক্যে স্বীকার করলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এই দুর্নীতিকে সায় দিয়ে তিনি বলেছেন, সংস্কার কজে লুটপাট হতে পারে, তবে হরিলুট হয় না।

বৃহস্পতিবার(১৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বন্যা-২০১৭: ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ও বন্যা–পরবর্তী ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক সংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ(সিপিডি)। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ কথা বলেন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বন্যার বিভিন্ন দিক গভীরভাবে পর্যালোচনা ও মাঠ পর্যায়ে গিতে তথ্য সংগ্রহ করেছে সিপিডির গবেষক টিম। বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি ও জাতীয় অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সিপিডি। সেই প্রতিবেদনের উপর আলোচনা ও বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন।

প্রতিবেদন তৈরি করেন সিপিডির গবেষক জাফর সাদিক ও ইশতিয়াক বারি। সংলাপে বন্যা দুর্গত এলাকা থেকেও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

বন্যার কারণে দেশের বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ও বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তথ্য তুলে ধরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও বাঁধ মেরামতে হরিলুট হতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারকে সাবধান হতে হবে। এসব সংস্কারকাজে সাংসদদের দূরে রাখতে হবে। স্থানীয় জনগণকে কাছে রাখতে হবে ও সম্পৃক্ত করতে হবে।

আইনুন নিশাতের এসব অভিযোগের জবাবে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘বন্যা–পরবর্তী সংস্কারকাজ নিয়ে লুটপাট হতে পারে, তবে হরিলুট হবে বলে আমি মনে করি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে কোনো দুর্নীতি হয় না—এমন কথা আমি বলব না। কিন্তু দুর্নীতির কারণে বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়েছে, এটা আমি মানতে রাজি না।’

দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কারণে বন্যা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মূলত বাংলাদেশের উজানে স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম বৃষ্টি হওয়ায় বন্যার পানি বাঁধ উপচে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। হাওরে বাঁধ উপচে পানি ঢোকার পাশাপাশি ৫০০টি স্থানে কৃষক বাঁধ কেটে দেয়ায় সেখান দিয়েও পানি ঢুকেছে।

আর দিনাজপুরে বাঁধের ওপরে একটি ফুলগাছ ছিল। সেটি ভেঙে গিয়ে ওই ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে বন্যা হয়েছে। দেশের অনেক এলাকায় ইঁদুর এসে বাঁধ ফুটো করে দেওয়ায় সেখান দিয়ে পানি ঢুকেছে বলে জানান মন্ত্রী।

সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু সমালোচনা করেন আইনুন নিশাতের। তিনি বলেন, সাংসদেরা জনপ্রতিনিধি। তারা এলাকার উন্নয়নের কাজে সব সময় সম্পৃক্ত থাকেন। বন্যা–পরবর্তী কাজে তাদের দূরে রাখা হবে কেন, তা আমি বুঝতে পারছি না।

সভাপতির চেয়ারে থাকা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ইঁদুরে বাঁধ কাটার কারণে, নাকি মেরামত ত্রুটির কারণে বাঁধ ভেঙে বন্যা হলো, তা ভেবে দেখা দরকার।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বিশেষ ফেলো এম আসাদুজ্জামান বলেন, দেশে বড় অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহ বেশি। কিন্তু তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায় না। বোরোর নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতি, আমনের সম্ভাব্য ক্ষতি এবং সরকারের ঝুলিতে না থাকা, এই সবকিছু মিলেই বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের বন্যায় প্রায় জিডিপির ০.৫ শতাংশ পরিমাণ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এটা ঠিক আমরা বিনিয়োগে যতোটা আগ্রহী, ততোটা সংস্কার কাজে মনোযোগী নই। ফলে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ক্ষতিগ্রস্থ হয় জাতীয় অর্থনীতি।

সংলাপে অংশ নিয়ে ও সিপিডির প্রতিবেদনের তথ্য দিয়ে আলোচকরা বলেন, বন্যার কারণে এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বছরের বন্যার আর্থিক ক্ষতি জিডিপির ০.৩৫ শতাংশ থেকে ০.৪৪ শতাংশ হতে পারে। বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তার একটি বড় কারণ দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে না পারা। তবে বন্যার কারণেই যে দ্রব্যমূল্যের এমন চিত্র, তা মেনে নেওয়া যায় না।

গবেষণা প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে, বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। আর যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার বড় অংশ এখনো বিতরণ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ সম্ভু বলেন, যদি বিতরণ করা না হয়ে থাকে, তবে সেটা রাষ্ট্রের ফান্ডেই থেকে গেছে। কেন বিতরণ করা হয়নি সেই প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।

সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সোনালীনিউজ/তালেব

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!